বরো-২

তৃণ এবং মূলের মাঝে হাইফেন, সঙ্গে কাঁটাও

ঘাসফুলে কাঁটা বিঁধছে এই বরোতেও। উত্তর কলকাতার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ফের প্রার্থী তৃণমূল বোর্ডের মেয়র পারিষদ, চিকিৎসক পার্থপ্রতিম হাজারি। যা না-পসন্দ স্থানীয় ব্লক যুব সভাপতি মোহনকুমার গুপ্ত ওরফে মনার। দলের ঘোষিত প্রার্থীকে বেগ দিতে তাই নেমে পড়েছেন নির্দলের তকমায়।

Advertisement

দেবাশিস দাস

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০১:৫৩
Share:

ঘাসফুলে কাঁটা বিঁধছে এই বরোতেও।

Advertisement

উত্তর কলকাতার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ফের প্রার্থী তৃণমূল বোর্ডের মেয়র পারিষদ, চিকিৎসক পার্থপ্রতিম হাজারি। যা না-পসন্দ স্থানীয় ব্লক যুব সভাপতি মোহনকুমার গুপ্ত ওরফে মনার। দলের ঘোষিত প্রার্থীকে বেগ দিতে তাই নেমে পড়েছেন নির্দলের তকমায়। তৃণমূল প্রার্থী পার্থবাবুর অভিযোগ, পরোক্ষে নাকি মনার মাথায় ‘হাত’ রয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক শশী পাঁজার। তা অস্বীকার করেছেন শশী।তৃণমূল বনাম বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের ভোটের লড়াই জমে গিয়েছে ক্যানাল ইস্ট রোড থেকে নিমতলার ২ নম্বর বরোর এই ওয়ার্ডে।

দলের দায়িত্বশীল পদে থেকেও নির্দল? মোহনবাবুর জবাব, “প্রায় ২০ হাজার ভোটারের জন্য সপ্তাহে পাঁচ দিন আধ ঘণ্টা করে সময় বরাদ্দ করেন কাউন্সিলর। নিজের পেশা নিয়েই তিনি ব্যস্ত। বাসিন্দাদের আবদারেই তাই প্রার্থী হয়েছি।” অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়ে পার্থবাবু বলছেন, “দলের শীর্ষস্থানীয়রা আমার পেশার কথা জানেন। আর এলাকাবাসীও জানেন, কী করেছি।” বরং তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “‘স্থানীয় দিদি’ অর্থাৎ এলাকার বিধায়ক মদত দিচ্ছেন মনাকে।” উত্তরে বিধায়ক শশী পাঁজা বলছেন, “দলীয় প্রার্থী ছাড়া কাউকে সমর্থনের প্রশ্নই নেই। দলের ব্লক যুব সভাপতির নির্দল হয়ে দাঁড়ানো দুর্ভাগ্যজনক। তাঁর বিষয়ে দলের উচ্চতর নেতৃত্বকে জানিয়েছি।” প্রসঙ্গত, এই লড়াইয়ে পার্থবাবুর পাশে রয়েছেন রাজ্যের আর এক মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে এবং সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সাধনবাবু বলেন, “দল যাঁকে প্রার্থী করেছে, তাঁর পক্ষে তো থাকতে হবেই। বিক্ষুব্ধদের মদত দেওয়া দলবিরোধী কাজ। কেউ তাঁকে মদত দিচ্ছে কি না, দলও তা খোঁজখবর নিচ্ছে।”

Advertisement

দলের পথে বিক্ষুব্ধের কাঁটা হওয়ার লড়াই ১৯ নম্বর ওয়ার্ডেও। তৃণমূল প্রার্থী শিখা সাহার বিরুদ্ধে এই ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী বাবলু সেনগুপ্ত। এক সময়ের কংগ্রেস নেতা বাবলু পরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। বাবলুবাবু যে এলাকায় জনপ্রিয়, তা মানছেন বাসিন্দারাও। ভোট ভাগাভাগির লড়াইয়ে তাই তাঁকে নিয়ে চিন্তা রয়েছে তৃণমূলের। ওই ওয়ার্ডে সিপিএমের প্রার্থী সুজাতা সাহা।

১০ নম্বর ওয়ার্ডে আবার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রার্থীর বাড়ি। তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন ঘোষ ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ফলে ১০ নম্বরে তাঁকে প্রার্থী করা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে এলাকায়। যদিও তা আদৌ বিরোধীদের পালে হাওয়া দেবে না বলেই মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এখানে প্রসূনবাবুর লড়াইবর্তমান কাউন্সিলর সিপিআইয়ের করুণা সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে।

