পথের দাবি নস্যাৎ করছেন দোকানিরাও

হকারদের ফুটপাথ দখল নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন দোকানিরা। কিন্তু ফুটপাথ দখলে কম যান না তাঁদের একাংশও। দোকানের পসরায় কার্যত উধাও হয়ে গিয়েছে সাধারণ মানুষের চলার পথ। শহর ঘুরে সে ছবি দেখে এলেন সুপ্রিয় তরফদার।হকারদের ফুটপাথ দখল নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন দোকানিরা। কিন্তু ফুটপাথ দখলে কম যান না তাঁদের একাংশও। দোকানের পসরায় কার্যত উধাও হয়ে গিয়েছে সাধারণ মানুষের চলার পথ। শহর ঘুরে সে ছবি দেখে এলেন সুপ্রিয় তরফদার।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৬
Share:

শ্যামবাজার


হকারদের ফুটপাথ দখল নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন দোকানিরা। কিন্তু ফুটপাথ দখলে কম যান না তাঁদের একাংশও। দোকানের পসরায় কার্যত উধাও হয়ে গিয়েছে সাধারণ মানুষের চলার পথ। শহর ঘুরে সে ছবি দেখে এলেন সুপ্রিয় তরফদার।

Advertisement

দৃশ্য ১: কালীঘাট থানা থেকে এস পি মুখার্জি রোডের পথে দু’পাশে পরপর পোশাক ও পুজোর সরঞ্জামের দোকান। ফুটপাথ ধরে হাঁটা দূরে থাক, আদৌ যে ফুটপাথ রয়েছে, সেটাই বোঝার উপায় নেই। কালী টেম্পল রোডে মূল দোকানগুলি ফুটপাথে বেশ কিছুটা ভিতর দিকে বটে, তবে তার দরজা থেকে সারি সারি বাঁশ ও লাঠিতে ঝোলানো চৈত্র সেলের পসরা ফুটপাথ পেরিয়ে নেমে গিয়েছে রাস্তায়। জামাকাপড়ে চাপা পড়ে ফুটপাথের দেখা মেলা ভার। পথচারীরা অগত্যা হাঁটছেন বড় রাস্তা ধরেই। ছবিটা এক গড়িয়াহাট এলাকা জুড়েও। দোকানের উপচে পড়া সেলের পসরার দখলে ফুটপাথ। এক দিকে হকার-রাজ, অন্য দিকে দোকান— পথচারীদের উভয় সঙ্কট।

Advertisement


গড়িয়াহাট

দৃশ্য ২: কড়েয়া রোডে তেলেভাজার দোকান। ভিতরে সাজানো চেয়ার-টেবিল। গোটা দোকানটি অবশ্য নেমে পড়েছে বাইরের ফুটপাথে। সার দিয়ে বসার বেঞ্চ। এমনকী, খাবারও তৈরি হচ্ছে সেই ফুটপাথেই। তার পাশেই দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে ক্রেতা ডাকতে ব্যস্ত কর্মচারীরা। সাধারণ মানুষের চলার যে সামান্য পথটুকুও নেই, তাতে ভ্রূক্ষেপ নেই কারও।

দৃশ্য ৩: বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের ফুটপাথ লাগোয়া সারি সারি সাইকেলের দোকান। ভিতর-বাইরে সাজানো একের পর এক সাইকেল। ফুটপাথ প্রায় উধাও। দোকানের বেশির ভাগ সাইকেলের ঠাঁই হয়েছে সেখানেই। দোকানের সামনের ছাউনির বেশ কিছুটা অংশ সামনের দিকে ঝুঁকে। সেখানে ঝুলছে সাইকেল। বাচ্চা-বুড়ো সকলেই গোটা ফুটপাথ দখল করে থাকা সাইকেলের পসরা থেকেই বাছাই করছেন। ক্রেতাদের পছন্দ মতো সাইকেল এগিয়ে দিচ্ছেন দোকানিরা। চড়া বা চালিয়ে দেখাও সেখানেই। পথচারীরা পাশ কাটিয়ে যেতে গেলে কখনও সাইকেলের কোনও অংশ আটকে যাচ্ছে পোশাক, অসাবধান হলে উপরে ঝুলতে থাকা সাইকেলে ঠোক্কর খাওয়ারও ভয় রয়েছে। দোকানি ও ক্রেতাদের অবশ্য তাতে কোনও হেলদোল নেই।


বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট

হকারদের দখলে কলকাতার ফুটপাথ— এ নিয়ে কোনও রকম দ্বিমত নেই শহরবাসীর। যে কারণে কিছু দিন আগেই দোকান বন্ধ রেখে আন্দোলন শুরু করেছিলেন নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। এর পরে গত ১৩ মার্চ রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী হকার-নীতি ঘোষণা করে ঢালাও প্রতিশ্রুতি দেন হকারদের। এর পরেই তাঁদের দৌরাত্ম্য আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন শহরের বাসিন্দাদের একাংশ। গত সপ্তাহে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা করা হকারদের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিল এক ব্যবসায়ী সংগঠন। তবে অপরকে দোষারোপ করলেও ব্যবসায়ী সংগঠনের একাংশই যে রমরমিয়ে একই কাজ করে চলেছেন, বিভিন্ন ফুটপাথের এই চিত্রগুলিই তার প্রমাণ।

তাঁহাদের কথা

পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম: ‘‘ফুটপাথ দখল করে থাকাটা কখনওই উচিত নয়। তবে বিষয়টা আমরা মানবিকতার সঙ্গেই দেখি। যে কারণে পুর-নির্বাচনের পরে ভেন্ডিং কমিটি গড়ে এই সমস্যা নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’

লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা: ‘‘পুরসভা সহযোগিতা চাইলে অবশ্যই পুলিশ পদক্ষেপ করবে। কিন্তু পুলিশের নিজে থেকে এ বিষয়ে কিছুই করার নেই।’’

মহেশকুমার সিংহানিয়া (চেয়ারম্যান, ফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন): “হকার বা ব্যবসায়ী, কারওই পথ দখল করে রাখা উচিত নয়। মানুষের চলার পথে বাধা সৃষ্টি করা আমাদের উদ্দেশ্য থাকেও না।” কিন্তু চিত্র বলেছে অন্য কথা। তবে কি ওই ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে? সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি।

মহম্মদ নিজামুদ্দিন (সভাপতি, কলকাতা স্ট্রিট হকার্স ইউনিয়ন): ‘‘ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা করাটাই তো পুরোপুরি বেআইনি। হকারদেরও উচিত আইন মেনে চলা। আর ব্যবসায়ীদের তো দোকান আছে। তা হলে তাঁরা ফুটপাথ জুড়ে মালপত্র রাখেন কেন? আমরা শুধু আবেদন করতে পারি। যা করার, পুরসভা ও পুলিশকেই করতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement