উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
চার দিনের মধ্যে মধ্য কলকাতা থেকেই উদ্ধার হয়েছে নগদ প্রায় এক কোটি হিসাব বহির্ভূত বা নথি ছাড়া টাকা। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ওই টাকা উদ্ধার করার পর প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল, নির্বাচনে ব্যবহারের জন্যই তা আনা হয়েছে। তবে, এখনও পর্যন্ত ওই টাকার সঙ্গে নির্বাচনের কোনও যোগ খুঁজে পাননি গোয়েন্দারা। বরং প্রকাশ্যে এসেছে হাওয়ালার রমরমা কারবারের কথা।
শনিবার নিউ মার্কেট থানা এলাকার সদর স্ট্রিট এলাকা থেকে পুলিশ পাকড়াও করে ওয়াসিম খান নামে এক যুবককে। তালতলার বাসিন্দা ওয়াসিমের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ওয়াসিমকে জেরা করে জানা যায় সে শামস তাবরেজ নামে এক ব্যক্তির টাকা নিয়ে যাচ্ছিল। শামস তাবরেজের কাছ থেকে সেই টাকা যেত অন্য এক ব্যক্তির হাতে। পুলিশ শামসকেও জেরা করার জন্য ডাকে। তিলজলা থানা এলাকার রাইচরণ ঘোষ লেনের বাসিন্দা শামস জেরায় জানিয়েছেন, তিনি একটি ভ্রমণ সংস্থা চালান। ফলক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস্ এবং জেট ফ্লো নামে দু’টি সংস্থার অফিসই নিউ মার্কেট এলাকায়। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, শামস দাবি করেছে ওই টাকা বিদেশি মুদ্রা ভাঙানোর টাকা। তবে গোয়েন্দাদের দাবি, ওই টাকার দাবি করলেও তিনি কোনও নথি দেখাতে পারেননি। গোয়েন্দাদের ধারণা ওই টাকা পুরোটাই হাওয়ালার।
আরও পড়ুন, দমদমে রাস্তার উপর মত্ত যুবকদের তাণ্ডব, প্রহৃত শিক্ষক দম্পতি
ঠিক একই রকম ভাবে পোস্তা থানা এলাকায় নগদ ১৩ লাখ টাকা নিয়ে গত ৭ মার্চ ধরা পড়ে রঞ্জনকুমার সিংহ। তাকে জেরা করে বড়বাজারের এক ব্যবসায়ীর হদিশ পাওয়া যায়। রঞ্জন দাবি করে, শুকনো ফলের ব্যবসা করেন ওই ব্যবসায়ী। ওই টাকা তাঁর ব্যবসার। তবে সেই টাকারও কোনও নথি দিতে পারেননি ওই ব্যবসায়ী। গোয়েন্দারা নিশ্চিত ওই টাকাও হাওয়ালার।
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান প্রবীন ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, টাকা উদ্ধারের সব ক’টি ঘটনাই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এবং আয়কর বিভাগকে জানানো হয়েছে। ইডি সূত্রে খবর, গত ক’মাস ধরে ভ্রমণ সংস্থা এবং মুদ্রা বিনিময়ের ব্যবসার আড়ালে চলা হাওয়ালা নিয়ে তারা তদন্ত করছে। নিউ মার্কেট এলাকারই কয়েকটি সংস্থার অফিসে বেশ কয়েক দফা তারা হানা দিয়ে বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করেছিল। শামস-এর ফলক নামে সংস্থা নিয়েও তারা তদন্ত করবে। এই হাওয়ালা চক্রের মাধ্যমে শহরের বেশ কয়েকজন নামী ব্যবসায়ী টাকার লেনদেন করছেন বলে জানিয়েছেন ইডির গোয়েন্দারা।
আরও পড়ুন, সিন্ডিকেট ব্যবসায় বিরোধের জেরে বেহালায় গুলি, সংঘর্ষ
তবে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা এখনই শুধু হাওয়ালা বলে হাল ছাড়তে রাজি নন। এক গোয়েন্দা কর্তা বলেন, “যাঁদের কাছে ওই টাকা পাঠানো হচ্ছিল তাঁদের জেরা করা হচ্ছে। তাঁদের বিভিন্ন যোগাযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” নির্বাচনের মুখে ওই বিপুল টাকা এক জায়গা থেকে অন্য এক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে নির্বাচনের কোনও যোগ নেই— এমনটা মানতে নারাজ কলকাতা পুলিশ।
(কলকাতার ঘটনা এবং দুর্ঘটনা, কলকাতার ক্রাইম, কলকাতার প্রেম - শহরের সব ধরনের সেরা খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।)