জয়প্রকাশ জায়সবাল
রিভলভার দিয়ে এক ব্যবসায়ীর মাথায় আঘাত করে দেড় লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালাল মোটরবাইক আরোহী দুই দুষ্কৃতী। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ হাওড়ার টিকিয়াপাড়া রেল স্টেশন সংলগ্ন মধুসূদন রায়চৌধুরী বাই লেনের ঘটনা। গত এক মাসে শহরে একের পর এক চুরি, ডাকাতি ও খুনের ঘটনার পরে ফের এ দিনের ছিনতাইয়ের ঘটনা কার্যত পুলিশি ব্যর্থতাকে বেআব্রু করে দিয়েছে। বিশেষত কোনও ঘটনাতেই অপরাধীদের এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করতে না পারায় প্রশ্ন উঠেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সদর বক্সি লেনের বাসিন্দা ছাঁট লোহার ব্যবসায়ী দুই ভাই ওমপ্রকাশ জায়সবাল ও জয়প্রকাশ জায়সবাল এ দিন মোটরবাইকে করে বেলগাছিয়ার কাছে বেনারস রোডের একটি কারখানায় যাচ্ছিলেন। মোটরবাইক চালাচ্ছিলেন দাদা ওমপ্রকাশবাবু ও ব্যবসার জন্য দেড় লক্ষ টাকা ভরা একটি ব্যাগ হাতে পিছনে বসেছিলেন ভাই জয়প্রকাশবাবু।
পুলিশ জানায়, টিকিয়াপাড়া আন্ডারপাস দিয়ে বেরিয়ে তাঁরা যখন মধুসূদন পালচৌধুরী বাই লেনে ঢোকেন তখন প্রায় সকাল সাড়ে ১১টা। ওই রাস্তায় দিনের বেশির ভাগ সময়েই কম লোক চলাচল করে। পুলিশ জানায়, এই সুযোগেই একটি মোটরবাইকে এসে দুই ব্যবসায়ীর পথ আটকে দাঁড়ায় মুখে রুমাল বাঁধা দুই দুষ্কৃতী। হঠাৎই তাদের এক জন রিভলভার বার করে তার বাঁট দিয়ে জয়প্রকাশবাবুর মাথায় আঘাত করে। রাস্তায় পড়ে যান জয়প্রকাশবাবু। তাঁর মাথা ফেটে যায়। তাঁর হাত থেকে টাকার ব্যাগ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ওই দুষ্কৃতী। পুলিশ জানায়, ওই সময়ে দুষ্কৃতীর সঙ্গে তাঁর খানিক হাতাহাতিও হয়। কিন্তু শেষে টাকার ব্যাগটি নিয়ে চম্পট দেয় দুই দুষ্কৃতী। এ দিকে, জয়প্রকাশবাবুর ধাক্কায় রিভালভারটি দুষ্কৃতীর হাত থেকে পড়ে যায়। পরে সেটি থানায় জমা দেওয়া হয়।
এর পরেই ফোনে বন্ধুদের খবর দেন ওমপ্রকাশবাবু। চলে আসেন এলাকার লোকজনও। জয়প্রকাশবাবুকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। জয়প্রকাশবাবু বলেন, ‘‘ব্যাগ নিয়ে টানাটানির সময়ে দেখি ওই দুষ্কৃতী আমাকে গুলি করতে রিভালভার তাক করছে। নিজেকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি ওর উপরে। সেই ধাক্কাতেই রিভালভারটি ওর হাত থেকে পড়ে যায়।’’ ওমপ্রকাশবাবু বলেন, ‘‘দিনের বেলাই যদি পুলিশ নাগরিকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করতে পারে, তা হলে রাতে কী হবে?’’
দুষ্কৃতী কার্যকলাপ এত বাড়ছে কেন? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে হাওড়ার পুলিশ কমিশনারকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি, জবাব দেননি এসএমএস-এরও। তবে এ দিনের ছিনতাই প্রসঙ্গে হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘দুই ব্যবসায়ী প্রায়ই ওই এলাকা দিয়ে যে টাকা নিয়ে যেতেন, সে খবর ছিল দুষ্কৃতীদের কাছে। অন্য কোনও লোহা ব্যবসায়ীর কাছে খবর পেয়েই স্থানীয় দুষ্কৃতীরা এই কাজ করেছে বলে মনে হচ্ছে।’’