ওলা-উবেরের মতো লাক্সারি ট্যাক্সির ‘সার্জ প্রাইসিং’-এর উপরে লাগাম টানার নির্দেশিকা দিয়েছে কেন্দ্র। সেই মতো এ রাজ্যেও তা চালু করার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা শুরু করল রাজ্য পরিবহণ দফতর।
অ্যাপ নির্ভর ট্যাক্সিতে দীর্ঘদিন ধরে ‘সার্জ প্রাইসিং’-সহ একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিলেন যাত্রীরা। বর্ষার রাতে কিংবা উৎসবের মরসুমে কয়েক গুণ ভাড়া বে়ড়ে যায় ওলা, উবের-সহ লাক্সারি ট্যাক্সির। কোথায় এর অভিযোগ জানাতে হবে, তা নিয়েও ছিল বিস্তর ধোঁয়াশা। কেন্দ্রের ট্যাক্সি-নির্দেশিকা মেনে এ বার এ ব্যাপারে কড়া হওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘কলকাতার রাস্তায় কোনও দুর্যোগ বা আপৎকালীন পরিস্থিতি তৈরি হলে তার সুযোগ নিয়ে অ্যাপ-নির্ভর ট্যাক্সি পরিষেবায় তিন-চার গুণ পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্য শর্ত চাপানোর পাশাপাশি এ নিয়েও আমরা ইতিমধ্যেই ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিলাম। কেন্দ্রের নির্দেশিকা এসে যাওয়ায় আমাদের কড়াকড়ি করতে সুবিধে হবে।’’
একটি মামলার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় ভূতল ও সড়ক পরিবহণ দফতরের কাছে জাতীয় ট্যাক্সি-নীতি তৈরির নির্দেশ পাঠায়। সেই নির্দেশ মতো ওই দফতর সমস্ত রাজ্যের কাছে নীতি গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় খসড়া পাঠিয়েছে। সেখানে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যেমন, প্যানিক বাটন এবং জিপিআরএস পরিষেবা ট্যাক্সিতে বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে অনলাইন ট্যাক্সির সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করবে সরকার। সর্বোচ্চ ভাড়া সর্বনিম্নের তিনগুণের বেশি হবে না। অর্থাৎ, সর্বনিম্ন ভাড়া ১০০ টাকা হলে সর্বোচ্চ ভাড়া ৩০০ টাকার বেশি করা যাবে না।
সাধারণত কেন্দ্র যে মোটর ভেহিক্যালস আইন প্রণয়ন করে, তা রাজ্যগুলি মানতে বাধ্য। কিন্তু সেখানেও কিছু বিষয় থাকে যেগুলি রাজ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। যেমন, গাড়ির কর বা জরিমানা আদায়। রাজ্য পরিবহণ কর্তারা জানাচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র কোনও আইন প্রণয়ন করেনি। শুধুমাত্র রাজ্যগুলিকে পরামর্শ দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে রাজ্যগুলিকে সার্জ প্রাইসিং-এর উপরে কড়াকড়ি করতেই হবে, এমনটা নয়। তবে করলে, তা তিনগুণের মধ্যে থাকাই বাঞ্ছনীয়।
যদিও কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নয় ওলা-উবেরের মতো সংস্থাগুলি। উবেরের এক কর্তার কথায়, ‘‘চাহিদা ও জোগানের উপরে ভিত্তি করেই সার্জ প্রাইসিং ঠিক হয়। সে ক্ষেত্রে ভাড়া যেমন বাড়ে, তেমন কমেও। কিন্তু এ রাজ্যে ট্যাক্সির ঢালাও পারমিট দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। ফলে ট্যাক্সি বাজারে যথেষ্ট নেই। চাহিদা বাড়লে তা মেটানোর মতো ট্যাক্সি মিলছে না। স্বভাবতই ভাড়া বাড়ছে। সার্জ প্রাইসিং বন্ধ করতে হলে সরকারের এই নীতিও বন্ধ করতে হবে।’’
২০১৬-র শুরুতে ওলা-উবেরের মতো সংস্থাগুলির উপরে বেশ কিছু শর্ত আরোপ করে এ রাজ্যের সরকার। কেন্দ্র যে নির্দেশিকা দিয়েছে, তার মধ্যে চালকের পরিচয়পত্র, প্রতিটি শহরে অ্যাপ-ক্যাবের আঞ্চলিক অফিস থাকা-সহ বেশ কিছু শর্ত রাজ্য ইতিমধ্যেই লাক্সারি ট্যাক্সি পরিষেবা সংস্থাগুলির উপরে আরোপ করেছে।
এ ছাড়াও অ্যাপ ক্যাবের পার্কিংয়ে যাতে সমস্যা না হয় সে দিকেও নীতি নির্ধারণের সময়ে দেখতে বলা হয়েছে। যে কোনও গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় ২০% জায়গা সংরক্ষিত করতে হবে ট্যাক্সির জন্য। লাক্সারি ট্যাক্সির পাশাপাশি হলুদ ট্যাক্সি যদি অ্যাপ ক্যাব হিসেবে পরিষেবা দিতে চায় কিংবা ব্যক্তিগত গাড়ি যদি ব্যবসার কাজে যুক্ত হতে চায় তাহলে পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে করতে হবে। ই-রিকশা ও ই-বাইক পরিষেবার জন্যও নির্দিষ্ট নীতি গ্রহণ করতে রাজ্যকে অনুরোধ করেছে কেন্দ্র।