উদ্যোগ: শিবনাথ দে-র সঙ্গে শুভজিৎ (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।
এই পৃথিবীর রং-রূপ দেখতে পাননি তাঁরা কখনও। কিন্তু বিশ্বকে আগামী প্রজন্মের কাছে বাসযোগ্য করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছেন সেই দৃষ্টিহীন মানুষেরাই। সমমনস্ক কিছু মানুষকে পাশে পেয়ে তাঁরাই মানুষের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন পরিবেশবান্ধব পেন।
বরাহনগরের শুভজিৎ সাহা ইন্টারনেট থেকেই জানতে পারেন ওই পেনের কথা। এর পরে সেটি তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন তিনিই। কাগজের তৈরি স্বল্প মূল্যের এই পেনের একেবারে শেষে থাকে একটি বীজ। শুভজিৎ জানালেন, যে কোনও ফুল বা ফলের একটি করে বীজ প্রতিটি পেনে দেওয়া থাকে। যিনি সেই পেন ব্যবহার করবেন, তাঁর কাছে আবেদন করা হয় পেন ব্যবহারের পরে তা ফেলে না দিয়ে পেনের শেষে রাখা বীজটি মাটিতে পুঁতে দিতে। যা থেকে জন্ম নেবে নতুন গাছ। শুভজিতের এই কলম তৈরির কথা জানতে পেরে তাঁর এই উদ্যোগকে ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে আসে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘বরাহনগর পেটালস’। এর আগে এই সংস্থা একযোগে কাজ করছিল ‘দ্য সোসাইটি ফর দ্য ওয়েলফেয়ার অফ দ্য ব্লাইন্ড’-এর সঙ্গে। এর পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যে সব দৃষ্টিহীন হকার ট্রেনে সামগ্রী বিক্রি করেন, তাঁদের হাতে দেওয়া হবে এই পরিবেশবান্ধব পেন। তাঁরাই তা পৌঁছে দেবেন সাধারণ মানুষের কাছে।
তেমনই এক হকার শিবনাথ দে। তিনি জানালেন, ট্রেনে ওই পেন বিক্রি করা শুরু করে দিয়েছেন। শিয়ালদহ দক্ষিণ এবং উত্তর শাখায় দৃষ্টিহীন হকারদের বেশ কয়েক জন হকারও এই পেন বিক্রি করেছেন ক্রেতাদের।
রামকৃষ্ণ মিশন ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমির প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং ‘দ্য সোসাইটি ফর দ্য ওয়েলফেয়ার অফ দ্য ব্লাইন্ড’-এর সম্পাদক বিশ্বজিৎ ঘোষ বললেন, ‘‘দৃষ্টিহীন মানুষেরা অনেকেই হকার। তাঁদের হাতে এই পেন তুলে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি।’’ তিনি জানান, দৃষ্টিহীনেরা অনেকে অন্য কাজ না করতে পেরে ভিক্ষা করেন। তাঁদের মাধ্যমেও এই পেন মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘এই পেন যেমন পরিবেশ রক্ষার বার্তা দিচ্ছে, তেমনই কিছু জনের জীবিকার সংস্থান হচ্ছে।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।