অপরিচ্ছন্নতার মাপকাঠির নিরিখে শিয়ালদহ স্টেশনের অবস্থানের বিশেষ কিছুই পরিবর্তন হয়নি।
‘কোনও সন্দেহ নেই যে হাওড়া স্টেশন অত্যন্ত ব্যস্ত এবং সারা দেশের অগুনতি যাত্রী প্রতিদিন এখান দিয়ে যাতায়াত করেন। কিন্তু এটাও ঠিক যে শিয়ালদহও অন্যতম ব্যস্ত এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন।’— বছর চারেক আগে হাওড়া স্টেশনের অপরিচ্ছন্নতা নিয়ে দায়ের হওয়া মামলা প্রসঙ্গে এমনটাই মন্তব্য করেছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত।
এই মন্তব্যের উপরে ভিত্তি করেই রেল (পূর্ব রেলওয়ে) এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে জাতীয় পরিবেশ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল হাওড়া স্টেশনের মতোই শিয়ালদহ স্টেশনের পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে দেখে রিপোর্ট জমা করতে। নথি বলছে, এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। তার পর থেকে
আরও আট বার মামলাটি আদালতে উঠেছে। কিন্তু রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সাম্প্রতিকতম রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, অপরিচ্ছন্নতার মাপকাঠির নিরিখে শিয়ালদহ স্টেশনের অবস্থানের বিশেষ কিছুই পরিবর্তন হয়নি।
ঘটনাপ্রবাহ বলছে, সংশ্লিষ্ট মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে পর্ষদের তরফে গত ২৫ ও ৩১ অগস্ট যথাক্রমে হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনে দেখা যায়, জৈব বর্জ্য, প্লাস্টিক বর্জ্য, প্লাস্টিকের বোতল থেকে শুরু করে অন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রেলওয়ে ট্র্যাক পরিচ্ছন্নতা, অ্যাফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি), বায়ো টয়লেট-সহ একাধিক ক্ষেত্রেই অতীতের অনুজ্জ্বল ‘পারফর্ম্যান্স’-এর বৃত্ত থেকে হাওড়া স্টেশন অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে।
কিন্তু শিয়ালদহ রয়েছে সেই শিয়ালদহেই! কারণ, প্লাস্টিক বোতল দুমড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট যন্ত্র (প্লাস্টিক ক্রাশিং মেশিন) থাকলেও অন্যান্য প্লাস্টিক বর্জ্য রেলওয়ে ট্র্যাকে ছড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। যেগুলির গন্তব্য হয় কাগজকুড়ানির ঝোলায়। রিপোর্ট এও বলছে, ২০১৬ সালের প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী, এই জাতীয় বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কোনও ব্যবস্থাই নেই (‘নো সিস্টেম ফর ডিসপোজাল ফর প্লাস্টিক ওয়েস্ট’)। রেলওয়ে ট্র্যাকের উপরে পিচ্ছিল তেলও (লুব্রিক্যান্ট অয়েল) পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে।
সাময়িক ভাবে ট্র্যাকে তেল পড়া আটকাতে ধাতব ট্রে ব্যবহার করা হলেও তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্ট মামলার আবেদনকারী, পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তাঁর কথায়, ‘‘এমনকি, সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল বসানোর নির্দেশও পালন করা হয়নি। নিকাশি বর্জ্য পরিশোধন প্লান্ট তৈরির জমি রয়েছে, কিন্তু সে কাজ শুরুই হয়নি!’’ এই পরিস্থিতিতে আজ, সোমবার জাতীয় পরিবেশ আদালতে সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানি হওয়ার কথা।
অথচ রেলেরই তথ্য বলছে, প্রতিদিন শিয়ালদহ স্টেশনে প্রায় ১২ লক্ষ যাত্রীর পা পড়ে। যার মধ্যে ১ লক্ষ ৩০ হাজার যাত্রী আসেন রাজ্যের বাইরে থেকে। যে পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে পরিবেশবিদদের একাংশ রেলের ভাবমূর্তি এবং স্বচ্ছতা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের যাবতীয় প্রচারের বাস্তবতা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন। এ প্রসঙ্গে রেল স্টেশনে লঙ্ঘিত পরিবেশবিধি নিয়ে অতীতে পরিবেশ আদালতের একটি মন্তব্যের কথাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। যেখানে আদালত বলেছিল,—‘দেশের বৃহত্তম মন্ত্রকের (রেল মন্ত্রকের) এই সব অবৈধ কাজকর্ম খুব কম করে বললেও যথেষ্ট বিরক্তিকর।’