Sovan Chatterjee

আমার জন্মদিনের কেকে বিষ মেশানোর চেষ্টা হয়েছিল: বিস্ফোরক শোভন

শুধু পাল্টা রত্নার বিরুদ্ধে প্রেমের অভিযোগ বা অন্য সম্পর্কের অভিযোগ তুলেই ক্ষান্ত হননি শোভন। এদিন তিনি আরও বিস্ফোরক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:৪৭
Share:

ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এ বার মুখ খুললেন শোভন চট্টোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।

মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফার পর যখন রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়, যখন তাঁর বন্ধু বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়, তখন পাল্টা মুখ খুললেন শোভন চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

বুধবার এবিপি আনন্দকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “রত্না আমাকে বলেছিল, বেশ করছি প্রেম করছি। যদি পছন্দ না হয় ডিভোর্স করে দাও।” এর পরেই শোভনবাবু অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক যুবকের নাম উল্লেখ করে বলেন, “রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারণে বাড়িতে সময় দিতে পারতাম না। জানতে পারিনি বাড়ির অন্দরে চোরাস্রোত বয়ে গিয়েছে।” শোভন আরও বলেন, ‘‘নির্বাচনের জন্য সম্পদের পরিমাণ ঘোষণা করতে গিয়ে দেখি, রত্না আমার অজান্তেই একটি কোম্পানি তৈরি করেছে। জিসিআর নামে একটি কোম্পানি। জিজ্ঞাসা করায় বলল গোপাল-চিকু-রত্না মিলে জিসিআর।”

শোভন এ দিন অভিযোগ করেন, “আমি জি়জ্ঞাসা করেছিলাম চিকু কে? তার উত্তরে জানলাম চিকু হল কোনও একজন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ওই কোম্পানির নাম করে রত্না বাজার থেকে বহু টাকা লোন করেছে। যার উত্তর দিতে ইডি সিবিআইয়ের সামনে হিমশিম খাচ্ছি।” তাঁর আরও দাবি, ‘‘খবর নিতে গিয়ে জানতে পারলাম ওই অভিজিতের আমার বাড়িতে অবাধ যাতায়াত। টেলিফোন-ট্রাভেলের ডকুমেন্ট থেকে আরও তথ্য জানতে পারি।’’ শোভনের দাবি, ওই সব আড়াল করতেই বৈশাখীকে সামনে রাখা হচ্ছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘প্রাসাদ-রাজকন্যা’ ছেড়ে কি সন্ন্যাসের পথে মন্ত্রী, নাকি ঘুঁটি সাজানো হচ্ছে অন্য দরবারে?​

শুধু পাল্টা রত্নার বিরুদ্ধে প্রেমের অভিযোগ বা অন্য সম্পর্কের অভিযোগ তুলেই ক্ষান্ত হননি শোভন। এ দিন তিনি আরও বিস্ফোরক। তিনি স্ত্রী রত্নার নাম না করে অভিযোগ তোলেন, “বৈশাখী এবং বৈশাখীর মেয়েকে আঘাত করার জন্য সুপারি কিলার ভাড়া করা হয়েছিল। জন্মদিনের কেকে বিষ মেশানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তার যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ আছে। কলকাতা পুলিশকে জানিয়েছি লিখিত ভাবে।”

মঙ্গলবার নবান্নে ইস্তাফা দেওয়ার পর এই প্রথম মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক সময়ের স্নেহের ‘কানন’। মেয়র পদে ইস্তফা প্রসঙ্গে তাঁর ছোট্ট জবাব, “একটু অপেক্ষা করুন। সব জানতে পারবেন। যে ভাবে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ বিষয়ে জানতে পেরেছেন, ঠিক সে ভাবেই জানতে পারবেন।” তাঁর দল ছাড়া এবং বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “এ সব আজগুবি কথার কী উত্তর দেব?” তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি কি বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করলেন? জবাবে শোভন বলেন, “ঠিক সময়ে জানাব। তখন পরিষ্কার হবে। দুধকে দুধ পানি কে পানি।”

