n ঘেঁষাঘেঁষি: স্কুল ছুটির পরে সামাজিক দূরত্বের বালাই না রেখেই ভিড় পড়ুয়াদের। ছবি: সুমন বল্লভ।
ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো কি এখনই ঠিক হবে? না কি করোনা পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হয়, তা দেখে নিয়ে স্কুলে পাঠানো উচিত? এ নিয়েই এখন দোটানায় অভিভাবকেরা। অন্য দিকে, দুশ্চিন্তা কাটছে না স্কুল কর্তৃপক্ষেরও। তাঁদের ভয়, স্কুলে এসে ছাত্রছাত্রী বা শিক্ষকেরা আবার কোভিডে আক্রান্ত হবেন না তো? বিভিন্ন জায়গা থেকেই পড়ুয়া ও শিক্ষকদের মধ্যে সংক্রমণের খবর আসছে। সেই কারণে নতুন নতুন কিছু সাবধানতা অবলম্বন করার পথে হাঁটছে শহরের বেশ কিছু স্কুল।
নতুন করে সংক্রমণ ছড়ানোয় কেরল ও মহারাষ্ট্রে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বেশ কিছু স্কুল। হরিয়ানার একটি স্কুলেও বেশ কয়েক জন পড়ুয়ার মধ্যে করোনা সংক্রমণের কথা শোনা গিয়েছে। এই রাজ্যেও দু’টি স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। এই অবস্থায় ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন অভিভাবকদের অনেকেই।
সাউথ পয়েন্ট স্কুলের পড়ুয়াদের কয়েক জন অভিভাবকের মতে, তাঁদের প্রধান ভয় গণপরিবহণকে। সন্তানকে বাসে-ট্রামে বা মেট্রোয় চড়াতে সাহস পাচ্ছেন না তাঁরা। ওই অভিভাবকদের অভিযোগ, রাস্তাঘাটে, এমনকি বাসেও অনেকে মাস্ক পরছেন না। মেট্রোতেও দূরত্ব-বিধি মেনে চলার কোনও বালাই নেই।
হেয়ার স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকদের একাংশের মতে, তাঁদের ছেলেমেয়েরা যে একেবারে বাইরে বেরোচ্ছে না, তা নয়। তবে স্কুলের মতো নিয়মিত তো কোথাও যেতে হয় না। তাই তাঁরা চান, সামনের গ্রীষ্মের ছুটি পর্যন্ত অনলাইন ক্লাসের সুযোগ দেওয়া হোক।
অভিভাবকদের এই দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে বেশ কয়েকটি স্কুল অনলাইন ক্লাস বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। ‘গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড মাল্টিপারপাস স্কুল ফর বয়েজ, টাকি হাউস’-এর প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা বসাক বললেন, “স্কুল চত্বর নিয়মিত ভাবে স্যানিটাইজ় করা থেকে শুরু করে থার্মাল গান দিয়ে পরীক্ষা— সবই চলছে ঠিক মতো। স্কুলে আসার জন্য কাউকে জোর করছি না। এমনকি, টিফিন পিরিয়ডেও এক জন শিক্ষক ক্লাসে বসে থাকছেন।” স্বাগতা জানান, কয়েকটি ক্লাসরুমে ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যাতে অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও একই ক্লাস করতে পারে পড়ুয়ারা। হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত জানালেন, আগামী ৮ মার্চ থেকে স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা শুরু হবে। মিড-ডে মিলও বিতরণ হবে ৮ তারিখ থেকে। তাই তাঁরা ৮ তারিখ থেকে কয়েক দিন স্কুলে নবম থেকে একাদশ শ্রেণির পঠনপাঠন বন্ধ রাখছেন। শুধু অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শুভ্রজিৎবাবু বলেন, “ছুটির দিনগুলিতে আবার গোটা স্কুল স্যানিটাইজ় করা হবে। স্কুলের অনলাইন ক্লাসও বাড়ানো হবে। পড়ুয়াদের বার বার বলা হচ্ছে, স্কুলের বাইরে এবং স্কুল থেকে ফেরার সময়েও তারা যেন মাস্ক পরে থাকে।”
শিক্ষকদের এই সতর্কবাণী যে সব পড়ুয়ার কানে ঢুকছে, এমনটা কিন্তু নয়। কলেজ স্ট্রিট চত্বরে কিছু স্কুলপড়ুয়াকে দেখা গেল, মাস্ক ছাড়াই দলবদ্ধ ভাবে বাড়ি ফিরছে তারা। মাস্ক খোলা কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তাদের যুক্তি, স্কুলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাস্ক পরে থাকতে হয়। তাই রাস্তায় বেরিয়ে একটু ‘হাঁফ ছাড়তেই’ মাস্ক চলে গিয়েছে পকেটে।
এই সামান্য অসতর্কতার কারণে যে বড় ধরনের মাসুল গুনতে হতে পারে, সে ব্যাপারে বার বারই পড়ুয়াদের সতর্ক করা হয়েছে বলে জানালেন স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিভাস সান্যাল। তিনি বললেন, “আমরা ছেলেদের বলেছি, বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত মাস্ক খোলা যাবে না। স্কুলে এসে শারীরিক কোনও অস্বস্তি হলে তা-ও সঙ্গে সঙ্গে জানাতে বলেছি।”
কসবার চিত্তরঞ্জন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় বললেন, “স্কুলে এখন অনলাইন ক্লাস বাড়ানো হয়েছে। আমাদের এখানে যে শিক্ষিকার করোনা হয়েছিল, উনি কিন্তু জ্বর হওয়া মাত্রই স্কুলে না এসে করোনা পরীক্ষা করিয়েছিলেন। এই সচেতনতা খুব দরকার। আমরা তাই শিক্ষক ও পড়ুয়া, সবাইকেই বলেছি, অসুস্থতা লুকিয়ে কেউ যেন স্কুলে না আসেন।”