হাওড়ায় বন্ধ থাকা মেট্রোর কাজ। সোমবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
ইস্ট-ওয়েস্ট প্রকল্প নতুন রুটে হলেও হকার, দোকানদারদের নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না বলে সোমবার আদালতে দাবি করল রাজ্য সরকার। তবে, হকার সমস্যা না হলেও, এখন প্রকল্পের নতুন গেরো আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই) ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অনুমতি। নতুন রুট নিয়ে তাদের চূড়ান্ত অনুমতি না মিললে ওই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ ফের অনিশ্চিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা।
ইস্ট-ওয়েস্ট প্রকল্পের অচলাবস্থা কাটাতে এ দিন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ওই মেট্রো প্রকল্প নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে হাইকোর্টের কনফারেন্স হলে ডেকেছিলেন। ওই মেট্রো নিয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছে প্রকল্পের ঠিকাদার সংস্থা। ১২ অগস্টের শুনানিতে কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল) আদালতে জানায়, নতুন রুট নিয়ে তাদের আপত্তি নেই। কিন্তু এএসআই ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছ থেকে রুটের ছাড়পত্র পেতে হবে।
প্রকল্পের নতুন রুটে আরও একটি ঐতিহ্যশালী বাড়ি রয়েছে বলে এ দিন জানায় এএসআই। তারা এ-ও জানায়, নতুন রুটের ব্যাপারে ‘ন্যাশনাল মনুমেন্ট অথরিটি’-র অনুমতি লাগবে। বিচারপতি দত্ত এ দিন এসআই-কে নির্দেশ দেন, তিনটি ঐতিহ্যশালী বাড়ি এবং মনুমেন্ট-এর পাশ দিয়ে মেট্রোর সুড়ঙ্গ নিয়ে যাওয়া যাবে কি না, সে ব্যাপারে খড়্গপুর আইআইটি-কে (ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি) দিয়ে মাটি ও কম্পনমাত্রা পরীক্ষা করিয়ে এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। সেই পরীক্ষার খরচ দেবে কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল)।
বিচারপতি দত্ত নির্দেশ দিয়েছেন, নতুন রুটে কেন্দ্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অনুমতি দেওয়া বা না দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে এক মাসের মধ্যে। এ দিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন কর্নেল বীরেন্দ্র কুমার। তিনি জানান, নতুন রুটের ডিটেল প্রোজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) নিয়ে কিছু সেনা অফিসার সমীক্ষা করবেন। তার রিপোর্ট দিল্লিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে পাঠিয়ে তাদের ছাড়পত্র পেতে হবে।
১২ অগস্টের শুনানিতে সিইএসসি আদালতে জানিয়েছিল, নতুন রুট হলে বিবাদী বাগ-সহ মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বজায় রাখতে বিস্তর অসুবিধা হবে। এ দিন সিইএসসি-র আইনজীবী সুবীর সান্যাল বিচারপতি দত্তকে জানান, যে সমস্যার আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা সংস্থা রাজ্য সরকারের মাধ্যমে মিটিয়ে নিয়েছে। তাই নতুন রুটে তাদেরও অসুবিধা নেই।
বিচারপতি দত্ত রাজ্যের পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেন, নতুন রুটের ক্ষেত্রে হকার ও যানবাহন চলাচলে সমস্যা হওয়ার কথা। এসএন ব্যানার্জি রোড, ওয়েলিংটন স্কোয়্যার বা হিন্দ সিনেমা হল এলাকায় ওই সমস্যা কী ভাবে মিটবে, তা তিনি জানতে চান পরিবহণ সচিবের কাছে। সচিব দাবি করেন, ডিপিআর তৈরির সময়ে দু’টি সমস্যারই সমাধান হয়ে গিয়েছে। ফলে হকার বা যান চলাচলে বাধা হবে না।
এর পরে বিচারপতি দত্ত কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল কৌশিক চন্দের কাছে জানতে চান, নতুন প্রকল্পের জন্য বাড়তি ৭৬৪ কোটি টাকা রেল বোর্ড মঞ্জুর কবে করবে। কৌশিকবাবু জানান, তা এ দিনই নিশ্চিত বলা যাবে না। কারণ, প্রথমে কেন্দ্রের অর্থ মন্ত্রক বাড়তি টাকা খরচ মঞ্জুর করার পরেই রেল বোর্ড তাদের অনুমতি দেবে। তা শুনে কেএমআরসিএল-এর এমডি এন কে গর্গ জানান, রেল বোর্ডের কর্তারা যে ইস্ট-ওয়েস্ট প্রকল্পটি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করছেন, তা তিনি জেনেছেন। তাঁর আশা, বাড়তি টাকা বোর্ড মঞ্জুর করবে। এরই ফাঁকে রাজ্যের পরিবহণ সচিব বিচারপতি দত্তকে কথা প্রসঙ্গে জানান, আগামী ২০ অগস্ট কলকাতায় আসছেন কেন্দ্রের রেলমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সচিবও আশা করেন, ওই বৈঠকেও প্রকল্পের বাড়তি খরচের প্রসঙ্গ উঠবে এবং সেখানে আশাব্যঞ্জক কিছু হবে। মামলার পরবর্তী শুনানি ছ’সপ্তাহ পরে।