প্রতীকী ছবি।
থানা থেকে উধাও রাশি রাশি মালপত্র। সেই তালিকায় যেমন রয়েছে বিভিন্ন মামলায় বাজেয়াপ্ত হওয়া গয়না, নথি, দলিল-দস্তাবেজ, তেমনই রয়েছে মাছ, এমনকি ছাগলও!
পুলিশ সূত্রের খবর, শিয়ালদহ রেলপুলিশের থানা থেকে বছরের পর বছর ধরে এই সব জিনিস চুরি হওয়া বা হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মালখানার পাশাপাশি, হদিস নেই জিম্মানামায় থাকা জিনিসেরও। সব মিলিয়ে খোঁজ নেই আটশোরও বেশি জিনিসের। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনাটির সত্যতা মেলার পরে এক সময়ে ওই থানার মালখানার দায়িত্বে থাকা দুই প্রাক্তন অফিসারের বিরুদ্ধে সম্প্রতি অভিযোগ দায়ের করেছেন শিয়ালদহ রেলপুলিশের এক আধিকারিক। তার ভিত্তিতে ওই দুই অফিসারের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
অভিযুক্ত দুই পুলিশ অফিসারের নাম অরুণ চক্রবর্তী এবং পঙ্কজকুমার দে। অরুণবাবু ইনস্পেক্টর এবং পঙ্কজবাবু সাব-ইনস্পেক্টর পদ থেকে অবসর নিয়েছেন বছরখানেক আগে। এক পুলিশকর্তা জানান, ঘটনার তদন্ত-ভার দেওয়া হয়েছে সোনারপুর রেলপুলিশের এক আধিকারিকের হাতে। তিনি বিশেষ দল গড়ে তদন্ত করবেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, চলতি বছরের গোড়ায় শিয়ালদহ রেলপুলিশের সুপার হিসেবে দায়িত্ব নেন অশেষ বিশ্বাস। দায়িত্ব নেওয়ার পরেই তাঁর নজরে আসে, শিয়ালদহ জিআরপি থানার মালখানায় জমা থাকা সামগ্রীর ক্ষেত্রে বেশ কিছু অনিয়ম রয়েছে। অশেষবাবুর নির্দেশে এবং এক ডেপুটি সুপারের নেতৃত্বে পাঁচ অফিসারের বিশেষ অনুসন্ধান দল গড়া হয়। ওই দলটি প্রাথমিক অনুসন্ধানের পরে অরুণবাবু ও পঙ্কজবাবুর ভূমিকায় অখুশি হয়ে রিপোর্ট জমা দেয় পুলিশ সুপারের কাছে। তার পরেই মামলা দায়ের করা হয়।
কেন তদন্তকারী অফিসারেরা অরুণবাবু ও পঙ্কজবাবুর ভূমিকায় অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন? পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তকারী দলটি বিভিন্ন সময়ে মালখানার দায়িত্বে থাকা অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেখানেই ওই অনিয়ম ধরা পড়ে। তাঁদের দাবি, ২০০৬ সালে অভিযুক্ত দুই অফিসারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হলেও তখন কিছু হয়নি। রেল পুলিশের একটি সূত্র আরও দাবি করেছে, ওই দু’জন রেলপুলিশ থেকে বদলি হওয়ার সময়েও অন্যদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে যাননি।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাগুলি ঘটেছে ২০০১ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে। কিন্তু ওই সব জিনিস জমা পড়তে শুরু করেছিল ১৯৭৬ সাল থেকে। তদন্তকারী দলের সদস্যদের দাবি, নিখোঁজ হওয়া জিনিসের মধ্যে ২১৪টি মূল্যবান। তার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মামলায় বাজেয়াপ্ত হওয়া সোনা, নথিপত্র এবং দস্তাবেজ। অন্য দিকে, জিম্মানামায় ছিল ৬১টি জিনিস। যার মধ্যে ছিল শিয়ালদহ রেলপুলিশের হাতে ধরা পড়া ছাগল থেকে শুরু করে মাছ, মায় ধানের বস্তাও। সেগুলি মালখানার দায়িত্বে থাকা ওই দুই অভিযুক্ত অফিসার জিম্মা দিয়েছিলেন বিভিন্ন ব্যক্তিকে।
তদন্তকারীরা আরও জানিয়েছেন, যে সব মামলার নথির খোঁজ নেই, সেগুলির বিষয়ে জানার জন্য তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু আদালতের রেকর্ড অফিস থেকে জানানো হয়েছে, পুরনো নথি ঘেঁটে দেখতে সময় লাগবে।