মিতা বিশ্বাস
নিজের নাম বলতে পারছেন না। ছেলেমেয়ে বা স্বামীর নামও নয়। বাড়ি কোথায়, পরিবারে কে কে রয়েছেন— সব প্রশ্নের উত্তরে শুধু একটাই কথা বলছেন, “দেবীপ্রসাদ হাইস্কুল।” ওই স্কুলের পাশেই আপনার বাড়ি? শূন্য দৃষ্টিতে বৃদ্ধার উত্তর, “ওই স্কুলেই আমি পড়তাম।”
নিখোঁজ এক বৃদ্ধাকে উদ্ধারের পরে তাঁর শৈশবের সেই স্কুলের সূত্র ধরেই তাঁকে বাড়ি ফেরাল পুলিশ। গুগল ঘেঁটে সেই স্কুলটি খুঁজে বার করে পশ্চিম বন্দর থানার পুলিশ। তার পরে স্থানীয় থানার মারফত তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
ঘটনাচক্রে, করোনার জেরে ১১ মাস বন্ধ থাকার পরে শুক্রবারই এ রাজ্যে স্কুল খুলেছে। সেই রাতেই ওই ঘটনা। বৃদ্ধাকে বাড়ি ফিরিয়ে পশ্চিম বন্দর থানার পুলিশ আধিকারিক সুব্রত পাণ্ডে বলেন, “উনি কিছুই বলতে পারছিলেন না। ভাগ্যিস স্কুলের নামটা মনে ছিল!”
সুব্রতবাবু জানান, শুক্রবার রাতে নাকা-তল্লাশি সেরে থানার বড়বাবুর সঙ্গে ফিরছিলেন তিনি। সেন্ট্রাল গার্ডেনরিচ রোডে বৃদ্ধাকে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরি করতে দেখেন তিনি। তাঁর কথায়, “রাতে ওই রাস্তা ফাঁকা থাকে। কোনও বিপদ ঘটেছে ভেবে আমরা গাড়ি থামাই। বৃদ্ধা প্রথমে কিছুই বলতে না পারায় তাঁকে এক জায়গায় বসিয়ে মহিলা পুলিশকর্মীদের ডাকা হয়। এর পরে বৃদ্ধাকে থানায় নিয়ে গিয়ে ওঁর সঙ্গে কথা বলা শুরু হয়।”
পুলিশ জানায়, বৃদ্ধা শুধু দেবীপ্রসাদ হাইস্কুলের নাম বলতে পেরেছিলেন। কিন্তু স্কুলটি কোথায় বলতে পারেননি।
তখন গুগল অ্যাপে স্কুলটি খোঁজার কথা সুব্রতবাবুরই মনে হয়। গুগল সার্চে ব্যারাকপুরে ওই নামের একটি স্কুলের ছবি দেখা যায়। সেই সূত্রে ব্যারাকপুর থানায় যোগাযোগ করে পশ্চিম বন্দর থানার পুলিশ জানতে পারে, মিতা বিশ্বাস নামে বছর পঁয়ষট্টির এক বৃদ্ধা চার দিন ধরে নিখোঁজ। তাঁর ছেলে সাগর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন।
আপনার নাম কি মিতা বিশ্বাস?
প্রশ্ন শুনে হেসে বৃদ্ধা পুলিশকে বলেন, “ওটাই বাবা-মার দেওয়া নাম!” এর পরে ব্যারাকপুর থানা থেকেই ফোন নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করা হয় মিতাদেবীর ছেলে সাগরের সঙ্গে। তিনি রাতটুকু বৃদ্ধাকে পশ্চিমবন্দর থানায় রাখার অনুরোধ জানান।
শনিবার সকালে ওই থানায় পৌঁছলে সাগরের কাছে মাকে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। সাগর জানান, ব্যারাকপুর কোর্টের কাছে তাঁদের বাড়ি। তাঁর এক দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আরও দুই বোন এবং মাকে নিয়ে সংসার অবিবাহিত সাগরের। টোটোচালক সাগর পুলিশকে জানান, নার্ভের অসুখ থাকায় বৃদ্ধা সব ভুলে যান। গত মঙ্গলবার দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি। এ ভাবে আগেও তিনি বেরিয়ে যেতেন। তাই প্রথমে কেউ সন্দেহ করেননি। কিন্তু দু’দিন ধরে বাড়ি না ফেরায় বৃহস্পতিবার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন সাগর। ব্যারাকপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, ওই কমিশনারেট এলাকার সব থানায় ছবি-সহ বৃদ্ধার নিখোঁজের খবর পাঠিয়েও তাঁর হদিস মেলেনি।
শনিবার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বাড়ি ফেরার ট্রেনে ওঠার মুখে সাগর বলেন, “১২ বছর আগে আমার বাবাও এ ভাবেই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। আজও তাঁর খোঁজ পাইনি। মাকে এ ভাবে ফিরে পাব ভাবতে পারিনি।” বৃদ্ধা বলেন, “বাড়ি নয়, আবার ছোটবেলার সেই স্কুলে ফিরে যেতে চাই। বাড়ির লোক তাড়াতাড়ি বিয়ে না দিয়ে দিলে ওই স্কুলেই এক দিন পড়াতাম।”