হামলা হলে এক নিরাপত্তারক্ষী যত দ্রুত সম্ভব মাটিতে বা মঞ্চে শুয়ে পড়বেন। তাঁর উপরে, হামলার লক্ষ্য যিনি, সেই ভিআইপি-কে ফেলবেন অন্য এক নিরাপত্তারক্ষী। তিনি তার পরে সটান শুয়ে পড়বেন ভিআইপি-র উপরে। ভিআইপি-কে বাঁচানোর এই কৌশলের নাম ‘স্যান্ডউইচ’। এই সময়ে পদমর্যাদা জনিত জড়তা ঝেড়ে ফেলতে হবে। ভিআইপি-কে রক্ষা করাই তখন মূল উদ্দেশ্য।
কিংবা ‘রিংরাউন্ড’। ভিআইপি-র পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে হাতে হাত ধরে একটি বলয় তৈরি করবেন রক্ষীরা। যাতে গুলি চলুক বা বিস্ফোরণ হোক, ভিআইপি-কে যেন কিছু ছুঁতে না পারে। প্রথম আঘাত নেবেন রক্ষীরা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ ভিআইপি-দের সুরক্ষায় নিযুক্ত রাজ্যের স্পেশ্যাল সিকিওরিটি ইউনিট (এসএসইউ)-র সদস্যেরা এখন এই সব কায়দা ঝালিয়ে নিচ্ছেন কলকাতা পুলিশের কম্যান্ডোদের কাছে। স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, এসএসইউ এই প্রথম কলকাতায় এমন প্রশিক্ষণ অন্য বাহিনীর কাছে নিচ্ছে। ভিআইপি সুরক্ষায় গঠিত বাহিনী যাতে দায়িত্ব পালনে আরও চোস্ত হয়ে ওঠে।
গত সোমবার, ৬ মার্চ হেস্টিংসে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে (পিটিএস) এসএসইউ-এর সদস্যদের তালিম দেওয়া শুরু করেছেন কলকাতা পুলিশের কম্যান্ডোরা। এসএসইউ-এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫০০। এক-একটি পর্যায়ে ১২ জন সদস্য দু’সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নেবেন এই কমান্ডোদের কাছে। আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র গ্লক পিস্তল ও এ কে-৪৭ থেকে গুলি ছুড়ে চাঁদমারি অনুশীলনও করবেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ব্যারাকপুরের কাছে জাফরপুরে এ কে-৪৭ থেকে গুলি ছোড়ার অনুশীলন হওয়ার কথা। আর গ্লক পিস্তল থেকে চাঁদমারি হবে হেস্টিংসের পিটিএসেই।
লালবাজার সূত্রের খবর, প্রথম পর্যায়ে যাঁরা সুরক্ষা-কৌশল ঝালিয়ে নিচ্ছেন, তাঁদের চার জন মহিলা। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানান, কলকাতা ও রাজ্য পুলিশে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে থেকে বাছাই করে এসএসইউ-তে নেওয়া হয়। তবে তার আগে তাঁদের যেতে হয় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও তালিমের মধ্যে দিয়ে। সে সবে উত্তীর্ণ হতে পারলে তবেই এসএসইউ-তে নিয়োগ। তার পরে নিয়মিত শারীরিক কসরতের মধ্যে থাকতে হয় এসএসইউ-এর রক্ষীদের। এক দিন অন্তর মাঠে অনুশীলন করা নিয়ম তাঁদের।
তার পরেও কেন কলকাতা পুলিশের কমান্ডোদের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে হচ্ছে? এসএসইউ-এর এক শীর্ষ অফিসার বলেন, ‘‘ডিউটির চাপে অনেক সময়ে সব রকম অনুশীলন সম্ভব হয় না। মরচে ধরে যায় শেখা বিদ্যেতেও। তাই নিজেদের চাঙ্গা রাখতে জানা জিনিসই ফের ঝালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’’
হামলাকারীদের আর ছড়িয়ে যেতে না দেওয়া, বোমা আছে কি না তা সাধারণ চোখেই বোঝা, খালি হাতে শত্রুর মোকাবিলা করতে ক্যারাটে-জুডো-কুংফুর সংমিশ্রণে তৈরি লড়াইয়ের বিশেষ কৌশল, দড়ি বেয়ে নামা-ওঠা— এ সবের তালিম নতুন ভাবে দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া, দম বাড়াতে করানো হচ্ছে ১০ কিলোমিটার দৌড়।