যাদবপুরকাণ্ডে ধৃতদের আদালতে হাজির করানো হয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।
যাদবপুরকাণ্ডে ধৃতদের ১২ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। ধৃত ছ’জনকে আগামী ২৮ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে থাকতে হবে। বুধবার তাঁদের আলিপুর আদালতে হাজির করানো হলে এই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
মঙ্গলবার রাতভর তল্লাশি চালিয়ে যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় আরও ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন, জম্মুর বাসিন্দা মহম্মদ আরিফ, পশ্চিম বর্ধমানের বাসিন্দা আসিফ আফজল আনসারি, উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা অঙ্কন সরকার, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি থানা এলাকার বাসিন্দা অসিত সর্দার, মন্দিরবাজারের সুমন নস্কর এবং পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার বাসিন্দা সপ্তক কামিল্যা। এঁদের মধ্যে অসিত, সপ্তক এবং সুমন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। এর আগে এই ঘটনায় আরও তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আদালতে পুলিশের তরফে সরকার পক্ষের আইনজীবী শুভাশিস ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, আগে যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই সৌরভ চৌধুরী, মনোতোষ ঘোষ এবং দীপশেখর দত্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই নতুন ছ’জনের নাম উঠে এসেছে।
ধৃত ছ’জনের মধ্যে তিন প্রাক্তনী ঘটনার পর হস্টেল ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন বলে দাবি পুলিশের। তাঁদের সংশ্লিষ্ট জেলা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ বুধবার এই ছাত্রদের আদালতে হাজির করিয়ে ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চেয়েছিল। আদালত ১২ দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেছে।
ধৃতদের মোবাইল ফোন ইতিমধ্যে বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। এ ছাড়া, প্রাক্তনী সপ্তকের ল্যাপটপও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আদালতে সেই তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের তরফে আরও জানানো হয়, মৃত ছাত্রের বাড়িতে গিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। তাঁরা মৃতের বাবা এবং মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। সংগ্রহ করা হয়েছে ওই ছাত্রের জন্মের শংসাপত্র। ঘটনার পর হস্টেল থেকে যে হলুদ ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে, তাতে একটি চিঠি ছিল। সেই চিঠির হাতের লেখা যাচাই করার জন্য মৃতের বাড়ি থেকে খাতা এবং স্বাক্ষরের নমুনা সংগ্রহ করেছে পুলিশ।
আদালতের বাইরে বেরিয়ে আইনজীবী বলেন, ‘‘আগে যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাঁদের বয়ান খতিয়ে দেখার পর এই ছ’জনের নাম উঠে এসেছে। ঘটনায় এঁরা যুক্ত ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। এঁদের বয়ানে বেশ কিছু অসঙ্গতিও ধরা পড়েছে। এই ক’দিনে তদন্ত অনেকটা এগিয়েছে। পুলিশ ভাল কাজ করছে। আশা করছি, যাঁরা দোষী, শীঘ্রই তাঁদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারব।’’
গত বুধবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের (স্নাতক) ছাত্র হস্টেলের তিন তলার বারান্দা থেকে পড়ে যান। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকালে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে।
(পশ্চিমবঙ্গ শিশু সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী রবিবার তাঁর একটি ফেসবুক পোস্টে যাদবপুরের মৃত ছাত্রের নাম না-লিখতে অনুরোধ করেছেন। এই মৃত্যুমামলা অপ্রাপ্তবয়স্কদের উপর যৌন নির্যাতন বিরোধী ‘পকসো’ আইনে হওয়া উচিত বলেও তাঁর অভিমত। কমিশনের উপদেষ্টার অনুরোধ মেনে এর পর আনন্দবাজার অনলাইন মৃত ছাত্রের নাম এবং ছবি প্রকাশে বিরত থাকছে।)