উচ্ছেদ নিয়ে খেলার দিনে পথে যুক্তমঞ্চ

বিশ্বকাপের মতো আন্তর্জাতিক একটি ইভেন্টের দিনে হকার-ঝুপড়িবাসীদের নিয়ে যুক্তমঞ্চের এমন মিছিলের আয়োজনকে অবশ্য বাসিন্দারা ধিক্কার জানিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২৭
Share:

উচ্ছেদের পরে। সল্টলেকে। ফাইল চিত্র

বিশ্বকাপের আগে সল্টলেকে সৌন্দর্যায়নের জন্য রাস্তা এবং সরকারি জমি দখল করে থাকা হকার আর ঝুপড়ি ঘর সরানো হয়েছে। তাই নিয়ে পথেও নেমেছে কিছু সংগঠন। তৈরি হয়েছে যুক্তমঞ্চ। বিশ্বকাপের খেলার দিনে রবিবার তাঁরা উচ্ছেদ বিরোধী মিছিল করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। বিশ্বকাপের মতো আন্তর্জাতিক একটি ইভেন্টের দিনে হকার-ঝুপড়িবাসীদের নিয়ে যুক্তমঞ্চের এমন মিছিলের আয়োজনকে অবশ্য বাসিন্দারা ধিক্কার জানিয়েছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘দেশের মুখ পোড়ানোর পরিকল্পনা হচ্ছে। তা মানা যায় না। প্রশাসন যা করেছে, ঠিক করেছে।’’ প্রয়োজনে বাসিন্দারাও পাল্টা পথে নেমে এর প্রতিবাদ করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। যদিও যুক্তমঞ্চের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, আন্দোলন জোরকদমে চলবে। আজ, কলকাতায় তাঁরা মিছিল করে ঝুপড়িবাসী-হকারদের দুরবস্থার কথা তুলে ধরবেন।

Advertisement

যুক্তমঞ্চের প্রতিনিধিরা শনিবার দুপুরে বিধাননগর পুরভবনে মেয়র সব্যসাচী দত্তের সঙ্গে দেখা করে দাবিদাওয়া তুলে ধরেন। যুক্তমঞ্চের এক নেতা রঞ্জিত শূর জানান, আপাতত ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে হকারদের ব্যবসা করতে দেওয়া, যাঁদের উচ্ছেদ করা হল তাঁদের অবিলম্বে মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের ব্যবস্থা করা এবং পুলিশি দমন বন্ধ করা— এই দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন তাঁদের জানিয়েছে, ২৮ অক্টোবর বিশ্বকাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কোনও পদক্ষেপ করতে পারবেন না। তবে নতুন করে কোনও উচ্ছেদ হবে না। ১ নভেম্বর পরবর্তী আলোচনা হবে।

প্রতিনিধিদের দাবি, যেহেতু হকার, বস্তি ও ঝুপড়িবাসীদের জন্য ন্যূনতম ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও আশ্বাস মেলেনি, তাই আন্দোলন চলবে।
আজ, রবিবার শিয়ালদহ এলাকায় দুপুর ২টো নাগাদ জমায়েত হবে। তার পরে মিছিল করে স্টেডিয়ামের দিকে যাওয়া হবে। রঞ্জিতবাবু বলেন, ‘‘আমরা বলতে চাইছি, এত মানুষকে চোখের জলে ভাসিয়ে উন্নয়ন হয় না। ফিফা-র নিয়মেই আছে, বিশ্বকাপ করতে গিয়ে কোনও উচ্ছেদ করা চলবে না। হকারদের নিয়ে দেশে নির্দিষ্ট আইন আছে। সেই আইনও মানা হচ্ছে না।’’

Advertisement

কিন্তু বিশ্বকাপের মতো বিষয় যেখানে দেশের ভাবমূর্তি জড়িত, সেখানে আলোচনা শুরুর পরেও কেন মিছিলের আয়োজন? রঞ্জিতবাবুর দাবি, দেশের সম্মানের কথা ভেবেই সল্টলেক থেকে কর্মসূচি সরিয়ে শিয়ালদহে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু এত মানুষকে রাতারাতি উচ্ছেদ করা হল, ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হল, হাজারেরও বেশি শিশুর জীবন বিপন্ন হল, কয়েক হাজার মানুষ খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন। তা নিয়ে কেন কোনও কথা হচ্ছে না?

যদিও বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘কোনও উচ্ছেদ হয়নি। নিরাপত্তা, সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প এবং বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে কিছু অংশ থেকে দখলদারি সরানো হয়েছে। আমরা অনুরোধ করেছি, বিশ্বকাপ শেষ হলে ১ নভেম্বর ফের আলোচনায় বসব।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘সল্টলেকে স্বীকৃত বস্তি হাতে গোনা। সেখানে কিছু করা হয়নি। হকার, ঝুপড়িবাসীদের হয়ে যাঁরা কথা বলতে এলেন তাঁরা সকলেই সল্টলেকের বাইরের। আসতেই পারেন, তবে যাঁদের সরানো হল, তাঁদের কেউ এলে ভাল লাগত। তাঁর দাবি, সল্টলেকের হকারেরা তাঁদের সঙ্গেই রয়েছেন।’’ যদিও প্রশাসনের একটি অংশের কথায়, যুক্তমঞ্চের প্রতিনিধিদের অভিযোগ ঠিক নয়। দমনপীড়ন চালানো হয়নি। বার বার করে সরে যেতে বলা হয়েছিল। তাঁরা সরেননি। এই বৈঠকে মেয়র এবং যুক্তমঞ্চের প্রতিনিধি ছাড়াও পুর প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনের দুই উচ্চপদস্থ কর্তা হাজির ছিলেন।

যদিও সল্টলেকবাসীর একাংশ পুর প্রশাসনের পাশেই দাঁড়িয়েছেন।
তাঁদের কথায়, দখল করে ব্যবসা বা বসবাস করাটাই আইনসঙ্গত নয়। সেখানে সরাতে গেলে আবার পুনর্বাসনের দাবি তোলা আরও বড় অন্যায়। দেরিতে হলেও প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছে। সল্টলেককে পুরনো গরিমায় ফেরানোর এই প্রক্রিয়ায় তাঁরা খুশি। প্রাক্তন বিচারপতি তথা সল্টলেকের বাসিন্দা সৌমিত্র সেন বলেন, ‘‘বাসিন্দা হিসেবে প্রশাসনের এই পদক্ষেপে আমরা খুশি। দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারীদের জন্য সরকার চিন্তাভাবনা করুক। কিন্তু তা বলে রাস্তাঘাট, সরকারি জমি দখল করে জীবিকার ব্যবস্থা হবে এবং তাঁদের জন্য অন্যেরা দুর্ভোগে পড়বেন তা অন্যায়। অনেক দিন পরে হলেও প্রশাসন ঠিক করেছে।’’ বাসিন্দাদের একটি সংগঠনের নেতা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘বাসিন্দারা আইন মেনে চলেন। হকারদেরও আইন মেনেই চলতে হবে। এ ভাবে সরকারি জমি দখল করে থাকা যায় না। আমরা পুর প্রশাসনের পাশে আছি। প্রয়োজনে আইনের দ্বারস্থ হব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement