প্রয়াত হলেন আইনজীবী এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞ সমরাদিত্য ওরফে বাচ্চু পাল। ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ জীবনে বহু মামলা তিনি লড়েছেন। কখনও জিতেছেন, কখনও বা হেরেছেন। এমনকি, মামলার রায়ের পর যুযুধান দু’পক্ষের কাছে যৌথ ভাবে ‘বাংলার উন্নয়নে শামিল হওয়ার জন্য’ আবেদন জানাতেও শোনা গিয়েছে তাঁকে!
প্রবীণ সেই আইনজীবী তথা সংবিধান বিশেষজ্ঞ সমরাদিত্য পাল বৃহস্পতিবার প্রয়াত হয়েছেন। বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। পরিবার সূত্রে খবর, বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন প্রবীণ আইনজীবী। বৃহস্পতিবার ভোরে নিউ আলিপুরের বাড়িতে মৃত্যু হয় তাঁর। আদালত এবং আইনজীবী মহলে ‘বাচ্চু’ নামেই পরিচিতি ছিলেন ব্যারিস্টার সমরাদিত্য। আইন ব্যবসার পাশাপাশি আইন সংক্রান্ত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বইও লিখেছেন তিনি।
আইনগত বুৎপত্তির পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এসেছে তাঁর জীবনচর্চার আদর্শও । নব্বইয়ের দশকে তাঁর স্ত্রী বিচাপতি রুমা পাল কলকাতা হাই কোর্টে নিযুক্ত হয়েছিলেন। দীর্ঘ সময়ে প্রকাশ্য কোনও অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি দু’জনকে। পরে বিচারপতি রুমা পাল সুপ্রিম কোর্টেও পদোন্নতি পেয়েছিলেন।
২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে বিপুল জয়ের পরে বিধানসভায় ‘সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন এবং উন্নয়ন বিল’ এনে অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দিতে সক্রিয় হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আইনের বিরুদ্ধে টাটা মোটরসের তরফে মামলা লড়েছিলেন সমরাদিত্য। রায়ের পরে ব্যতিক্রমী পথে হেঁটে যুযুধান দু’পক্ষের কাছে আলোচনায় বসার আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘‘বাংলার উন্নয়নের স্বার্থে সিঙ্গুরে টাটাকে কারখানা গড়তে দেওয়া হোক।’’ শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাঁর স্বপ্নপূরণ হয়নি।
২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে বিতর্কের সময় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী হিসাবে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেছিলেন সমরাদিত্য। তাঁর যুক্তি মেনেই রাজ্য সরকারকে পঞ্চায়েত ভোটের দিন না পিছোনোর নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাতেও রাজ্যের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আদালতে শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। হলদিয়া বন্দরে পণ্য খালাসকারী সংস্থা এবিজি-কে নিয়ে বিতর্ক সংক্রান্ত মামলাতেও সমরাদিত্যের গুরুত্বপূর্ণ সওয়াল খবরের শিরোনামে এসেছিল।