বিতর্কিত: রক্সি সিনেমা হল। নিজস্ব চিত্র
ঠিক যেন লেক মলের ছবি!
এসএন ব্যানার্জি রোডে কলকাতা পুরসভার লালবাড়ির ঠিক উল্টো দিকেই রক্সি সিনেমা হলের পাঁচতলা বাড়ি। মালিক পুরসভা। সেই সম্পত্তি লিজ দিয়ে পুরসভা পাবে প্রতি বর্গফুটে ৪ টাকা। আর যে সংস্থাকে লিজ দেওয়া হবে, তারা সেই জায়গা ভাড়া দিয়ে প্রতি বর্গফুটে ১০৫ টাকা করে আদায় করতে পারবে। এই হিসেবে শুধু একটি সংস্থার
হাতে থাকা রক্সির প্রায় দশ হাজার বর্গফুট এলাকা লিজ দিয়ে পুরসভায় কোষাগারে ঢুকবে মাসে ৪০ হাজার টাকা। আর লিজগ্রহীতা
ওই সংস্থা ভাড়া দিয়ে আদায় করবে মাসে ১১ লক্ষ টাকা!
পুরসভার মেয়র পরিষদ এই প্রস্তাবে সিলমোহর দিয়েছে! যে সংস্থাকে লিজ দিতে মেয়র পরিষদের এই প্রায় নজিরবিহীন উদ্যোগ, তারা রক্সির ওই দশ হাজার বর্গফুট সম্পত্তি কী ভাবে পেল, তা আইনসম্মত কি না তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। আর যে সংস্থাকে তারা ভাড়া দিতে চায়, সেটা পুরসভারই অধীনস্থ একটি সংস্থা— যারা কলকাতার পরিবেশ উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে।
পুরসভা সূত্রে খবর, বছর কয়েক আগে দক্ষিণের লেক মলও এমনই জলের দরে এক বেসরকারি সংস্থাকে লিজ দেওয়া হয়েছে। দু’টি চুক্তি হয়েছে মোট ৬০ বছরের জন্য। রক্সির ক্ষেত্রেও একই ধাঁচে চুক্তিপত্র তৈরি হয়েছিল। তবে তা আটকে গিয়েছে পুরসভার কয়েক জন অফিসারই প্রশ্ন তোলায়। নিজেদের ক্ষতি করে বিপুল অর্থ কামানোর সুযোগ করে দিতে লেক মল যাঁকে লিজ দেওয়া হয়, সেই ব্যক্তি সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। এ বারও স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, রক্সির লিজগ্রহীতা কে?
লালবাড়ির গুঞ্জন, পুরসভার এক প্রভাবশালীর ‘কাছের মানুষ’ হওয়ার সুবাদে তাঁর ‘ভাগ্য’ খুলতে চলেছে। পুরসভার নথি অনুযায়ী, শুভলাভ ডিলার প্রাইভেট লিমিটেড নামে সংস্থাটির রেজিস্টার্ড ঠিকানা, ১৩৯ডি/৩ মহারানি ইন্দিরাদেবী রোড, পর্ণশ্রী, বেহালা (পুরসভার নথিতে অবশ্য ২২/২ মহারানি ইন্দিরাদেবী রোড লেখা রয়েছে)।
রক্সি বিল্ডিংয়ের সঙ্গে ওই সংস্থার কী সম্পর্ক?
পুরসভার মেয়র পরিষদ বৈঠকের নথি বলছে, শুভলাভ ডিলার রক্সি বিল্ডিংয়ের এক ‘অকুপায়ার’। সেই কারণেই ওই সংস্থার আবেদনে সাড়া দিয়েছে পুর প্রশাসন। কিন্তু সত্যিই কি ওই সংস্থা ‘অকুপায়ার’?
৪এ এবং ৪বি চৌরঙ্গী প্লেস ঠিকানায় দাঁড়িয়ে থাকা রক্সি বিল্ডিং ৯৯ বছরের লিজ-চুক্তিতে ছিল বেঙ্গল প্রপার্টিজ নামে এক সংস্থার দখলে। সেই চুক্তি শেষ হয়েছে ২০০৭-০৮ সালে। তার পরেও দখল ছাড়েনি বেঙ্গল প্রপার্টিজ। পুরসভা তখন তাদের জানায়, ফের ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিতে হলে ৭১ কোটি ৩৪ লক্ষ ১১ হাজার টাকা দিতে হবে। সংস্থাটি তাতে নারাজ হলে সম্পত্তির দখল নিয়ে মামলা করে পুরসভা। গত অগস্টে হাইকোর্ট রায় দেয়, ওই সংস্থা পুরো টাকা দিয়ে পুনরায় লিজ নিতে পারে। আর না দিলে সম্পত্তির দখল নিক পুরসভা। ওই সম্পত্তি যারা দখল করে রেখেছে, তারা সব বেআইনি ‘অকুপায়ার’ এবং তাদের সরিয়ে দিতে হবে।
পুরসভা সূত্রের খবর, শুভলাভ সংস্থাটির জন্মই ২০১১ সালে। বেঙ্গল প্রপার্টিজ নিজের লিজ-চুক্তি শেষের পরে শুভলাভকে ‘সাব-লিজ’ দিয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। এক পুরকর্তা জানান, পুর আইন অনুযায়ী কোনও লিজ-চুক্তি শেষ হয়ে গেলে কাউকে সাব-লিজ দেওয়া যায় না। অথচ বেঙ্গল প্রপার্টিজ সেটাই করেছে। আর সেই বেআইনি দখলদারকে বৈধ ‘অকুপায়ার’ হিসেবে সিলমোহর দিয়েছে মেয়র পরিষদ!
মেয়র পরিষদের বৈঠকের নথিতে আরও প্রকাশ, পুরসভার অধীনস্থ কেআইআইপি সংস্থাকে বর্গফুট পিছু মাসিক ১০৫ টাকায় ওই জায়গা ভাড়া দিতে চায় শুভলাভ। বিনিময়ে ব্যবসা করার জন্য পুরসভাকে দিতে হবে প্রতি বর্গফুটে মাত্র ৪ টাকা। এমন এক প্রস্তাব কী ভাবে গ্রহণ করল মেয়র পরিষদ, তা নিয়েই এখন গুঞ্জন পুরমহলে। এ বিষয়ে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এখন কোনও চুক্তি হচ্ছে না। তা ড্রপ করা হয়েছে।’’