ফাইল চিত্র।
শুধু যে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্যই টেস্টের ব্যবস্থা হয়েছে, তা নয়। অতিমারির কারণে আবার যদি চূড়ান্ত পরীক্ষার যাবতীয় আয়োজন ব্যর্থ হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে টেস্টের নম্বরই মূল্যায়নের ভিত্তি হয়ে উঠবে। তাই টেস্ট নেওয়া এবং দেওয়া জরুরি বলে শিক্ষা শিবিরের পর্যবেক্ষণ। তা সত্ত্বেও বেশ কিছু পড়ুয়া টেস্টে বসেনি বা বসছে না বলে জানাচ্ছেন শিক্ষকেরা। প্রায় সব স্কুলেই মাধ্যমিকের টেস্ট শেষ। উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টও শেষ হয়ে যাবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে। প্রশ্ন উঠছে, যারা টেস্ট দিল না বা দিলেও তাতে ভাল ফল করল না, তাদের কি মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকে বসতে দেওয়া হবে?
এই বিষয়ে শিক্ষা দফতর এখনও পর্যন্ত কোনও বিজ্ঞপ্তি দেয়নি। তবে কোনও পড়ুয়া টেস্ট না-দিলে তাকে উচ্চ মাধ্যমিকে বসতে দেওয়া হবে কি না, সেই বিষয়ে স্কুলই সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য।
সংসদ-প্রধান বলেন, “করোনা পরিস্থিতির কারণে যদি ফাইনাল পরীক্ষা না-হয়, তখন টেস্টের নম্বর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এখন যারা টেস্ট দিচ্ছে না, তখন সেই সব পরীক্ষার্থীর মূল্যায়ন কী ভাবে হবে, তা বলা মুশকিল। তাই আমরা এ বার স্কুলে টেস্ট নেওয়ার উপরেই জোর দিয়েছি। পড়ুয়াদেরও টেস্ট দিতে বলেছি বার বার।” কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, সংসদকর্তা বলার পরেও, বার বার টেস্ট সম্পর্কে শিক্ষকেরা সচেতন করা সত্ত্বেও অনেক ছাত্রছাত্রী টেস্টে বসেনি। অন্য দিকে, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মাধ্যমিক পরীক্ষা যে হচ্ছেই, সেই বিষয়ে তিনি আশাবাদী।
হাওড়ার ডোমজুড়ের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর দাস জানান, দশম শ্রেণির ১৭২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে টেস্ট দিয়েছে ১৩৬ জন। দ্বাদশে ৯৯ জনের মধ্যে ৯৫ জন টেস্টে বসেছে। নদিয়ার শিকারপুর গ্রামের একটি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রমা মণ্ডল জানাচ্ছেন, দশম শ্রেণির ২১৯ জনের মধ্যে ১৮৪ জন এবং দ্বাদশের ৮৬ জনের মধ্যে ৬৬ জন টেস্ট দিচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক পঞ্চানন ময়রা জানান, দশমে ৪৭ জনের মধ্যে টেস্টে বসেছে ৩৫ জন। দ্বাদশে ৩০ জনের মধ্যে ২৩ জন টেস্ট দিচ্ছে।
টেস্ট-বিমুখতা শুধু গ্রামাঞ্চলেই নয়। কলকাতার কিছু স্কুলেও অনেক ছাত্রছাত্রী টেস্টে অনুপস্থিত বলে জানা যাচ্ছে। কেষ্টপুরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নাজ়রিন নাহার জানাচ্ছেন, দশম শ্রেণির ২৫৩ জনের মধ্যে টেস্ট দিয়েছে ২৩৫ জন। দ্বাদশে ২০২ জনের মধ্যে ১৯২ জন টেস্টে বসেছে।
করোনার নয়া স্ট্রেন ওমিক্রনের কথা ভেবেই টেস্টে বসার জন্য তাঁরা বার বার আবেদন করেছিলেন বলে জানাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা। দীপঙ্করবাবু বলেন, “যে-ভাবে বিদেশে, বিশেষ করে ইউরোপে ওমিক্রন ছড়াচ্ছে, সেটা খুবই চিন্তার। দেখা গিয়েছে, ইউরোপে করোনা সংক্রমণের কোনও ঢেউ আসার মাস কয়েক পরে এ দেশে আসে। অতএব ফেব্রুয়ারি-মার্চে ওমিক্রনের সংক্রমণ বাড়বে কি না, জানি না। তাই আবার মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা না-হলে এই টেস্টের মূল্যায়ন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এটা সব পরীক্ষার্থী বুঝল না।’’
এ বারে টেস্টের বাড়তি গুরুত্বের কথা তাঁরা কিছু বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বলে এসেছেন, জানাচ্ছেন রমা ও নাজ়রিন। নাজ়রিন বলেন, “পরীক্ষার্থীদের বাড়িতে পার্শ্ব শিক্ষকদের পাঠানো হয়েছে। তবু সব পরীক্ষার্থী টেস্টে বসল না।’’ পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, “মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা না-হলে টেস্টের নম্বর যে খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, অনেক পড়ুয়া ও অভিভাবকই সেটা বুঝতে পারল না।”