প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ও সদ্য নির্বাচিত কাউন্সিলর অমিত সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।
সময় দিচ্ছেন না বেহালা পূর্বের বিধায়ক— প্রচার চলাকালীন অনেকটা এই রকম অভিযোগই শোনা গিয়েছিল তৃণমূল প্রার্থীর বাবার মুখে। বুধবার বড়সড় জয় পাওয়ার পরে কিন্তু ১১৭ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন কাউন্সিলর পৌঁছে গেলেন বেহালা পূর্বের বিধায়কের বাড়ি। পা ছুঁলেন, কৃতজ্ঞতা জানালেন। আধ ঘণ্টার সাক্ষাৎপর্বে শোভন চট্টোপাধ্যায় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন বলে খবর।
১১৭ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে যিনি জিতলেন, সেই অমিত সিংহের বাবা তারক সিংহ নিজেও কাউন্সিলর তো বটেই, মেয়র পারিষদও। তারক সিংহের মেয়ে কৃষ্ণা সিংহও পাশের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। এ বার ছেলে অমিতও পুরসভায় ঢুকে পড়লেন।
বেহালা এলাকায় তারক সিংহ এখন কতটা প্রভাবশালী, তা নিয়ে এর পরে আর কারও সংশয় থাকার কথা নয়। কিন্তু তারকের উত্থান যে কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র তথা বেহালা পূর্বের বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরেই, তা স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সকলেরই জানা। তাই ১১৭ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে তারক-পুত্রের হয়ে শোভনকে প্রচারে নামতে না দেখে অনেকেই আশ্চর্য হয়েছিলেন। শোভনকে ডাকা সত্ত্বেও তিনি সময় দিতে চাইছেন না বলে যে মন্তব্য তারক সিংহ করেছিলেন, তা-ও অনেককেই চমকে দিয়েছিল।
আরও পড়ুন: কলকাতা পুরসভার উপনির্বাচনে তৃণমূলের জয়, দ্বিতীয় বিজেপি
ভোটের ফল বেরনোর পরে কিন্তু ছবিটা অনেকটাই পরিষ্কার। প্রচারে শোভনের অনুপস্থিতি বা শোভন সম্পর্কে তারক সিংহের মন্তব্য— কোনও পক্ষই এ দিন আর ওই সব প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেনি। মন্ত্রিত্ব এবং মেয়র পদ থেকে ইস্তফার পরে দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কারও কারও সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে। তাই ছেলের নির্বাচনী প্রচারে বেহালা পূর্বের বিধায়ককে সাদরে ডেকে আনা যে তারক সিংহের পক্ষে কিছুটা কঠিন হয়ে গিয়েছিল, সে শোভনও জানতেন।
স্থানীয় বিধায়ক প্রচারে সময় দিতে চাইছেন না বলে যে মন্তব্য তারক সিংহ করেছিলেন, তা শোভন ভাল ভাবে নেননি ঠিকই। কিন্তু তারকের বাধ্যবাধকতাও শোভনের অজানা ছিল না। ফলে বুধবার নির্বাচনের ফল বেরনোর পরে অমিত সিংহ যখন শোভনের গোলপার্কের বাড়িতে যান, তখন অসন্তোষের কোনও বাতাবরণ দেখা যায়নি বলেই তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: আইপিএস পরিচয় দিয়ে রাস্তায় তোলাবাজি, গ্রেফতার ভুয়ো পুলিশ কর্তা-সহ ৪
১১৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিপুল ভোটে জয়ের পরে অমিত সিংহ এ দিন সর্বাগ্রে অবশ্য গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে। অমিত বললেন, ‘‘সর্বাগ্রে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে আশীর্বাদ নিয়েছি। তিনি বলেছেন ভাল ভাবে কাছ করতে। তার পরে গিয়েছিলাম ববি আঙ্কলের কাছে। শেষে গিয়েছিলাম শোভন আঙ্কলের বাড়িতে।’’ অমিতের সঙ্গে ছিলেন তাঁর দিদি তথা কাউন্সিলর কৃষ্ণা সিংহ এবং পরিবারের আরও কয়েক জন সদস্য। শোভনের বাড়িতে অমিত-কৃষ্ণারা প্রায় আধ ঘণ্টা ছিলেন। সেই সাক্ষাৎ পর্বে শোভনকে কখনও হাসতে দেখা গিয়েছে। কখনও বা অভিমানী শোভনের চোখে দেখা গিয়েছে জল। তবে, তাঁর তরফ থেকে অমিত সব রকম সহযোগিতা পাবেন বলে শোভন আশ্বাস দিয়েছেন। খবর তৃণমূল সূত্রের।
(কলকাতা শহরের রোজকার ঘটনার বাছাই করাবাংলা খবরপড়তে চোখ রাখুন আমাদেরকলকাতাবিভাগে।)