হেনস্থার ভয়ে এখন পুলিশকে জানিয়ে জলসায় যাচ্ছেন শিল্পীরা

প্রীতির জলসা কি ফিরবে শহরে? উত্তর মিলবে কয়েক দিনেই।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৫০
Share:

কোনো এক জলসায়। ফাইল চিত্র

লোকে গান শোনে না। গান গোনে। শিল্পী মহলে আলোচনায় নিজের এই উপলব্ধির কথা বলেছিলেন খোদ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ‘দাদার কীর্তি’ মুক্তি পাওয়ার পরে তাঁকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয়েছিল বনগাঁর এক অনুষ্ঠানে। সেই প্রসঙ্গ তুলে সঙ্গীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র বললেন, ‘‘ব্যাপারটা তো এখন আর স্রেফ ঢিল ছোড়ায় থামে না। শিল্পীদের সঙ্গে এমন সব ঘটনা ঘটছে যে, শিউরে উঠতে হয়। এ বার অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অনেক ভেবে এগোচ্ছি।’’

Advertisement

কালীপুজো ঘিরে ভরা জলসার মরসুমে এখন ‘ভেবে এগোনো’ই রীতি শিল্পী মহলে। অধিকাংশই জানাচ্ছেন, শহর ও জেলা মিলিয়ে আগামী দিন দশেকের ‘ডেট বুক’ হয়ে গিয়েছে তাঁদের। তবে অনুষ্ঠান বা সেই সংক্রান্ত বিষয়ের থেকেও তাঁদের বেশি মাথা ব্যথা, উদ্যোক্তারা বন্ধুত্বপূর্ণ কি না, বা জলসা যেখানে হতে চলেছে, সেই জায়গাটি কতটা নিরাপদ তা নিয়ে। এক শিল্পী বললেন, ‘‘এ বার প্রথমেই কলকাতা ও জেলার কিছু মার্কামারা এলাকা বাদ দিয়েছি। সেখানকার লোকজন কথা বলতে এলেই ফিরিয়ে দিয়েছি।’’ আর এক শিল্পী জানান, তিনি যেখানকারই জলসার বরাত নিয়েছেন, সেখানকার থানায় চিঠি দিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখার অনুরোধ জানিয়ে রেখেছেন। গায়িকা ইমন চক্রবর্তী আবার বললেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনের থেকে কতটা নিরাপত্তা পাব জানি না। তাই নিজেই বাউন্সার নিয়ে ঘুরছি।’’

তবে ‘বাউন্সার’ রাখার মতো আর্থিক সঙ্গতি যে সমস্ত শিল্পীর নেই, তাঁরা কী করবেন? দিন কয়েক আগেই মানিকতলার মুরারিপুকুরে গণেশপুজোর জলসায় পিউ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক শিল্পীকে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। তিনি মঞ্চের পিছন দিকের ‘গ্রিন রুম’-এ থাকাকালীন জলসার এক উদ্যোক্তা সেখানে ঢুকে তাঁকে হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। পিউ বললেন, ‘‘সেই রাতে ওই জায়গায় পুলিশ ছিল না। থাকলে হয়তো এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হত না। নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে ঘোরা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়।’’

Advertisement

ইমন বললেন, ‘‘আমিও আগে পুলিশের উপরেই নির্ভর করতাম। কৃষ্ণনগরে কম গান গেয়েছি বলে যে দিন আমাদের ঘিরে হেনস্থা করা হল, সে দিন বুঝেছি পরিস্থিতি কী হতে পারে। এখন তাই বাধ্য হয়েই নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী সঙ্গে রাখছি। তা ছাড়া, অনেক শিল্পীই হেনস্থার কথা প্রকাশ্যে বলেন না। তাঁদের বলব, প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করুন।’’ লোপামুদ্রা আবার জানান, মেদিনীপুরের খেজুরিতে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে তাঁরও একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তাঁকে ও তাঁর সঙ্গীদের সেখানে আটকে রাখা হয়। লোপামুদ্রার কথায়, ‘‘সে বার অবশ্য আমি পুলিশের সাহায্য পেয়েছিলাম। পুলিশ বা ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী যে-ই হোন, দর্শক ও উদ্যোক্তারা সচেতন না হলে কিছুই হবে না। আমাদের বাদ্যযন্ত্রগুলো ছুড়ে ফেলে ভাঙা হলে পুলিশ বা কেউই কিছু করতে পারবে না। সেই কারণেই আমি বলব, শিল্পীরা বেছে অনুষ্ঠান করুন।’’পুলিশ অবশ্য মনে করে, বেছে অনুষ্ঠান করাটা কোনও পথ হতে পারে না। কলকাতা পুলিশের কমিশনার অনুজ শর্মা বলেন, ‘‘বেছে অনুষ্ঠান কেউ করতেই পারেন। তবে সেটাই পথ হতে পারে না। উদ্যোক্তারা জানালে অনুষ্ঠানস্থলের কাছে পুলিশকর্মীদের মোতায়েন রাখা হয়। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’’

প্রীতির জলসা কি ফিরবে শহরে? উত্তর মিলবে কয়েক দিনেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement