ডেঙ্গি অভিযানে ফের বিতর্কের কেন্দ্রে ব্লিচিং

আগে একাধিক বার পুরসভার তরফে বলা হয়েছিল, ডেঙ্গি অভিযানে ব্লিচিং পাউডারের কোনও ভূমিকাই নেই। ব্লিচিং পাউডার জীবাণুনাশক। কীটনাশক নয়। ফলে ডেঙ্গি অভিযানে ব্লিচিং-চুন ছড়ানোটা ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তারা।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৪৮
Share:

ডেঙ্গি অভিযানে ছড়ানো হচ্ছে ব্লিচিং পাউডার। রবিবার, বিজয়গড়ে।

ডেঙ্গি নিয়ে কাউন্সিলরদের ভূমিকায় ফের অস্বস্তিতে কলকাতা পুর প্রশাসন। এর আগে কাউন্সিলরদের অনেকেই মশা মারার অভিযানে নড়েচড়ে না বসায় কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে পুরসভাকে। এ বার মশা মারতে কোটি কোটি টাকার ব্লিচিং পাউডারের ‘অপব্যবহারে’ ফের বিতর্ক শুরু হল।

Advertisement

বিতর্কের সূত্রপাত রবিবার পুরসভার ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত বিজয়গড়ের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। এ দিন স্থানীয় কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বিশেষ দল ডেঙ্গি বিরোধী অভিযানে বেরোয়। এ পর্যন্ত সব কিছু ঠিকই ছিল। কিন্তু তার পরেই দেখা যায়, শুকনো রাস্তায় ব্লিচিং পাউডার-চুন ছড়ানো হচ্ছে। সঙ্গে ঘোষণা,—‘বিজয়গড়ের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে ১৭ নভেম্বর ব্যাপক গণ উদ্যোগ নিয়ে চুন, ব্লিচিং, স্প্রে করা হচ্ছে। ডেঙ্গি বিরোধী অভিযান চালানো হচ্ছে।’

এর পরেই শুরু হয় বিতর্ক। কারণ, আগে একাধিক বার পুরসভার তরফে বলা হয়েছিল, ডেঙ্গি অভিযানে ব্লিচিং পাউডারের কোনও ভূমিকাই নেই। ব্লিচিং পাউডার জীবাণুনাশক। কীটনাশক নয়। ফলে ডেঙ্গি অভিযানে ব্লিচিং-চুন ছড়ানোটা ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তারা।

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১৯-’২০ অর্থ বর্ষেই ব্যাগ পিছু ২৫ কেজি ওজনের মোট ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৩০৮টি ব্লিচিং পাউডারের ব্যাগ কিনেছে পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ দফতর। পুরসভার সাপ্লাই দফতরের মাধ্যমে তা কেনা হয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, ব্যাগ পিছু ৭১২ টাকা মূল্য হিসেবে এ জন্য ৮ কোটি ৬ লক্ষ ৭৫ হাজার ২৯৬ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু ব্লিচিং পাউডারের ‘অপব্যবহার’ নিয়ে পুর প্রশাসনও সতর্ক। তাই ওই পরিমাণ ব্লিচিং কেনার অনুমোদন পেতে যখন পুর অর্থ দফতরের কাছে অনুমতি চেয়েছিল সাপ্লাই দফতর, তখন অর্থ দফতর বলেছিল, ‘যদি আরও ব্লিচিং পাউডার লাগে, তা হলে সাপ্লাই দফতরকে পুর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। সঙ্গে কেন বাড়তি ব্লিচিং লাগছে তার যথার্থতা প্রমাণ করতে হবে এবং পূর্বের কেনা ব্লিচিং কী ভাবে খরচ হয়েছে, তা জানাতে হবে।’ যে মন্তব্যকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ মনে করছেন পুরকর্তারা। মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘ব্লিচিং পাউডার দিই এলাকা পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখতে। অন্য কোনও কারণে নয়।’’

পতঙ্গবিদ অমিয়কুমার হাটিও বলছেন, ‘‘মশার লার্ভা মারার ক্ষেত্রে ব্লিচিংয়ের ভূমিকাই নেই। তাতে জীবাণু নষ্ট হয়, মশার লার্ভা মরে না।’’ আর এক পতঙ্গবিদ গৌতম চন্দ্র বলছেন, ‘‘ব্লিচিং পাউডার সাধারণত ছড়ানো হয় নর্দমার আশপাশে। কিন্তু প্রথম কথা হল নর্দমা তো ডেঙ্গির জীবাণুবহনকারী এডিস ইজিপ্টাই জন্মায়ই না। ফলে ডেঙ্গি বিরোধী অভিযানের সঙ্গে এর সম্পর্কই নেই।’’

মশার লার্ভা ব্লিচিংয়ে মরে না, তা সত্ত্বেও কেন ব্লিচিং ছড়ালেন? ডেঙ্গি-বিরোধী অভিযান ঘোষণা করে সেখানে চুন, ব্লিচিং ছড়ানো কি জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করা নয়? এ প্রশ্নের উত্তরে মৃত্যুঞ্জয়বাবুর দাবি, ‘‘একদমই বিভ্রান্তিকর নয়। কারণ, ব্লিচিংয়ে মশার লার্ভা মরে না, তা জানি। তবু চুন-ব্লিচিং ছড়ালে স্থানীয় মানুষ খুশি থাকেন। সার্বিক পরিবেশও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়।’’

কিন্তু সে যুক্তি মানতে নারাজ ডেপুটি মেয়র তথা মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ। তিনি বলছেন, ‘‘ব্লিচিংয়ে যে মশার লার্ভা মরে না, তা আমরা প্রত্যেক কাউন্সিলরকে জানিয়েছি। কিন্তু তার পরেও ডেঙ্গি অভিযানে বেরিয়ে যাঁরা মানুষকে সন্তুষ্ট করার জন্য ব্লিচিং ছড়াচ্ছেন, তাঁরা শুধুমাত্র চোখে ধুলো দিচ্ছেন। জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement