SSKM

SSKM: জীবন-যুদ্ধে পাশে থাকার বার্তা দিল হাসপাতাল

আচমকাই মেরুদণ্ডে তীব্র যন্ত্রণা। অস্ত্রোপচার করতে হয়েছিল বাঁশদ্রোণীর রনি চৌধুরীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৪৬
Share:

উদ্যোগ: প্রতিবন্ধকতা জয়ের দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে অনুষ্ঠান। শুক্রবার, এসএসকেএম হাসপাতালে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

চলাফেরা হুইলচেয়ার-নির্ভর হলেও তাতে যেন জীবন আটকে না থাকে। শুক্রবার বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে সেই বার্তাই দিলেন তাঁরা। যাঁদের কেউ দুর্ঘটনার পরে ঠিক মতো হাঁটতে পারতেন না, কেউ আবার মেরুদণ্ডের চোটের জন্য এক সময়ে শয্যাশায়ী ছিলেন। সেরিব্রাল পলসি-তে আক্রান্ত শিশুরা এঁকে বুঝিয়ে দিল, জীবনের রং ফিকে হয়নি।

Advertisement

মানসিক শক্তিকে হাতিয়ার করে প্রতিবন্ধকতা জয়ের দৃষ্টান্ত সকলের সামনে তুলে ধরতে এ দিন এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল এসএসকেএম হাসপাতালের ফিজ়িক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন (পিএমআর) বিভাগ। সেরিব্রাল পলসি ও দুর্ঘটনায় চোট পাওয়া-সহ বিভিন্ন কারণে বিশেষ ভাবে সক্ষম প্রায় ৫০-৬০ জন সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁদের চিকিৎসা ও লড়াইয়ের বিভিন্ন দিক দেখানো হয় বড়পর্দায়। মেরুদণ্ডের আঘাত, স্ট্রোক, মস্তিষ্কের আঘাত এবং সেরিব্রাল পলসি-তে আক্রান্তদের নির্দিষ্ট বিভাগে ভাগ করে তৈরি তিনটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সূচনা করেন পিজি-র অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়।

তিনি বলেন, ‘‘জীবন-যুদ্ধে মানসিক শক্তিই আসল। যাঁরা সেই যুদ্ধ জয় করেছেন, তাঁরা আগামী দিনে অন্যদের মানসিক শক্তি জোগাতে সহযোগিতা করবেন। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমেই চলবে সেই কাজ।’’ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া ২০-২৫ জন বিশেষ ভাবে সক্ষমদের রাজ্য সরকারের রোজগার মেলায় নিয়ে গিয়ে নাম নথিভুক্ত করানোর ব্যবস্থাও করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কারণ, শুধু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কাটানো নয়, কত জনকে সামাজিক ও আর্থিক ভাবে পুনর্বাসন দেওয়া গেল, সেটাও দেখা কর্তব্য বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা। স্নায়ুরোগের চিকিৎসক বিমানকান্তি রায় বলেন, ‘‘স্ট্রোকের পরেও কিছু সমস্যা থেকে যায়। কিন্তু তার মানেই সব শেষ নয়। পরবর্তী জীবনে তিনি কী ভাবে চলবেন, তা-ও জানা জরুরি।’’ দুর্ঘটনা বা রোগের কারণে বিশেষ ভাবে সক্ষম রোগীদের হাসপাতাল থেকে ছুটির পরে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও যুক্ত করা হবে।

Advertisement

এ দিন ওঁদের মুখ থেকেই শোনা গেল জীবন-যুদ্ধের কথা। যেমন, ২০১৫ সালে শৌচাগারে পড়ে মাথায় আঘাত পান দন্ত চিকিৎসার দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া সৌমেন্দু রুদ্র। প্রায় এক বছর বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চলে। কার্যত শয্যাশায়ী ওই যুবক ফের পড়ে যাওয়ায় ফিমার বোন ভেঙে যায়। হাঁটাচলায় এখন কিছুটা অসুবিধা হলেও নিজের লড়াইয়ের কথা জানিয়ে সৌমেন্দু বলেন, ‘‘পিজি-তে চিকিৎসার পরে আবার নিজের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারছি। এখন আমি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএসের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া।’’

আচমকাই মেরুদণ্ডে তীব্র যন্ত্রণা। অস্ত্রোপচার করতে হয়েছিল বাঁশদ্রোণীর রনি চৌধুরীর। তার পরেই শরীরের নীচের অংশ অসাড় হয়ে যায়। পিজি-তে চিকিৎসার পরে রনি অনেকটাই সুস্থ। হুইলচেয়ারে বসে গিটারে সুর তোলার ফাঁকে বললেন, ‘‘এ বার ব্যবসা শুরু করব।’’ কী ভাবে আবার কর্মজীবনে ফিরেছেন, তা-ও জানালেন মাঝেরহাট সেতু ভেঙে গাড়ি-সহ নীচে পড়ে মেরুদণ্ডে চোট পাওয়া কলকাতা পুলিশের কর্মী অনুপম সাহু।

পিএমআরের বিভাগীয় প্রধান রাজেশ প্রামাণিক বললেন, ‘‘শারীরিক ভাবে অক্ষমদের অনেক সময়েই বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। ওঁদের এক ছাতার তলার আনা গেলে আগামী দিনে নিজেরাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে একে অপরের লড়াইয়ে পাশে থাকতে পারবেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অনেক সময়ে দেখা যায়, সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত শিশুদের স্কুলে ব্রাত্য রাখা হচ্ছে। এমন রোগে আক্রান্তেরা যদি একজোট থাকেন, তা হলে ওই শিশুর লড়াই যেমন সহজ হবে, তেমনই অনেক দূর পর্যন্ত সে এগোতে পারবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement