লেক ক্লাবে আর্গোমিটারে অনুশীলন করছেন রোয়ারেরা। নিজস্ব চিত্র
প্রশাসনের নির্দেশ মেনে রেসকিউ বোটের বন্দোবস্ত করতে না-পারার কারণেই কি চালু করা যাচ্ছে না রোয়িং? রবীন্দ্র সরোবরে রোয়িং করতে নেমে দুই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনার দেড় মাস পরেও রোয়িং শুরু না হওয়ায় এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আপাতত আর্গোমিটারেই (জলে না-নেমেই যে যন্ত্রের সাহায্যে রোয়িংয়ের অনুশীলন করা যায়) ভরসা রাখছেন রোয়ারেরা। ফের কবে রোয়িং শুরু হবে, তার উত্তর নেই ক্লাবকর্তাদের কাছেও।
গত ২১ মে রবীন্দ্র সরোবরে রোয়িং অনুশীলনে নেমে কালবৈশাখীর মধ্যে পড়ে তলিয়ে যায় সৌরদীপ চট্টোপাধ্যায় ও পুষ্পেন সাঁধুখা নামে দুই কিশোর। পরে তাদের দু’জনের দেহ মেলে। সেই ঘটনার পরে সরোবরে সব ধরনের রোয়িং অনুশীলন ও প্রতিযোগিতা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে কী কী করণীয়, সে বিষয়ে আলোচনা করতে ক্লাবকর্তা এবং কেএমডিএ কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসে লালবাজার। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে হওয়া সেই বৈঠকে সরোবরের প্রতিটি ক্লাবকে রোয়িংয়ের জন্য একটি খসড়া ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর’ (এসওপি) দেওয়া হয়। সেই এসওপি প্রতিটি ক্লাবে পাঠিয়ে দেওয়া হয় লালবাজারের তরফে। এসওপি মেনে আদৌ রোয়িং অনুশীলন হচ্ছে কি না, তা দেখতে একটি কমিটিও তৈরি করে দিয়েছিল লালবাজার। কিন্তু তার পরে প্রায় এক মাস কেটে গেলেও রোয়িং শুরু হয়নি। অনুশীলন করতে না পেরে সমস্যায় পড়ছেন রোয়ারেরা। শারীরিক সক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গে অনুশীলন বজায় রাখতে এখন আর্গোমিটারই ভরসা তাঁদের।
কিন্তু কেন শুরু করা যাচ্ছে না রোয়িং অনুশীলন? ক্লাবকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, রেসকিউ বোটের জটেই আটকে রয়েছে বিষয়টি। গত কয়েক দিনে একাধিক ব্যাটারিচালিত নৌকা এনে দেখা হয়েছে। কিন্তু আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সেই সব নৌকা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে তাঁরা সন্দিহান। লেক ক্লাবের জয়েন্ট অনারারি সেক্রেটারি দেবব্রত দত্তের কথায়, ‘‘বেশ কয়েকটি ব্যাটারিচালিত নৌকা জলে নামিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু, সব ক’টিরই গতি বেশ কম। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সেগুলি নিয়ে যদি দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছনোই না যায়, তা হলে রেসকিউ বোট রাখার তো অর্থই নেই। এই সমস্যার কথা পুলিশ এবং কেএমডিএ-কে জানিয়ে আমরা পেট্রলচালিত নৌকার অনুমোদন দিতে অনুরোধ করেছি। আশা করি, কয়েক দিনের মধ্যেই সব সমস্যা কেটে যাবে।’’
এ দিকে, অনুশীলন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় প্রতিযোগিতামূলক রোয়িংয়ে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। উপায় না-দেখে প্রশিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত আর্গোমিটারেই অনুশীলন করছেন অনেকে। রোয়িং প্রশিক্ষণের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত সুদীপ নাহার কথায়, ‘‘জলে নেমে অনুশীলনের যে কার্যকারিতা, তা আর্গোমিটারে অনুশীলন করে পাওয়া সম্ভব নয়। ওই যন্ত্র সাধারণত রোয়ারদের পেশি শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। তবে রোয়িংয়ে জলের অনুশীলনটাই সব থেকে জরুরি।’’