বিপর্যয়: ভেঙে পড়া মাঝেরহাট উড়ালপুল। ফাইল চিত্র
আগামী সপ্তাহেই রেলওয়ে সেফটি কমিশনার মাঝেরহাট সেতুর কারিগরি দিক খতিয়ে দেখতে আসতে পারেন বলে পূর্ব রেল সূত্রে খবর।
রেলওয়ে সেফটি কমিশনারের পরিদর্শনের পরে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র পাওয়া গেলেই সেতুর চূড়ান্ত পর্বের কাজ সম্পূর্ণ করার ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা থাকবে না বলে খবর। পূর্ব রেলের আঞ্চলিক সেফটি কমিশনারের অফিস কলকাতাতেই রয়েছে। অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের অধীন ওই দফতর যে কোনও প্রকল্প অনুমোদনের আগে নিরাপদে রেল চলাচলের যাবতীয় শর্ত রক্ষিত হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখে।
এত দিন রেলের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র না মেলাতেই সময়ে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করা যাচ্ছে না বলে রাজ্য সরকারের অভিযোগ ছিল। রাজ্যের তরফে বর্ধিত সময়সীমা অনুযায়ী আগামী মার্চের মধ্যে ওই সেতু সাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার সময়সীমা রাখা হয়েছে। রেলওয়ে সেফটি কমিশনার চলতি সপ্তাহে সেতুর কারিগরি দিক খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দিলে সেতুর কাজ শেষ করার ক্ষেত্রে জট অনেকটাই কাটবে। নকশা এবং অন্য প্রযুক্তিগত জটিলতা কাটানোর পাশাপাশি রেল এবং রাজ্যের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় বাড়াতে সম্প্রতি দু’তরফের প্রযুক্তিবিদ এবং আধিকারিকদের নিয়ে টাস্ক ফোর্স তৈরি হয়েছে। ওই বিশেষ কমিটিই মাঝেরহাট এবং টালা সেতুর কাজ যৌথ ভাবে দেখাশোনা করছে।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভেঙে পড়েছিল মাঝেরহাট সেতুর একাংশ। রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এক বছরের মধ্যে ওই সেতু নতুন করে তৈরি করা হবে। সেই সময়সীমা অনুযায়ী গত বছর অক্টোবরের মধ্যে সেতু চালু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময়সীমা একাধিকবার পিছিয়েছে। তার জন্য রেল এবং রাজ্য একে অপরকে অভিযুক্ত করেছে। এক সময় প্রাক্তন মুখ্যসচিব মলয় দে-কে রেল এবং পূর্ত দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের সেতুবন্ধন করতে হয়।
পূর্ত-কর্তাদের দাবি, এখন প্রকল্পের অনেকটা এগিয়ে গেলেও ‘কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি’ (সিআরএস) –র ছাড়পত্র না পেলে চূড়ান্ত পর্বের কাজ শুরু করা যাবে না। রেললাইনের উপরিভাগে থাকা ওই সেতুর অংশের কাজ করার জন্য ওই ছাড়পত্রের প্রয়োজন। ওই অংশটুকু বাদ দিয়ে বাকি অংশের জন্য সিআরএসের অনুমতি লাগবে না। ফলে সেই অংশের কাজ চালুই রয়েছে। রেলের সঙ্গে ছাড়পত্র নিয়ে বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই কথাবার্তা চালাচ্ছিল রাজ্য সরকার।
রেললাইনের উপরের অংশের সেতুর স্থায়িত্ব, সুরক্ষা এবং ভবিষ্যতের রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত একাধিক কারিগরি বিষয় রেল জানতে চায় বলে খবর। রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রয়োজনীয় নথি ইতিমধ্যেই রেলকে পাঠানো হয়েছে। তবে চূড়ান্ত অনুমতি প্রদানের আগে রাজ্য এবং রেলের আধিকারিকদের উপস্থিতিতে আগামী সপ্তাহে যাবতীয় পরিকল্পনা সরেজমিনে খতিয়ে দেখার কথা রেলওয়ে সেফটি কমিশনারের। তাঁর রিপোর্ট সন্তোষজনক হলেই রেলের উপরের অংশের নির্মাণে কোনও বাধা থাকবে না।
বুধবার মাঝেরহাট সেতুর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। প্রকল্পের অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমরা রেলের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। সিআরএস ছাড়পত্র যত দ্রুত পাওয়া যাবে, কাজ তত তাড়াতাড়ি শেষ করা যাবে।’’