ICC ODI World Cup 2023

মুখে পতাকা আঁকা বাংলার বাঘে ভরল ইডেন, তবে দুপুরের উৎসাহ ফিকে সন্ধ্যাতেই

মঙ্গলবার পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা দুই আগে থেকেই গোটা ইডেন চত্বরের দখল নিয়েছিলেন এমন হাজার হাজার বাংলাদেশি সমর্থক।

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:২২
Share:

আনন্দ: বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচের আগে ইডেনের বাইরে বাংলাদেশি সমর্থকদের উচ্ছাস। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

বাঘরঙা ডোরাকাটা পোশাক পরে জনা পাঁচেক বাংলাদেশি। টুপির উপরেও আবার বাঘের প্রতিকৃতি লাগানো। প্রত্যেকের মুখেও ডোরাকাটা রং। বাংলাদেশের পতাকা গায়ে জড়িয়ে ইডেনের ৯ নম্বর গেটের দিকে দৌড়তে দৌড়তেই হঠাৎ ক্যামেরা দেখে থমকে গেলেন। প্রশ্ন করার আগে তাঁদেরই এক জন বলে উঠলেন, ‘‘আজ এটা শুধু খেলা নয়! একটা যুদ্ধ। মাঠের পাশাপাশি গ্যালারি থেকেও হাজার হাজার সমর্থক যুদ্ধ জিততে লড়াই করব।’’

Advertisement

মঙ্গলবার পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা দুই আগে থেকেই গোটা ইডেন চত্বরের দখল নিয়েছিলেন এমন হাজার হাজার বাংলাদেশি সমর্থক। কেউ মুখে পতাকা এঁকে ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ চিৎকার করছেন, কেউ বলছেন ‘জয় বাংলা’। অনেকে প্রিয় তারকার নামে জয়ধ্বনিও দিচ্ছেন। কলকাতার বুকে ইডেন চত্বর যেন এক টুকরো বাংলাদেশ। ঢাকা থেকে খেলা দেখতে শহরে এসেছিলেন কলেজছাত্রী ফারহানা ইয়াসমিন। বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ইডেনের বাইরে ছবি তোলার ফাঁকে বললেন, ‘‘বিশ্বকাপে এ বারের মতো আমাদের আশা শেষ। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচে কোনও হিসেব-নিকেশ নেই। এটা জিততেই হবে।’’

যদিও তাঁদের দুপুরের উৎসাহ অনেকটা ফিকে হল সন্ধ্যা না হতেই। রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানের দুই ওপেনারের দাপুটে ব্যাটিং দেখে অনেক বাংলাদেশি সমর্থক খেলা শেষের আগেই ইডেন থেকে বেরিয়ে আসেন। তাঁদের অধিকাংশই দলের খেলা নিয়ে বিশেষ মন্তব্য করতে চাইলেন না। তবে এক যুবক বললেন, ‘‘এই বিশ্বকাপে আর মনে হয় না দল জিতবে! তা-ও দলের হয়েই গলা ফাটাব। কী করব, দেশ তো!’’

Advertisement

ফারহানার মতো দলের হয়ে গলা ফাটাতে এ দিন ইডেনে এসেছিলেন কয়েক হাজার বাংলাদেশি সমর্থক। কেউ ঢাকা থেকে সোমবার মধ্যরাতে কলকাতায় পৌঁছে, রাতটুকু কাটিয়ে ইডেনে চলে এসেছেন। কেউ আবার গোপালগঞ্জ থেকে এসেছেন মঙ্গলবার সকালে। খুলনা থেকে দুপুর দুপুর কলকাতায় পৌঁছনো আব্দুল সামাদ বললেন, ‘‘শহরে এসে আর হোটেল খোঁজার সময় পাইনি। আগে শহরে আসা এক বন্ধুর ঘরে ব্যাগটা রেখেই মাঠে চলে এসেছি। পাকিস্তান ছন্দে নেই। আমাদের টিমও খারাপ খেলছে। তবে মন বলছে, আজ জয় আমাদের।’’

দুপুরের পরে গোটা ইডেন চত্বর চলে যায় বাংলাদেশের সমর্থকদের হাতে। পাকিস্তানের সমর্থক চোখে পড়ল হাতে গোনা। যে দু’-এক জনকে দেখা গেল, তাঁরাও ঝক্কি না নিয়ে সোজা স্টেডিয়ামের ভিতরে ঢুকে গেলেন। ভারতের জার্সি গায়েও অনেককে দেখা গেল ইডেন চত্বরে ঘোরাঘুরি করতে। তাঁদের অনেকে জানালেন, বাংলাদেশের হয়ে গলা ফাটাবেন। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক বঙ্কিম ঢালি বললেন, ‘‘কেন সমর্থন করবে না বলুন তো? দু’দেশের সব কিছুই তো এক। আর এই দেশটা তো আমরা যখনই বিপদে পড়েছি, সমর্থন করেছে।’’ তবে বিরাটের জার্সি গায়ে আকাশবাণীর দিকে হেঁটে যাওয়া বাঘা যতীনের শীর্ষেন্দু ঘটক অবশ্য বললেন, ‘‘পরের দিনের ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের টিকিট আছে। আজ শুধু মজা করতে এসেছি। ৫ তারিখের ‘ড্রেস রিহার্সাল’টা আজই সেরে রাখলাম। পরের দিন তো আসল খেলা।’’

একই ভাবে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের নিরাপত্তার ‘ড্রেস রিহার্সাল’ও এ দিন সেরে রাখল কলকাতা পুলিশ। এ দিন ম্যাচ ঘিরে গোটা চত্বরকে কার্যত দুর্গে পরিণত করেছিল পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, বিশ্বকাপের এই ম্যাচ ঘিরে ইডেন চত্বরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল। পুলিশের নজর এড়িয়ে কেউ স্টেডিয়ামে ঢোকার চেষ্টা করলেই দৌড়ে এসে তাঁকে আটকাতেও দেখা গেল। লালবাজারের ছোট-বড় কর্তাদের দেখা গেল, বার বার তদারকি করতে। ছিলেন যুগ্ম নগরপাল (সদর) সন্তোষ পাণ্ডেও। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘এই ম্যাচে ইডেনের আসন ফাঁকা থাকলেও ভারতের ম্যাচে থাকবে না। ওই ম্যাচের নিরাপত্তা জোরদার করাটাই অন্যতম চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে। এই ম্যাচে তুলনায় দর্শক সংখ্যা কম, তবু নিরাপত্তা ব্যবস্থা একই রাখা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement