থমকে: সেতু জুড়ে এ ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে লরি ও ট্রেলার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
রোগের কারণ জানা সকলেরই। অজানা নয় ওষুধও। কিন্তু কোন চিকিৎসক সেই ওষুধ দেবেন, তা নিয়েই চলছে টানাপড়েন!
‘রোগী’র নাম নিবেদিতা সেতু। সকাল থেকে রাত— প্রতিদিনই এই সেতু জুড়ে লরি আর ট্রেলারের বেআইনি পার্কিংয়ের জেরে তৈরি হয় লম্বা যানজট। যার জেরে মিনিট কুড়ির পথ পেরোতেই লেগে যায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা। সেতুর উপরে ওই বেআইনি পার্কিংয়ের কারণে ভোগান্তি যে হয়, মুখে সে কথা স্বীকার করলেও তার স্থায়ী সমাধানে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ থেকে পুলিশ, প্রশাসন, এমনকী টোল কর্তৃপক্ষ— কারও হেলদোল নেই বলেই অভিযোগ সাধারণ মানুষের।
সমস্যাটা কেমন? সম্প্রতি বিমানবন্দর থেকে ছেলেকে আনতে আটটা নাগাদ গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন বেলুড়ের মদন জানা। তাড়াতাড়ি পৌঁছনোর জন্য তিনি বালি ব্রিজের বদলে ধরেছিলেন নিবেদিতা সেতু। কিন্তু টোল ট্যাক্স দিয়ে কয়েক পা এগোতেই যানজটে ফেঁসে গেল মদনবাবুর গাড়ি। প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে যানজট ঠেলে যত ক্ষণে তিনি সেতু থেকে নেমে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে উঠলেন, তত ক্ষণে তাঁর ছেলে বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সি নিয়ে রওনা দিয়েছেন বাড়ির দিকে।
বেশ কয়েক মাস ধরে প্রতিদিন এমনই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মদনবাবুর মতো অসংখ্য মানুষ। রাস্তায় বেআইনি ভাবে লরি ও ট্রেলারের পার্কিং গজিয়ে ওঠায় তৈরি হচ্ছে তীব্র যানজট। যার ফলে বিশেষত রাতের দিকে কেউই নিবেদিতা সেতু ব্যবহার করতে চাইছেন না। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘টাকা দিয়েই যখন যাব, তখন এত ভোগান্তি হবে কেন?’’ রাতে ওই সেতু দিয়ে যাতায়াত এখন আতঙ্কের।
সেতু জুড়ে বেআইনি পার্কিংয়ের কথা অস্বীকার করছেন না লরি ও ট্রেলারের চালকেরাও। নিবেদিতা সেতুকে ঘিরে রয়েছে হাওড়া জেলা পুলিশ, হাওড়া সিটি পুলিশ, ব্যারাকপুর কমিশনারেট, বিধাননগর কমিশনারেট ও কলকাতা পুলিশ এলাকা। প্রতিটি জায়গায় ‘নো এন্ট্রি’র সময় এক নয়। ফলে টোল প্লাজা পার করে ‘নিরাপদ’ জায়গা হিসেবে সেতুর উপরেই তাঁরা গাড়ি রাখতে বাধ্য হচ্ছেন বলে দাবি চালকদের। সম্প্রতি গিয়ে দেখা গেল, রাজচন্দ্রপুর টোল প্লাজা পার করে প্রায় দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত পরপর তিনটি লাইনে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে মালবাহী লরি ও ট্রেলার। কোনও মতে ফাঁক গলে এগোনোর চেষ্টা করছে ছোট গাড়ি। টোল প্লাজায় ঢোকার মুখে লরির জট থাকায় গাড়ির লাইন পৌঁছেছে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ডানকুনির রাস্তা পর্যন্ত।
ভোগান্তির কথা স্বীকার করে ‘ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অব ইন্ডিয়া’র কলকাতার প্রকল্প অধিকর্তা সুব্রত নাগ বলেন, ‘‘আমি নিজেও ভুক্তভোগী। কী ভাবে সমস্যার সমাধান হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই টোল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য আরও চারটি লেন বাড়ানো এবং বামুনভাঙা জিরো পয়েন্ট থেকে টোল গেট পর্যন্ত ব্যক্তিগত গাড়ির নির্দিষ্ট লেন করতে টোল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।’’
কিন্তু টোল গেট পার করে সেতু জুড়ে লরি রাখার সমস্যা মিটবে কী ভাবে? ‘‘লরি রাখার ফলে সেতুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। হাওড়া সিটি পুলিশ মাঝে সহযোগিতা করেছিল পার্কিং সরাতে। বিষয়টির পাকাপাকি সমাধান করতে রাজ্য পুলিশের ট্র্যাফিকের শীর্ষ কর্তাদের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। সেই চেষ্টা করা হচ্ছে,’’ দাবি সুব্রতবাবুর। অন্য দিকে, হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তার কথায়, ‘‘টোলওয়ে রাস্তার ভিতরে ঢুকে পার্কিং সরানোর অধিকার নেই পুলিশের।’’