২০ নম্বর ওয়ার্ডে এ বারও বাম প্রার্থী সুধাংশু শীল। এলাকার দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর সুধাংশুবাবু উত্তর কলকাতার সাংসদও ছিলেন। তাঁকে রুখতে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব ওই ওয়ার্ডে প্রার্থী করেছেন গত বার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে লড়া বিজয় উপাধ্যায়কে। তাতেই লড়াই জমজমাট বাম-দুর্গ বলে পরিচিত এই ওয়ার্ডে। বরোর পরিষেবা নিয়ে রাজনীতি রয়েছে, এই অভিযোগ তুলে সুধাংশুবাবু বলেন,“আহিরীটোলা সর্বজনীনের সামনে খোলা ভ্যাটটি সরাতে অনেক অনুরোধ করেছি। সুরাহা হয়নি কেবল রাজনীতির জন্য।” তা স্বীকার করে নিয়ে ২ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সাধন সাহা বলেন, “আগামী দিনে ওই জায়গায় কম্প্যাক্টর ভ্যাট বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।”

এই ওয়ার্ডে বাম বনাম তৃণমূলের যুদ্ধে জায়গা করে নিতে দৌড়চ্ছে বিজেপি-ও। পরিচিতি বাড়াতে প্রার্থী নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বছরখানেক ধরে কখনও নিজের খরচে বিরাট বিরাট জঞ্জালের ড্রাম কিনে এলাকায় বসিয়েছেন। কখনও গলিঘুঁজির নিরাপত্তা বাড়ানোর যুক্তিতে বসিয়েছেন কোল্যাপসিব্ল গেট। বাসিন্দারা বলছেন, কোনও উৎসব এলেই এলাকায় নিজের ছবি লাগানো ফ্লেক্স ঝুলিয়ে দেন ‘নারায়ণদা’। আর হেভিওয়েট ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী নারায়ণবাবু নিজে বলছেন, “আমি যা কাজ করেছি, তা কলকাতার কোনও কাউন্সিলর করেননি। জিতে আরও কাজ করতে চাই।”

১৯৮৫ সাল থেকে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে জিতে আসছেন সাধন সাহা। এ বার সংরক্ষণের কোপে ওয়ার্ড বদলেছে। সাধনবাবুকে লড়তে হচ্ছে ১৬ নম্বরে। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে লড়ছেন শুক্লা ভোড়। এই বরোর ১১ নম্বরে ফের লড়ছেন স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ। তিনটি ওয়ার্ডই তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি বলে মনে করছে এলাকাও।

রাজনীতির এই দড়ি টানাটানির মধ্যেই নানা অভিযোগ রয়েছে বরোর কয়েকটি পুর-পরিষেবা নিয়ে। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রণতি ভট্টাচার্যের সঙ্গে লড়ছেন সিপিআইয়ের সাগরিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (দাস)। ওয়ার্ডের বাসিন্দা কাশীনাথ বিশ্বাস জানান, গৌরীবাড়ি লেনের বস্তিতে এখনও মাটির ঘর রয়েছে। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা লালাবাগানের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দিলীপ গুপ্ত জানালেন, মানিকতলা থেকে কারবালা ট্যাঙ্ক পর্যন্ত ফুটপাথ লোহা ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গিয়েছে। কংগ্রেস প্রার্থী সুস্মিতা চক্রবর্তী বলেন, “এলাকায় সবচেয়ে প্রয়োজন মানিকতলার কাছে একটি উড়ালপুল।” ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে আবার বিজেপি প্রার্থী গণেশ ঘোষের অভিযোগ, “ওয়ার্ডে বস্তি এবং শিক্ষার উন্নয়নে ঘাটতি রয়েছে। রয়েছে রাস্তার সমস্যাও।”

অভিযোগ রয়েছে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডেও। বি কে পাল অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা শশিভূষণ সিংহ বলেন, “ভারী বৃষ্টিতে রাস্তার মুখে জল জমে। আছে বেআইনি পার্কিংয়ের সমস্যাও।” তা কার্যত অস্বীকার করে কাউন্সিলর শিখাদেবী বলেন, “বেআইনি পার্কিংয়ের সমস্যা নেই। জল জমার সমস্যা দূর করতে অনেক কাজও হয়েছে।” ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিটের বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী বিশু দেবের অভিযোগ অপরিচ্ছন্নতা নিয়ে। যদি কাউন্সিলর সিপিএমের বিশ্বনাথ দাস বলেন, “বিরোধী কাউন্সিলর হিসেবে সাধ্যমতো পরিষেবার দিতে চেষ্টা করেছি।”

বরো চেয়ারম্যান সাধন সাহা অবশ্য বলেন, ‘‘সব হয়েছে, এমনটা বলছি না। তবে গত পাঁচ বছরে পুর-পরিষেবার উন্নয়ন চোখে পড়ার মতোই হয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement