পড়ুয়াদের সৃষ্টিশীলতাকে স্বীকৃতি সিমা-র

স্কুলের বচ্ছরকার পরীক্ষা শেষে তখন ছুটি শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ভালবাসার কাজ করার সুযোগ পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে কসুর করেনি সদ্য এগারো ক্লাস পেরোনো প্রণামিকা, শ্রেয়সী বা তৃণারা। তাদের সঙ্গে যোগ দিল দশম শ্রেণির পডুয়ারাও।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৫ ০০:০১
Share:

বিচারকদের সঙ্গে পুরস্কৃত স্কুলপড়ুয়ারা। বুধবার, সিমা গ্যালারিতে। ছবি: প্রদীপ আদক।

স্কুলের বচ্ছরকার পরীক্ষা শেষে তখন ছুটি শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ভালবাসার কাজ করার সুযোগ পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে কসুর করেনি সদ্য এগারো ক্লাস পেরোনো প্রণামিকা, শ্রেয়সী বা তৃণারা। তাদের সঙ্গে যোগ দিল দশম শ্রেণির পডুয়ারাও।

Advertisement

সেই সৃষ্টিশীল শ্রমের ফসল এখন শোভা পাচ্ছে মডার্ন হাই স্কুলের বাইরের দেওয়ালে। স্কুলের ছাত্রী-শিক্ষক-কর্মচারীরা তো বটেই, ওই তল্লাটের বাসিন্দাদের কাছেই সেই দেওয়ালচিত্র এখন একটা গর্বের ব্যাপার। পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার পটচিত্র থেকেই প্রেরণা পেয়েছে শহুরে স্কুলছাত্রীরা। অ্যাক্রিলিক ও তেলরঙের মিশেলে আজকের দুনিয়ায় শহরে-গ্রামে নানা অবতারে মেয়েদের উজ্জ্বল ভূমিকার ছবি ফুটিয়ে তুলেছে এই স্কুলপডুয়ার দল। বুধবার বিকেলে স্কুল পড়ুয়াদের জন্য সিমা আর্ট গ্যালারির পুরস্কারে এই কাজই সেরার স্বীকৃতি ছিনিয়ে নিল।

মডার্ন হাই স্কুলের ছাত্রী প্রণামিকা লাহিড়ির হাতে দশ হাজার টাকা মূল্যের পুরস্কার তুলে দিয়ে ভাস্কর বিমল কুণ্ডু বললেন, ‘‘বিভিন্ন স্কুলের ছেলেমেয়েদের মধ্যে সেরা বাছতে কিন্তু বেশ মুশকিলে পড়তে হয়েছিল।’’ বিমলবাবুর সঙ্গে চিত্রশিল্পী আদিত্য বসাক, ভাস্কর ও মৃৎশিল্পী পার্থ দাশগুপ্তও খুঁটিয়ে বিচার করেছেন কলকাতার স্কুলপ়ড়ুয়াদের শিল্পকলা। সল্টলেক ও পার্ক স্ট্রিটের এপিজে স্কুল, আনন্দপুরের দ্য হেরিটেজ স্কুল, সদর স্ট্রিটের চৌরঙ্গি হাইস্কুল, কসবার সিলভার পয়েন্ট স্কুলের ‘শিল্পী’দের কাজও বাহবা কুড়িয়েছে।

Advertisement

বৃষ্টিভেজা ধূসর বিকেলে এই স্কুলপড়ুয়াদের জন্য পুরস্কারের আসর থেকেই সিমা-র শিল্পচর্চার বিস্তৃত পরিসরেও এক অন্য জানলা খুলে গেল। ইতিমধ্যেই দেশ-বিদেশের রসিকজনের চোখ টেনেছে সিমা-র দ্বিবার্ষিক পুরস্কারের অনুষ্ঠান তথা শিল্পকলা উৎসব। সেখানে ডানা মেলেছেন গোটা দেশের ছোট-বড় শহর-গাঁয়ের অনামী পেশাদার প্রতিভারা। স্কুলপড়ুয়াদের পুরস্কারের লক্ষ্যটাও আলাদা নয়। ‘‘সিমা পুরস্কারের সঙ্গে এই স্কুলপড়ুয়াদের পুরস্কারেরও একটা যোগসূত্র রয়েছে। এই প্রতিযোগিতা স্কুলের প্রতিভাদের ভবিষ্যতের শিল্প-চর্চায় পথ দেখাবে।’’— বললেন সিমা-র ডিরেক্টর রাখী সরকার। তাঁর আশা, পরের বার থেকে এই পুরস্কারের আয়োজন আরও বড় করে করা হবে। অনেক বেশি স্কুল থাকবে। পুরস্কারের সংখ্যাও বাড়বে। স্কুল-প্রতিভাদের কাজেও আরও বেশি বৈচিত্র্য থাকবে।

যেমন, এ বার প্রধানত ম্যুরাল বা দেওয়াল-চিত্রই দেখা গিয়েছে। রাখীদেবীর কথায়, ‘‘আমরা চাই, স্কুলের ছেলেমেয়েরা ইনস্টলেশন, ত্রি-মাত্রিক কাজ— যা প্রাণ চায় করুক। ফেলা-ছড়া জিনিসকে ব্যবহার করেও ইতিবাচক কিছু হোক। স্কুলে বা কলকাতার অন্য কোথাও সে-কাজ সাজানো থাকুক।’’ পুর-প্রশাসনের কাছ থেকে দরকারি অনুমতি পাওয়া গেলে এই ধরনের কাজে শহর সাজাতে ঢালাও উৎসাহ দেবে সিমা। সিনেমা, নাটক, শিক্ষা জগতের যশস্বীদের সঙ্গে কৃতী স্কুল-প্রতিভারা ভবিষ্যতে সৃষ্টিশীল কাজ করার সুযোগ পাবেন বলেও প্রত্যয়ী সিমা-র ডিরেক্টর।

এর আগে ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স-এর আয়োজনেও স্কুলপড়ুয়াদের নিয়ে শিল্পকলা চর্চার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। সিমা-র স্কুল পুরস্কারেও সহায়তা করেছে চেম্বারের সমাজকল্যাণ শাখা ‘ক্যালকাটা ফাউন্ডেশন’। চেম্বারের ডেপুটি ডিরেক্টর নিবেদিতা সেনও মুগ্ধ খুদে প্রতিভাদের দেখে।

পুরস্কারের আসরে আলোচনা চলছিল, বিভিন্ন স্কুলের খুদেদের ভাবনার রকমারি বাঁক নিয়ে। কেউ কলকাতাকে নিয়ে শিল্পসৃষ্টি করেছে। কারও কাজের মধ্যে পরিবেশ নিয়ে বার্তা। সিমা-র মুখ্য প্রশাসক প্রতীতি বসুসরকারও বললেন, ‘‘ভাবতে ভাল লাগছে, স্কুলের ছেলমেয়েদের হাত ধরে শিল্পকলা কেমন জীবনচর্যার অঙ্গ হয়ে উঠেছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement