যেমন খুশি: ধর্মতলায় জ়েব্রা ক্রসিং এড়িয়েই রাস্তা পারাপারে ব্যস্ত পথচারীরা। ছবি: রণজিৎ নন্দী
জ়েব্রা ক্রসিং ছেড়ে যেমন খুশি হেঁটে রাস্তা পেরোতে গিয়ে গাড়ি বা মোটরবাইকের সামনে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটালে চালককে নয়, কাঠগড়ায় তোলা হতে পারে পথচারীকেই! মোটরবাইকের ধাক্কায় মৃত্যুর একটি ঘটনায় সম্প্রতি পথচারীকেই জ়েব্রা ক্রসিং ব্যবহার না করার জন্য দায়ী ঘোষণা করেছে মুম্বইয়ের আদালত। এর পরে তাই প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতার নাগরিকেরা এ ব্যাপারে আদৌ সচেতন তো? জ়েব্রা ক্রসিং না মানার বিধিভঙ্গ রুখতে কতটা তৎপর পুলিশ?
পুলিশ সূত্রে পাওয়া দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান এবং কলকাতার পথের চিত্র যথেষ্ট উদ্বেগের। অভিযোগ, শহরের বহু জায়গায় জ়েব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পেরোনোর বালাই নেই। সিগন্যাল মেনে রাস্তা পারাপারের সতর্কতাও দেখা যায় না বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। এর জেরেই গত ছ’মাসে প্রায় সাড়ে চার হাজার পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। এ বারের পুজোর মরসুমেও যেমন খুশি রাস্তা পারাপারের এই ঝোঁক ট্র্যাফিক পুলিশের অন্যতম চিন্তার কারণ। গড়িয়াহাট-হাতিবাগানের মতো বাজার এলাকায় ফুটপাত গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দিলেও পথচারীদের একাংশ বিধি মানছেন না বলে অভিযোগ।
শহরের পথচারীদের একটি বড় অংশ আবার পাল্টা দায়ী করছেন গাড়িচালকদের অসচেতনতাকে। অভিযোগ, এ শহরের প্রায় কোনও রাস্তার জ়েব্রা ক্রসিং পথচারীদের জন্য ছাড়া থাকে না। এ নিয়ে পুলিশি নজরদারিও তেমন থাকে না বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
কিছু দিন আগে এমনই এক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক আয়ার। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, ‘‘আর জি করের সামনে জ়েব্রা ক্রসিং তো বোঝাই যায় না। এখন ওই রাস্তায় গাড়ির চাপ এতটাই যে, কখন গাড়ি থামিয়ে পথচারীদের পারাপারের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে তার কোনও ঠিক থাকে না। তাই তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বিপদের মুখে পড়েন অনেকেই।’’
পুলিশ সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, কলকাতা পুলিশের নিজস্ব ‘রোড মার্কিং সেকশন’ (আরএমএস) রয়েছে। এক জন ওসি এবং অতিরিক্ত ওসির নেতৃত্বে সেই বিভাগে কাজ হয়। ট্র্যাফিক সংক্রান্ত পথ-বিধি কার্যকর করার পাশাপাশি, ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেসের উল্লিখিত বিধি বলবৎ করার দায়িত্বও রয়েছে এই বিভাগের কাঁধে। দরপত্র ডেকে যে কোনও রাস্তার ‘ক্রসওভার’-এ জ়েব্রা ক্রসিং আঁকা এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর তার পরিচর্যার বিষয়টিও দেখে এই বিভাগ। এর পাশাপাশি রয়েছে জ়েব্রা ক্রসিং ভঙ্গের কড়া আইন। পুলিশ সূত্রের খবর, গাড়ি বা মোটরবাইকের বিরুদ্ধে ‘স্টপ লাইন’ লঙ্ঘন এবং ‘সেন্টার লাইন’ লঙ্ঘন করার অপরাধে পশ্চিমবঙ্গ মোটরযান আইনের যথাক্রমে ৩০১ ও ৩১৬ (৩) নম্বর ধারায় মামলা করা যায়। দু’টি ক্ষেত্রেই মোটরযান আইনের ১৭৭ নম্বর ‘পেনাল অ্যাক্ট’-এ ১০০ টাকা জরিমানা হতে পারে। পরবর্তী কালে একই অপরাধে মামলা হলে জরিমানা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০০ টাকা। কিন্তু তা সত্ত্বেও হুঁশ ফেরে না কারও। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, ‘‘এত কম টাকা জরিমানা বলেই হয়তো হুঁশ হয় না। মুম্বইয়ের আদালতের মতো এমন কড়া রায় আরও বেরোলে হয়তো জনতার হুঁশ ফিরতে পারে।’’
লালবাজার অবশ্য এখনও জোর দিচ্ছে গাড়িচালক বা পথচারীদের সচেতনতার উপরেই। যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তা বললেন, ‘‘কোথায় কোথায় জ়েব্রা ক্রসিং মানা হচ্ছে না, সেটা দেখার জন্য শহরের প্রতিটি মোড়ে তো আর লোক রাখা সম্ভব নয়! তবু কড়া হাতেই মামলা করা হয়। এ ব্যাপারে গাড়িচালক আর পথচারী, উভয়কেই সতর্ক হতে হবে। আমাদের সচেতনতা প্রচার চলছে।’’