ফাইল চিত্র।
একের পর এক চটকলে আগুন লাগছে। গত তিন মাসে অন্তত ১০ বার চটকলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে কোনও কোনও চটকলে একাধিক বার আগুন লেগেছে। শুক্রবার রাতেও টিটাগড়ের একটি চটকলে আগুন লাগে। স্বাভাবিক ভাবেই আগুন লাগার কারণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সব মহলেই। এমনিতেই চটকলগুলি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। শ্রমিকদের দাবিদাওয়া মেটানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ সর্বত্র। যে সমস্ত চটকলে আগুন লেগেছে, সেখানেও শ্রমিক অসন্তোষ তীব্র ছিল। তবে মিল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এর আগে আগুন লাগার জেরে টিটাগড়ের একটি চটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েন প্রায় তিন হাজার শ্রমিক। পরে সেই কারখানা চালু হলেও ফের আগুন লেগে তা বন্ধ হয়ে যায়। কাজ বন্ধ হওয়া মানে শ্রমিকদের রোজগারও বন্ধ হয়ে যাওয়া। শ্রমিকেরা যে দাবিতে আন্দোলন করছিলেন, তা-ও স্তিমিত হয়ে পড়ে।
শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ টিটাগড়ের কেলভিন জুটমিলের পাটের গুদামে আগুন লাগে। সেখানে কাঁচা পাট এবং পাটজাত পণ্য মজুত করা ছিল। ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। টিটাগড় থানা ও দমকলে খবর দেওয়া হয়। দমকলের একটি ইঞ্জিন এসে কাজ শুরু করলেও প্রথমে আগুন আয়ত্তে আনা যায়নি। পরে আরও তিনটি ইঞ্জিন এসে ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঘটনার সময়ে ওই চটকলে রাতের শিফটের কাজ চলছিল। আগুন লাগার খবরে শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দমকলের এক আধিকারিক বলেন, “চটকলের মধ্যে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা ঠিকঠাক ছিল না। কিছু দিন আগেও ওই চটকলে আগুন লেগেছিল। তাদের চিঠিও পাঠানো হয়েছে। কী ভাবে আগুন লাগল, তা বিস্তারিত তদন্ত ছাড়া বোঝা সম্ভব নয়।” যদিও চটকল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গত ৫ নভেম্বর ওই চটকলের পাটঘরেই আগুন লেগেছিল। দমকলের বেশ কয়েকটি ইঞ্জিন সারা রাত ধরে চেষ্টা করে সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছিল। তারও কিছু দিন পরে আগুন লাগে টিটাগড়েরই সানবিম চটকলে। সে বার দমকল মিল কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বললেও তাঁরা তা নেননি বলে অভিযোগ। ৯ জানুয়ারি ফের আগুন লাগে ওই চটকলে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছিল কাঁকিনাড়ার দু’টি চটকলেও।
কেলভিন এবং সানবিম চটকলে বার বার আগুন লাগার পিছনে অন্তর্ঘাত থাকতে পারে বলে অভিযোগ করছেন শ্রমিকেরা। এই চটকল দ্রুত চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। টিটাগড় পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান প্রশান্ত দাসও সেই অভিযোগ করেছেন। বার বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিস্মিত তিনিও। তিনি দাবি জানিয়েছেন, আগুনের পিছনে অন্তর্ঘাত আছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হোক। কারণ, আগুন লাগলে শ্রমিকেরা যেমন কর্মহীন হয়ে পড়েন, তেমনই তাঁদের প্রভিডেন্ট ফান্ড-গ্র্যাচুইটি এবং ইএসআই-এর টাকা জমা দেওয়ার দাবিও পিছনে চলে যায়। প্রশান্তবাবু বলেন, “বার বার শর্ট সার্কিট হয় কী করে। সেটাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।”
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে প্রায় ৭৫ হাজার শ্রমিক সরাসরি চটকলগুলির উপরে নির্ভরশীল। পাঁচটি চটকল বন্ধ থাকায় এমনিতেই কয়েক হাজার শ্রমিক কর্মহীন। বেশির ভাগ মিলেই স্থায়ী শ্রমিকের তুলনায় অস্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। তাঁদের মধ্যে বেতন-বৈষম্য নিয়ে আন্দোলন চলছে সর্বত্রই। আন্দোলন জোরদার হলেই আইন-শৃঙ্খলা এবং অসহযোগিতার দোহাই দিয়ে কারখানায় ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। দমকল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডের বিস্তারিত তদন্ত হচ্ছে।