শিল্পী সোনু নিগম।
মঞ্চে তখন সবে গান শুরু করেছেন শিল্পী সোনু নিগম। সামনে দশ-পনেরো হাজার শ্রোতা। কিন্তু গান শুরু হতে না হতেই বিপত্তি। কারণ, মশার দল তখন রীতিমতো মঞ্চ কাঁপাচ্ছে। কিছু ক্ষণ দু’হাত দিয়ে মশা তাড়ানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি সোনুর। তখন শিল্পী বলে ওঠেন, ‘‘গান গাইব কী করে! মশা আর পোকামাকড় ঢুকে পড়ছে মুখে।’’ মঞ্চে একটি পাখাও ছিল। কিন্তু তাতেও পোকামাকড় আর মশাদের সামলানো যায়নি। অবস্থা বেগতিক দেখে শেষে উদ্যোক্তারা মঞ্চে আরও একটি পাখার ব্যবস্থা করেন।
বৃহস্পতিবার রাতে এই ঘটনা ঘটে সল্টলেকের বিএফ-সিএফ মাঠে আয়োজিত এক জলসায়। সল্টলেক থেকে শুরু করে বিধাননগর পুর এলাকার সর্বত্রই মশার দাপট খুব বেড়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। ইতিমধ্যেই মশাবাহিত রোগে পাঁচশোরও বেশি বাসিন্দা আক্রান্ত সেখানে। ফলে আতঙ্কও ছড়াচ্ছে। ওই জলসায় যাওয়া এক শ্রোতার বক্তব্য, ‘‘কয়েক দিন হল মশা খুব বেড়েছে। মশার ‘গান’ তো শিল্পীর গানকেও ছাপিয়ে যাচ্ছিল।’’
ওই অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা, স্থানীয় কাউন্সিলর তথা রাজারহাট-নিউ টাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘মশার জন্য সোনু নিগম সত্যিই সমস্যায় পড়েছিলেন। সুখবিন্দর সিংহেরও সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু তিনি কিছু বলেননি। গোটা সল্টলেক মশা আর জ্বরে ছেয়ে গিয়েছে। কেন মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, তা পুরসভাই বলতে পারবে।’’
সল্টলেকের খালপাড় সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকাই শুধু নয়, বিভিন্ন ব্লকে রাত গড়ালেই জানলা বন্ধ করে দিতে হচ্ছে বলে জানান বাসিন্দারা। পুরকর্তাদের সাফাই, পুজোর পরে বৃষ্টির জেরে মশা আরও বেড়েছে। অক্টোবরে মশাবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। পুরসভা সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছে। মশা নিয়ন্ত্রণের কাজে নিযুক্ত কর্মীদের নিয়ে শুক্রবার পুর ভবনে আরও এক দফা আলোচনা করা হয় বলে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। ওই কর্মীদের বলা হয়েছে, আরও বেশি করে মশার তেল ছড়াতে হবে এবং ঝোপঝাড় সাফাই করতে হবে।
বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, ঝোপঝাড় নিয়মিত সাফ করা হয় না। পুজোর ছুটিতেও পুরকর্মীদের সক্রিয়তা কম ছিল। পাশাপাশি, কেষ্টপুর খাল কিংবা ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলে জলের প্রবাহ কম। ফলে পুজোর পরে সমস্যা বেড়েছে। যদিও পুর প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, সম্প্রতি মশার প্রকোপ বাড়লেও সেগুলি এডিস ইজিপ্টাই নয় বলেই প্রাথমিক ভাবে অনুমান।
বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ প্রণয় রায় জানান, পুজোর মরসুমেও সক্রিয়তার কোনও অভাব ছিল না। কিন্তু গত কিছু দিন ধরে মশা বেড়েছে। মশা নিয়ন্ত্রণের কাজে আরও জোর দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।