ট্রামে রূপান্তরকামী এক মহিলা সকলের কাছে টাকা চাইছেন। ট্রামে উঠে বসার পর থেকেই ওই মহিলাকে আড়চোখে বারবার দেখছিলেন এক যুবক। পাছে তাঁর কাছেও টাকা চায়, এই ভেবে ওই যুবক নিজের জামার বাঁ পকেটে থাকা সব টাকা বার করে প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে নিলেন। কিছু ক্ষণেই তাঁর সন্দেহ ঠিক হল। ওই রূপান্তরকামী মহিলা এসে একই ভঙ্গিতে বললেন, ‘‘দাদা টাকাটা দিন।’’
বেশ কয়েক বার একই ভাবে টাকা চেয়ে যাচ্ছেন দেখে ওই যুবক জামার পকেট দেখিয়ে জানিয়ে দিলেন ‘‘খুচরো নেই।’’ এর পরেই ওই রূপান্তরকামী মহিলা জানালেন, ‘‘দাদা, টিকিটের পয়সা দিন।’’ তিনি যে ট্রাম কোম্পানির টিকিট পরীক্ষক— কলকাতার ট্রামকে প্রেক্ষাপটে রেখে তৈরি কয়েক মিনিটের একটি শর্ট ফিল্মের গল্প। কিন্তু মুহূর্তের এই ছবিটা যেন হলের প্রতিটি দর্শকের পিঠে চাবুক মেরে দিয়ে গেল। ছবি শেষ হতেই কয়েক মুহূর্তের নিস্তব্ধতা। তার পরেই হাততালিতে ফেটে পড়ল হল। রাজ্যের একটি সরকারি অফিসের মঞ্চে প্রদর্শিত হল আমদাবাদের এক পরিচালকের এই শর্ট ফিল্ম। উদ্দেশ্য ট্রান্সজেন্ডারদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদল।
রাজ্যের নারী, শিশু বিকাশ ও সমাজ কল্যাণ দফতর এ ভাবেই চেষ্টা করল তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বদলের নতুন দিক খুলে দিতে। সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে তৈরি করা শর্ট ফিল্ম বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প়ড়ুয়াদের মধ্যে ছডিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করল। কী ভাবে? সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের সহযোগিতায় শর্ট ফিল্ম তৈরির একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার পরে সেখান থেকে প্রথম তিনটি বাছাই করা হয়েছিল আগেই। এ বার পুরষ্কৃত সেই ছোট ছবিগুলি বিভিন্ন স্কুল, কলেজের পড়ুয়াদের দেখিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করল দফতর। বুধবার এক অনুষ্ঠানে দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘সিনেমা হলগুলির সঙ্গেও আমরা কথা বলে অন্য ছবি দেখানোর আগে বা মাঝখানের বিরতিতে কয়েক মিনিটের এই ছোট্ট ছবিগুলি দেখানোর কথা ভাবছি। এতে অনেক বেশি মানুষের কাছে আমরা পৌঁছে যেতে পারব।’’ এ দিনের অনুষ্ঠানে প্রথম তিনটি শর্ট ফিল্ম বাছাই করে ছবির পরিচালকদের পুরষ্কৃত করল দফতর। দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজার সঙ্গে সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের নারীর অধিকার ও শিশু সুরক্ষা আয়োগের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী, ট্রান্সজেন্ডার ওয়েলফেয়ার বোর্ডের চেয়ারপার্সন মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়ও।