n সানন্দে: শিয়ালদহগামী প্রথম মেট্রোয় বনবিতানের প্রাতর্ভ্রমণকারীরা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
‘আমরা করব জয়, আমরা করব জয়/ আমরা এক দিন মেট্রো চেপে হাওড়া যাব নিশ্চয়ই’।
শিয়ালদহগামী সকাল ৭টার প্রথম মেট্রো সেক্টর ফাইভ স্টেশন ছাড়তেই কামরায় গোল হয়ে দাঁড়িয়ে গানটি ধরেছিলেন ওঁরা। সকলেই ষাটোর্ধ্ব, চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন কয়েক বছর আগেই। প্রতিদিন ভোরে সল্টলেকের বনবিতান গন্তব্য থাকে ওঁদের। বৃহস্পতিবার সকালে অবশ্য সেই রুটিনে স্বেচ্ছায় বদল এনেছিলেন প্রশান্তচন্দ্র ঘোষ, অরিন্দম রায়, অমর বর্ধন, কালীপদ সরকার, সমীরণ চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জীবকুমার ঘোষেরা। বনবিতানে সকালের হাঁটাহাঁটির বদলে এ দিন তাঁরা চেপে বসলেন ইস্ট-ওয়েস্টের শিয়ালদহগামী প্রথম ট্রেনে। বললেন, ‘‘এমন ঐতিহাসিক দিনে বনবিতান নয়, মেট্রোয় শিয়ালদহই প্রথম গন্তব্য।’’
ট্রেন ছাড়ার আগে সহযাত্রীদের চকলেট দিয়ে ‘মিষ্টিমুখ’ করালেন ওই প্রাতর্ভ্রমণকারীরা। আর ট্রেন ছাড়তেই শুরু হল গান। তারই ফাঁকে সঞ্জীববাবু বললেন, “আজকের সকালটাই অন্য রকম। অন্য দিনহাঁটাহাঁটির পরে পাড়ার দোকানে চা খেয়ে বাড়ি যাই। আর এখন তো মেট্রো চালু হয়ে যাওয়ায় পাশেই শিয়ালদহ, ২০ মিনিটে পৌঁছে যাব। তাই ঠিক করলাম, সকালের প্রথম চা-টা শিয়ালদহেই হোক।” শুধুই চা? পাশ থেকে সমীরণবাবুর মন্তব্য, “সকালের কচুরি-জিলিপিটাও শিয়ালদহের কোনও দোকানেই খাব আজ। তার পরে সোজা কোলে মার্কেট। শিয়ালদহের আনাজের বাজার তো বেশ সস্তা।” শুনে হাসির রোল যাত্রীদের মধ্যে।
সেক্টর ফাইভ থেকে করুণাময়ী, সেন্ট্রাল পার্ক পেরিয়ে ট্রেন ক্রমশ এগিয়ে চলেছে শিয়ালদহের দিকে। সল্টলেকের ইই ব্লকের বাসিন্দা, বয়স্ক ওই প্রাতর্ভ্রমণকারীদের চোখে-মুখে তখন রোমাঞ্চের ছটা। কামরার ফাঁকা আসনে বসতে নারাজ তাঁরা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই সঞ্জীববাবু বললেন, “বাসে ভিড়, অটোয় উঠলে অনেক বার পাল্টে তবে শিয়ালদহে পৌঁছতে হয়। অ্যাপ-ক্যাবে ভাড়া বেশি। তাই ইচ্ছে থাকলেও শিয়ালদহে যাওয়া হত না। আর এখন তো হাত বাড়ালেই শিয়ালদহ। মেট্রো চালু হওয়ায় শুধু সময়ই নয়, টাকারও সাশ্রয় হল। অনেক দিন ধরে এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।” আর অরিন্দমবাবুর প্রতিক্রিয়া, “সেক্টর ফাইভ থেকে ফুলবাগানগামী প্রথম মেট্রোতেও চেপেছিলাম আমরা। মেট্রোর রুট যত বাড়ছে, শহর যেন ততই ছোট হয়ে আসছে।”
এ দিন শিয়ালদহগামী প্রথম ট্রেনে অবশ্য ভিড় তেমন বেশি ছিল না। সল্টলেকের লেডি কুইন অব দ্য মিশনের এক ছাত্রীকে নিয়ে মেট্রোয় চেপেছিলেন মা পায়েল চৌধুরী। বললেন, “মেয়ে স্কুলবাসে করে স্কুলে যায়। আজ মেট্রো করে শিয়ালদহে ঘুরতে যাচ্ছে, তার পরে ফিরে এসে স্কুলে যাবে।” লরেটো শিয়ালদহের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী, সল্টলেকের বাসিন্দা অলিভিয়া ঘোষও জানাচ্ছে, মেট্রোর দৌলতে স্কুল এ বার হাতের কাছে।
ফুলবাগান পেরিয়ে প্রথম মেট্রো যখন শিয়ালদহের প্ল্যাটফর্ম ছুঁচ্ছে, ঘড়িতে তখন ৭টা ২০। বনবিতানের প্রাতর্ভ্রমণকারীরা এগোলেন চায়ের দোকানের দিকে। শিয়ালদহ স্টেশনের সাজসজ্জা দেখতে দেখতে অরিন্দমবাবু বলে উঠলেন, “আমাদের বয়স তো ৬০ পেরিয়ে গেল। কারও কারও ৭০ পেরিয়েছে। আমাদের ইচ্ছা, এ বার মেট্রোয় চেপে সল্টলেক থেকে হাওড়া যেতে চাই। সে দিনেও এমন হই হই করেই মেট্রোয় উঠব। দেখে যেতে পারব তো সেই দিনটা?”