আরও পড়ুন: মেয়র শোভন কি আজ ইস্তফা দেবেন? এর পর কে, নাম আসছে অনেক

তবে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে বলতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন তিনি। বলেন, “কে কী বলছে জানি না। এক বছর আগেও বলেছি। বৈশাখী শুভানুধ্যায়ীর মতো পাশে দাঁড়িয়েছে। বৈশাখী এবং তাঁর পরিবার পাশে দাঁড়িয়েছে। আইটি, ইডি, সিবিআইয়ের মুখোমুখি হওয়ার সময় বৈশাখীর সাহায্য চেয়েছি। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সময় বৈশাখীকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছি। বৈশাখী যদি গুছিয়ে না দিত তবে শোভন চট্টোপাধ্যায়কেই বিপদে পড়তে হত।”

শ্বশুর দুলাল দাসের বক্তব্য সম্পর্কে এ দিন তিনি বলেন, “বৈশাখীকে বান্ধবী বলে বিকৃত ধারণা দেওয়া হচ্ছে।” দুলাল সম্পর্কে সুর আরও এক ধাপ চড়িয়ে বলেন, “দুলালবাবুর কিস্যু ছিল না। মহেশতলার ইট-কাঠ জানে কে দুলালবাবুকে চেয়ারম্যান চেয়েছিল। রাজনৈতিক জগতের সবাই সে কথা জানে।” তিনি অভিযোগ করেন, দুলালবাবু ক্ষমতালোভী। তিনি বলেন, “আমি পদত্যাগ করেছি। তাই মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়েছি, এটা দুলালবাবু মনে করতে পারেন। কিন্তু আমি মনে করি আমি এমএলএ, মন্ত্রী বা কাউন্সিলর হয়ে জন্মাইনি।”

শোভনবাবু নিজের বুদ্ধিতে চলেন না। রত্নার করা এই অভিযোগের উত্তরে তাঁর সাফ জবাব, “আমি বাচ্চা ছেলে নই। তেত্রিশ বছর ধরে রাজনীতি করছি। আমি বাচ্চা নই যে, বৈশাখীকে পাঠালো আর আমাকে বুঝিয়ে সর্বনাশ করে দিল।”

তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা উঠতেই এ দিন অনেকটা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। তাঁর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার ৪০ বছরের সম্পর্ক। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এসেছি। কোনও দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথার দ্বিরুক্তি করিনি। শিরোধার্য করেছি সব কথা। বাবা মায়ের পর যাঁর কথা আমি বিশ্বাস করি, যাঁকে শ্রদ্ধা করি, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”

এ দিন শোভন বার বার দাবি করেন যে, তিনি কোনও অন্যায় করেননি, ভুল করেননি। বৈশাখী সম্পর্কে বলেন, “অহেতুক বৈশাখীকে যে ভাবে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তা নিন্দনীয়। শোভনবাবু কী রত্নার ডাকে ফিরে যাবেন? প্রশ্ন শুনেই ফের উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি প্রশ্ন করেন, “আমার ফিরে যাওয়ার কোনও জায়গা আছে? আমি আদালতে সমস্ত নথি দিয়েছি। শখ করে কেউ মেয়েকে ছেড়ে আসে না। খোঁজ নিয়ে দেখুন, কেঁচো খুড়তে গিয়ে কোন সাপ বেরিয়ে পড়বে।”

তাঁর দাবি, এই মুহূর্তে তিনি কোনও টেনশনে নেই। অনেক রিলাক্সড। তাঁর কথায়, “দুঃখ-যন্ত্রণা মন্ত্রিত্ব ছাড়ার জন্য নয়। আমার শুভানুধ্যায়ীকে আঘাতের চেষ্টা হচ্ছে, সেটা যন্ত্রনাদায়ক। তবে ক্ষমতার জন্য মানবিকতাকে ত্যাগ করতে পারব না। এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি পারব না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement