প্রতীকী ছবি।
সাড়ে তিন মাসের অসুস্থ বোনকে কোলে নিয়ে সাত বছরের এক শিশু বসে রয়েছে বহির্বিভাগের মেঝেয়। তাদের মা শবনম পারভিন দীর্ঘক্ষণ বহির্বিভাগের ওষুধের কাউন্টারে লাইনে দাঁড়ানোর পরে যখন সামনে পৌঁছে প্রেসক্রিপশন এগিয়ে দিলেন, তখন জানানো হল, ওষুধ বা শিশুদের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশনও হাসপাতালে নেই। অভিযোগ, সব ওষুধ বাইরের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে সেখান থেকেই কিনে আনতে বলা হয় তাঁকে।
রাজ্যের বহু সরকারি হাসপাতালেই টাকার অভাবে ওষুধের ভাঁড়ারে টান পড়েছে। একই ছবি দেখা গেল হাওড়া জেলা হাসপাতালেও। বহির্বিভাগের ফার্মাসিস্টের কথা শুনে হতাশ হয়ে শবনম বললেন, ‘‘এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে আসছি। মেয়েটার বুকে সর্দি জমে গিয়েছে। এত দিন ওষুধ বাইরে থেকে কিনে দিয়েছি। এখন দামি অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন দিয়েছেন ডাক্তার। কিন্তু হাসপাতালে ওই ইঞ্জেকশন নেই। আমার কাছে অত টাকাও নেই। কী করব, জানি না!’’
শুধু শবনম নন, একই অবস্থা হাওড়া জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা বাবলু মল্লিক, তাপস দাস বা মৃগাঙ্ক মণ্ডলদের। অভিযোগ, সকলকেই ওষুধের কাউন্টারে এসে শুনতে হয়েছে, ওষুধের সরবরাহ নেই। কিনতে হবে বাইরের দোকান থেকেই। হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, হাওড়ার অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে গত কয়েক মাস ধরে ওষুধ মিলছে না। বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে গিয়ে হয়রান হচ্ছেন বেশির ভাগ মানুষ।
হাওড়া জেলা হাসপাতাল থেকে জানা গিয়েছে, এমন অবস্থা চলছে এক মাসের বেশি সময় ধরে। ডিস্ট্রিক্ট রিজ়ার্ভ স্টোর্স বা ডিআরএসে ওষুধের ভান্ডার প্রায় ফাঁকা। জীবনদায়ী দামি ওষুধ বা ইঞ্জেকশন তো বটেই, পাওয়া যাচ্ছে না প্যারাসিটামল, অ্যান্টাসিড বা অ্যান্টিবায়োটিকও। অভিযোগ, রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও বাইরে থেকে ওষুধ, ইঞ্জেকশন কিনে দিতে হচ্ছে। এমনকি, হাসপাতালে নেই কুকুর কামড়ানোর চিকিৎসার অ্যান্টি রেবিস সিরাম বা এআরএস।
কেন এমন অবস্থা? জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ কর্তা জানান, সমস্ত সরকারি হাসপাতাল ওষুধ পায় একটি অ্যাপ স্টোর ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে। অনলাইনে অর্ডার দিতে হয়। তার পরে ভেন্ডরেরা ওষুধ সরবরাহ করেন। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে অর্ডার দেওয়ার পরে টাকা ফিরে আসছে, কিন্তু ওষুধ সংস্থাগুলি ওষুধ দিচ্ছে না। ওই কর্তার বক্তব্য, ‘‘সংস্থাগুলি জানিয়ে দিয়েছে, সরকারের কাছে কোটি কোটি টাকা বকেয়া আছে। সেই টাকা না পেলে ওষুধ সরবরাহ করা সম্ভব নয়।’’