ফাইল ছবি
খুশি’ বা ‘নিশ্চিন্ত’ শব্দগুলো প্রাণে ধরে বলতে পারছেন না কেউই। তবু ‘মন্দের ভাল’ বলাই যায়।— বুধবার দুপুরে দেশে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের খবর আসা ইস্তক শহরের গড়পড়তা শ্রীলঙ্কান ছাত্রছাত্রীর প্রতিক্রিয়া মোটামুটি এমনই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের হস্টেলে সকাল থেকেই দেশের খবর জানতে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে চোখ রেখেছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্রী, সদ্য-স্নাতক মিনুপমা কারিওয়াসাম। শ্রীলঙ্কার একটি জাতীয় স্তরের সংবাদমাধ্যমের খবরে তিনি নিশ্চিত হন, পার্লামেন্টের ভোটাভুটিতে রনিল বিক্রমসিঙ্ঘের অভিজ্ঞতাই শেষকথা বলেছে।
সল্টলেকে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হোমিয়োপ্যাথি’র ক্যাম্পাসে বহির্বিভাগ বা হাসপাতালের কাজের মধ্যেও দ্বীপরাষ্ট্র নিয়ে হালকা গুঞ্জন। জনা ৩০ সিংহলি বা শ্রীলঙ্কান তামিল পড়ুয়ার অল্পবিস্তর ফিসফাস দেশের খবর নিয়ে। গত এপ্রিল থেকে শ্রীলঙ্কায় শুরু হওয়া প্রেসিডেন্ট-বিরোধী আন্দোলনে গলা মিলিয়ে ফেসবুকে সরব হয়েছিলেন কলকাতার এই ছাত্রছাত্রীরাও। এ দিন সন্ধ্যায় হস্টেলে ফিরে হোমিয়োপ্যাথির চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র চামুরু কাঞ্চনা বললেন, “শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে রনিল বিক্রমসিঙ্ঘের জয়টাই প্রত্যাশিত ছিল।” তবে তাঁর কথায়, “দেশের তরুণ সমাজের সঙ্গে আমরা বিদেশের বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীই এককাট্টা হয়ে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের বদল চেয়েছিলাম। কিন্তু কে যোগ্যতম প্রেসিডেন্ট, তা নিয়ে নানা জনের নানা মত। এটুকু বলতে পারি, আমরা সকলে যে পরিবর্তন চেয়েছিলাম, এটা তার শুরুর সঙ্কেত ধরা যায়!”
কিসের পরিবর্তন? চামুরুর কথায়, “দেশটা দুর্নীতি ও পরিবারতন্ত্রের চাপে ধুঁকতে ধুঁকতে ক্লান্ত। বদল বলতে এর থেকে মুক্তি। প্রতিবাদীদের আন্দোলন থামেনি। এখনও তাঁরা পার্লামেন্টের উপরে নানা চাপ তৈরি করে চলেছে।”
বিকেলে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে চলতেই খবর এল, দ্বীপরাষ্ট্রে প্রতিবাদীরা দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবি তুলেছেন। এ দিন দুপুরে নতুন প্রেসিডেন্ট ঠিক হওয়ার খবর পেয়ে দেশে কুরুনেগারা শহরে দিদিকে ফোন করেছিলেন চামুরু। শুনেছেন, নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও কোথাও উচ্ছ্বাসের ছিটেফোঁটা নেই। নানা সমস্যার জটে জীবনযুদ্ধে দেশের পরিস্থিতি থমথমে।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ধ্রুপদী ভারতীয় যন্ত্রসঙ্গীতের দুই ছাত্রী কে গীতামা হংসানি এবং নুয়ানি নবরত্ন এখন কলকাতা ছেড়ে কয়েক দিনের জন্য বারাণসীতে বেড়াতে গিয়েছেন। ফোনে গীতামা বললেন, “যা হয়েছে, তা তো কিছু করার নেই! তবে দেশে নতুন কোনও শিক্ষিত কমবয়সি নেতার খুব দরকার!” যাদবপুরের ছাত্রী মিনুর মতে, “প্রেসিডেন্ট নিয়ে ভোটাভুটির এই ফলাফলে কিছু সুবিধার দিকও আছে। সত্তরোর্ধ্ব বিক্রমসিঙ্ঘে বিশ্ব রাজনীতির বিভিন্ন নেতারপরিচিত। সঙ্কটের মুহূর্তে এ টুকুও শ্রীলঙ্কার কাজে আসবে!” তবে প্রেসিডেন্ট পরিবর্তন হলেও দেশে-বিদেশে শ্রীলঙ্কানরা এখন তাকিয়ে আসল পরিবর্তনের দিকেই।