ভিড় জমবে কবে, মুখ ভার বাজারের

ছোট ব্যবসায়ীরা আঙুল তুলছেন শহরের আনাচকানাচে গজিয়ে ওঠা শপিং মলের দিকে। সারা বছর শপিং মলে এত কেনাকাটার বহর বেড়েছে, পুজো-পার্বণে আর দোকানে ভিড় বাড়ছে না। সঙ্গে আছে অনলাইন কেনাকাটার রমরমা।

Advertisement

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:১৮
Share:

পসরা সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষা। বৃহস্পতিবার, নিউ মার্কেটে। নিজস্ব চিত্র

বাকি নেই আর একটা মাসও। অথচ এখনও ‘উঠছে’ না বাজার। পুজোর আগে কপালে ভাঁজ বাড়ছে ব্যবসায়ীদের। অন্য বার এই সময়ে যেখানে নতুন জামা-জুতো-ব্যাগ-গয়না-প্রসাধনীর জোগান দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারেন না তাঁরা, এ বছর এখনও জমে আছে সামগ্রীর পাহাড়। গড়িয়াহাট থেকে হাতিবাগান, নিউ মার্কেট থেকে যাদবপুর —সর্বত্র একই আক্ষেপ ব্যবসায়ীদের।

Advertisement

যদিও বিভিন্ন বাজারে ভিড় দেখে আপাতদৃষ্টিতে বোঝার উপায় নেই এই পড়তি অবস্থার কথা। কিন্তু ছোট ব্যবসায়ীরা রীতিমতো অসন্তুষ্ট পুজোর মাসের গোড়াতেও বিক্রিবাটার এই হাল দেখে। ‘‘ভিড় যত, বিক্রি মোটেই তত নয়,’’ সরাসরি বলছেন যাদবপুরের এক বস্ত্র ব্যবসায়ী।

কেন এমন হাল বাজারের?

Advertisement

ছোট ব্যবসায়ীরা আঙুল তুলছেন শহরের আনাচকানাচে গজিয়ে ওঠা শপিং মলের দিকে। সারা বছর শপিং মলে এত কেনাকাটার বহর বেড়েছে, পুজো-পার্বণে আর দোকানে ভিড় বাড়ছে না। সঙ্গে আছে অনলাইন কেনাকাটার রমরমা।

দক্ষিণ কলকাতার একটি শপিং মলের ফুডকোর্টে বসেছিলেন কলেজ পড়ুয়াদের দল। আলোচনা চলছিল, কোন ওয়েবসাইটে পমপম শাড়ির ভাল কালেকশন রয়েছে, কোথায় দাম কম, কোন সাইটের জিনিসের মান উন্নত। তবে কি শপিং মলে কেনাকাটা করবেন না?

তাড়াতা়ড়ি উত্তর দিলেন অনীশা। ‘‘এখন সাইটগুলোয় পোশাকের যা বৈচিত্র থাকে, তা কোনও মলেই থাকে না। দামেও বেশ পুষিয়ে যায়।’’ পাশ থেকে তুলিকার ব্যাখ্যা, ‘‘সবচেয়ে বড় কথা, ঘরে বসে হাতে পাওয়া যায় জিনিস। দেখে পছন্দ না-হলে বদলানোর পদ্ধতিও সহজ।’’

অনেকেই মানছেন, এই ঘরে বসে কেনাকাটার বিষয়টি তাঁদের পুজোর বাজার করতে না বেরোনোর অন্যতম কারণ। যেমন খিদিরপুরের চন্দ্রিমা সরকার, পেশায় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। সকাল ন’টায় বেরিয়ে, বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত দশটা। সপ্তাহে একটা দিন ছুটিতে সময় কোথায় কেনাকাটার! অগত্যা ভরসা অনলাইন শপিং।

এই সুবিধাতেই মশগুল আধুনিক প্রজন্ম। যাতায়াতের পথে হোক, বা মাঝরাতে বাড়ি ফিরে। যখন সুবিধা, তখনই পৌঁছে যাওয়া যায় অফুরান সম্ভারের সামনে। কিনেও ফেলা যায় যে কোনও সময়ে। যদি পছন্দ হয়ে যায় অথচ সেই মুহূর্তে কেনা সম্ভব না হয়, তবে তা সেভ করেও রাখা যায় পরে কেনার জন্য। ‘‘এত সব সুবিধা থাকতে কেন নেব না? কেন সময় খরচ করে রোদে-জলে ঘুরব পুজোর বাজার করতে?’’— প্রশ্ন চন্দ্রিমার।

এ বছর পুজো অনেকটা এগিয়ে। ভরা বর্ষায় নাজেহাল শহরবাসী। তাতেও পুজোর বাজার অনেকটাই মার খাচ্ছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। হাতিবাগান এলাকার প্রসাধনী ব্যবসায়ী প্রদীপ শর্মা বললেন, ‘‘বৃষ্টি হলে অনেকেই বেরোতে চান না। আমরাও ভাল ভাবে জিনিস মেলে রাখতে পারি না। এক দিনের বৃষ্টিতে এই ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা বেশি হয়ে দাঁড়ায়।’’

এক দল মানুষ আবার বলছেন, এ বছর পুজোর কেনাকাটা আগে আগে সারা হয়ে গিয়েছে তাঁদের। বাগুইআটির গৃহবধূ তমালিকা পাল বলছিলেন, ‘‘মাসখানেক আগেই বড়সড় ছাড় দিচ্ছিল শহরের প্রায় সমস্ত শপিং মলে। ঘুরে, বেছে, পছন্দ করে সস্তায় তখনই সেরে ফেলেছি পুজোর বাজার।’’ ব্যবসায়ীরা বলছেন, জিএসটি-র কারণেই পুরনো স্টক ক্লিয়ার করতে ঢালাও ছাড় দেওয়া হয়েছে কিছু দিন আগে। সেই সুযোগটাই পুজোর কেনাকাটা হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন অনেকে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এই সময়টায় প্রতি বছর যাঁরা প্রচুর কেনাকাটা করতেন, তাঁরা অনেকটাই সেরে ফেলেছেন কিছু আগে।

সব মিলিয়ে এখনও মুখ ভার বাজারের। ভিড়ে ঠাসা দোকানে, ঘেমেনেয়ে, দরাদরি করে ঢালাও পুজোর বাজার করার সেই চেনা ছবি ফিরবে কি? অপেক্ষায় ব্যবসায়ীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement