গারদঘরে নারদ-নারদ, জখম ১২

প্রথমে বিচারাধীন বন্দিদের কাছে মার খেয়ে পিছু হঠে সাজাপ্রাপ্তেরা। গণ্ডগোল ছড়ায় পাশে রান্নাঘরে। সেখানে সাজাপ্রাপ্তেরাই বেশি সংখ্যায় থাকে। মার খাওয়ার ঘটনা শুনে দু’টি বিল্ডিংয়ের মাঝের ফাঁকা এলাকায় সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা দলে দলে ভিড় করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৭ ০২:২৯
Share:

ক্ষোভ: প্রিজন ভ্যানে উত্তেজিত দমদম জেলের বিচারাধীন বন্দিরা। মঙ্গলবার, বারাসত আদালত চত্বরে। ছবি: সুদীপ ঘোষ

মোবাইল উদ্ধারকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হল দমদম জেলে। দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধল বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের মধ্যে। পরিস্থিতি সামলাতে জেলে দৌড়তে হল কারা দফতরের ডিজি অরুণ গুপ্তকেও। কারা দফতর সূত্রের খবর, সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন বন্দি জখম। এক জনের অবস্থা গুরুতর। হঠাৎ জেলের মধ্যে কী ভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হল, কারা এর সঙ্গে যুক্ত, তা জানতে ডিআইজি নন্দন বড়ুয়াকে তদন্তের নির্দেশ দেন ডিজি।

Advertisement

জেল সূত্রের খবর, সাধারণ ভাবে সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের নজরদারিতে বিচারাধীন বন্দিদের রাখা হয়। বহু দিন ধরেই এটা চলছে। দ্রুত বিচারের দাবিতে বিচারাধীন বন্দিদের একাংশ কয়েক দিন ধরে জেলে অনশন করছিল। এর মধ্যে মঙ্গলবার সকাল আটটা নাগাদ জেলের দু’নম্বর বাড়ির ওয়ার্ডে পাহারায় থাকা সাজাপ্রাপ্ত এক বন্দি বিচারাধীন এক জনের থেকে মোবাইল উদ্ধার করে। তাকে ঘিরেই সাজাপ্রাপ্ত যে সব বন্দি পাহারার দায়িত্বে রয়েছে, তাদের সঙ্গে বিচারাধীন বন্দিদের বচসা শুরু হয়। যা গড়ায় হাতাহাতিতে।

প্রথমে বিচারাধীন বন্দিদের কাছে মার খেয়ে পিছু হঠে সাজাপ্রাপ্তেরা। গণ্ডগোল ছড়ায় পাশে রান্নাঘরে। সেখানে সাজাপ্রাপ্তেরাই বেশি সংখ্যায় থাকে। মার খাওয়ার ঘটনা শুনে দু’টি বিল্ডিংয়ের মাঝের ফাঁকা এলাকায় সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা দলে দলে ভিড় করে। সব মিলিয়ে আড়াইশোরও বেশি বন্দি হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। আশপাশে প়ড়ে থাকা ইট, লাঠিসোটা নিয়ে শুরু হয় লড়াই। অনেকেরই হাত-পা জখম হয়েছে, মাথা ফেটে গিয়েছে।

Advertisement

বেলা সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় মারপিট চলে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে স্থানীয় থানাকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশবাহিনী এবং অতিরিক্ত কারারক্ষীরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। গুরুতর জখম এক বন্দিকে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা করিয়ে তাকে ফের দমদমের জেল হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

দুপুরে ঘটনাস্থলে আসেন কারা দফতরের ডিজি অরুণ গুপ্ত এবং ওই রেঞ্জের ডিআইজি নন্দন বড়ুয়া। জখম বন্দিদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। জেল সূত্রের খবর, রাতে পরিস্থিতি ঠান্ডা হলেও চাপা উত্তেজনা রয়েছে।

জেল সূত্রের খবর, বিচারাধীন বন্দিদের অনেকেরই অভিযোগ, তাদের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে নিজেদের মোবাইল ব্যবহার করতে বাধ্য করে সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা। অভিযোগ রয়েছে জেলের খাবারের মান নিয়েও। যদিও খাবার নিয়ে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে কারা দফতর। তবে মোবাইল নিয়ে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন ডিজি।

এর মধ্যে রাজ্যের মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর অভিযোগ করে বলেছে, বিষয়টি বিচারাধীন বন্দিদের অনশন আন্দোলন ভাঙার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। সংগঠনের পক্ষে রণজিৎ শূর বলেন, ‘‘দমদম জেলে বন্দিদের উপরে লাঠিপেটার ঘটনা নিন্দনীয়। সাজাপ্রাপ্ত দাগি অপরাধীদের দিয়ে বিচারাধীন বন্দিদের আন্দোলন ভাঙতেই জেল-কর্তৃপক্ষ এ কাজ করিয়েছেন।’’ রণজিৎবাবু জানান, আজ, বুধবার পুরে ঘটনা দেখতে এপিডিআর-এর একটি প্রতিনিধিদল দমদম জেলে যাবে।

এ দিনই আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে মাদক পাচার করতে গিয়ে দেবব্রত সেন নামের এক রক্ষী ধরা পড়েছেন। তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement