দুষ্কৃতী তাণ্ডবের ছবি ধরা পড়েছে সিসি ক্যামেরায়। —নিজস্ব চিত্র।
গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে দেদার বোতল ও ইট ছুড়ছেন লোকজন। রবিবার রাতে এই দৃশ্য দেখা গিয়েছে খাস মধ্য কলকাতায়। বাড়িতে ইট ও বোতল উড়ে এসে পড়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এক বৃদ্ধা। নবীনচাঁদ বড়াল লেনে মত্ত লোকজনের এই তাণ্ডবে ভাঙচুর করা হয়েছে গাড়িও। আক্রান্তদের অভিযোগ, ঘটনার পিছনে রয়েছেন স্থানীয় পুরপ্রতিনিধির মদতপুষ্টেরা। যদিও সোমবার রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হননি। আক্রান্তেরা নিজেদের তৃণমূল বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী বলে দাবি করায় লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রকাশ্যে চলে এসেছে শাসকদল তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
মুচিপাড়া থানা এলাকার নবীনচাঁদ বড়াল লেন পুরসভার ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। ওই গলির বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরপ্রতিনিধি বিশ্বরূপ দে-র অনুগামীরা রবিবার রাতে তাণ্ডব চালান ওই পাড়ায়। ভাঙচুর করা হয় গাড়ি। মারধর করা হয় মহিলাদেরও। বাসিন্দারা জানান, পাড়ায় সরস্বতী পুজোর ভাসান ছিল। এলাকার ছেলেরা ভাসান সেরে পাড়ায় ফিরতেই পুরপ্রতিনিধির অনুগামীরা আক্রমণ করেন। রূপেশ দাস নামে এক যুবকের দাবি, ‘‘আমরা বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী। পুরপ্রতিনিধি আমাদের পাড়ার দখল নিতে চাইছেন। এই ওয়ার্ডের সমস্ত গলি উনি দখল করলেও আমাদেরটা পারেননি। মাঝেমধ্যেই ওঁর লোকজন আমাদের গালিগালাজ করেন। এখানে এসে গোলমালও করেন। রবিবার আমাদের সঙ্গে বচসা হয়। পরে ওঁরা এসে গোলমাল করেন।’’ যদিও বিশ্বরূপ ও নয়না, দু’জনেরই দাবি, কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। গোলমাল করেছে দুষ্কৃতীরা।
বাসিন্দারা জানান, রবিবার রাত ১১টার পরে গোলমাল শুরু হয়। হামলাকারীদের একটি বড় দল মত্ত অবস্থায় নবীনচাঁদ বড়াল লেনে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। মুহুর্মুহু ইট আর বোতল ছোড়া হয় গলির বিভিন্ন বাড়ি লক্ষ্য করে। একটি বাইক ও একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। আচমকা এই তাণ্ডবে পূর্ণিমা কুণ্ডু নামে এক বৃদ্ধা অসুস্থ হয়ে পড়েন। যে গাড়িটি ভাঙচুর করা হয়, সেটির মালকিন পূর্ণিমা দাসের অভিযোগ, ‘‘ভাঙচুর হয়েছে শুনে আমি গাড়ির কাছে ছুটে যাই। ওদের হাতে লোহার রড জাতীয় কিছু ছিল। সেটা দিয়ে আমার মুখে মারে। গোটা ঘটনার পিছনে রয়েছেন পুরপ্রতিনিধির লোকজন।’’ বাসিন্দারা জানান, এক পথচারীও ওই ভিড়ের মধ্যে পড়ে প্রবল মার খেয়েছেন। বোতল ও ইট ছোড়ার একটি ভিডিয়ো স্থানীয়দের ফোনে ঘুরছে। পুরপ্রতিনিধির ঘনিষ্ঠেরা এলাকায় মদ-গাঁজার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন বলেও অভিযোগ।
যদিও অভিযোগ উড়িয়ে ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি বিশ্বরূপের দাবি, তাঁকে কেউ কিছু জানাননি। গোলমালের খবর সোমবার সকালে সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছেন। লোকসভা নির্বাচনের আগে তাঁকে বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে বলে দাবি বিশ্বরূপের। তিনি জানান, প্রেমচাঁদ বড়াল লেন ও নবীনচাঁদ বড়াল লেনে দু’টি যৌনপল্লি রয়েছে। ওই দুই গলির মধ্যে প্রায়ই ঝামেলা হয়। বিশ্বরূপের কথায়, ‘‘প্রেমচাঁদ বড়াল লেন আমার সঙ্গে রয়েছে। তবে সেখানে মদ-গাঁজার ব্যবসা চলছে বহু বছর। আমি দু’বছর মাত্র পুরপ্রতিনিধি হয়েছি। আমারই ওয়ার্ডে আমি গলি দখল করব কেন?’’
মদ-গাঁজার ব্যবসা বন্ধ করতে পারলেন না কেন? বিশ্বরূপের দাবি, ‘‘আমি বন্ধ করার কে? আমার কতটুকু ক্ষমতা? বিধায়ক কেন করতে পারেননি? আমি পুলিশের সঙ্গে কথা বলছি। এ সব বরদাস্ত করা হবে না।’’ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ অস্বীকার করে নয়না বলেন, ‘‘একটা গোলমাল হয়েছে সন্দেহ নেই। তবে পুরপ্রতিনিধির সঙ্গে আমার বিবাদ নেই। প্রশাসনকে বলেছি, যারা গোলমাল করেছে, রং না দেখে তাদের গ্রেফতার করতে।’’