দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে আগামী কাল, মঙ্গলবার থেকে রাজ্যে খুলছে স্কুল। তার আগে পড়ুয়াদের যাতায়াতের জন্য পুলকারগুলিকে উপযোগী করে তোলার জন্য নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। কিন্তু প্রায় দু’বছর ধরে পরিষেবা বন্ধ থাকার পরে এই অল্প সময়ের মধ্যে কী ভাবে ওই নির্দেশ কার্যকর করা যাবে, তা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে।
সরকারি ভাবে গত ৯ নভেম্বর পুলকার এবং চুক্তিভিত্তিক পরিবহণের আওতায় থাকা স্কুলবাস সংগঠনকে ওই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্কুল খোলার আগে, সপ্তাহ খানেকেরও কম সময়ের মধ্যে গাড়িগুলিতে ছোটখাটো মেরামতির বেশি আর কিছু করা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন পুলকার চালক ও মালিকেরা। তাতে গাড়ি সচল হলেও সুরক্ষা-বিধি আদৌ মানা যাবে কি না, সেই আশঙ্কা থাকছেই। সে ক্ষেত্রে কার্যত গাড়ির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শংসাপত্র ছাড়াই পথে নামবে বেশিরভাগ পুলকার এবং স্কুলবাস।
অতিমারির সময়ে দীর্ঘ দু’বছর স্কুল বন্ধ থাকায় পুলকার মালিকদের আয় তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। কিছু নামীদামী স্কুল ছাড়া স্কুলবাস মালিকদের আয়ের অবস্থাও তথৈবচ। ফলে আয় না থাকায় বেশির ভাগ গাড়ির পথকর থেকে বিমা সবই বাকি থেকে গিয়েছে। রাজ্য সরকার পথকরে দু’দফায় এক বছরের টাকা ছাড় দিলেও অধিকাংশ গাড়িরই বিমার কিস্তি বকেয়া রয়েছে। প্রায় ৩৫-৩৬ হাজার টাকা খরচ করে এখনই বিমা করা সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন পুলকার মালিকেরা। পথকর এবং বিমার খরচ মিটিয়ে গাড়ির জরুরি সংস্কার করতে গেলে পুলকারপিছু ৭০-৮০ হাজার টাকা করে খরচ করতে হবে, যা কার্যত অসম্ভব। এই বিপুল খরচ সামলে পথে নামার আগে গাড়ির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শংসাপত্র আদায় করাও তাই প্রায় অসম্ভব। শংসাপত্র ছাড়া পথে নেমে কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে সে ক্ষেত্রেও নানা আইনি জটিলতা দেখা দেবে।
পুলকার মালিকদের অভিযোগ, স্কুল বন্ধ থাকার সময়ে পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা কেউই প্রায় কোনও খোঁজ রাখেননি। বার বার আবেদন করলেও ন্যূনতম ভাড়াটুকুও দেননি। এ বার ফের স্কুল খোলার সরকারি নির্দেশের পরে দু’-এক জন অভিভাবক ফের পুলকারের খোঁজ করছেন। কিন্তু অন্যেরা কী করবেন, তা নিয়েও আশঙ্কায় রয়েছেন পুলকার চালক ও মালিকেরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পুলকার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ দত্ত বলেন, ‘‘সব বিধি মেনে, প্রস্তুতি নিয়ে গাড়ি নামানোর ক্ষেত্রে সদিচ্ছা থাকলেও উপায় নেই। সমস্যার কথা পরিবহণ দফতরকে জানিয়েছি।’’
বৃহত্তর কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা মিলে প্রায় চার হাজার পুলকার রয়েছে। কী ভাবে বিধি মেনে সেগুলির পরিষেবা স্বাভাবিক করা যাবে, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন দফতরের আধিকারিকেরাও।