পল্লবী দাস নামে এই শিশুর কনজেনিটাল গ্লকোমার অস্ত্রোপচার হয়েছে আরআইও-এ। নিজস্ব চিত্র
কোলের শিশুটির বাঁ চোখ দিয়ে ক্রমাগত জল ঝরত। এক সময়ে মণির চার পাশে সাদা স্তর পড়তে শুরু করে। তিন মাসের সন্তান আবু সইদের চোখের অবস্থা দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন মুর্শিদাবাদের শামিমা বিবি।
কাকদ্বীপের বাসিন্দা পাঁচ বছরের পল্লবী দাস আলোর দিকে তাকাতে পারত না। চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়াত। মণি ফুলে ঠেলে বেরিয়ে আসছিল বাইরের দিকে।
ঠিক সময়ে অস্ত্রোপচার না-হলে দু’টি শিশুই দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারত। তাদের রক্ষা করেছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি’ বা আরআইও-র চিকিৎসকেরা।
আবু, পল্লবী যে-রোগে আক্রান্ত, চিকিৎসকদের পরিভাষায় তার নাম ‘কনজেনিটাল গ্লকোমা’। আরআইও-র ডিরেক্টর তথা অধ্যাপক-চিকিৎসক অসীম ঘোষ বলেন, ‘‘কনজেনিটাল গ্লকোমা একটি জিনঘটিত রোগ। আমাদের চোখের ভিতরে জল তৈরি হয়। সেই জল রেটিনা, কর্নিয়ার
পুষ্টির কাজ করে। ওই জল যে-পথে বেরোনোর কথা, কনজেনিটাল গ্লকোমায় আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে সেই পথে বাধা পড়ে। তাই চোখের ভিতরে তৈরি হওয়া জল জমে চোখের প্রেসার বাড়িয়ে দেয়।’’ ডিরেক্টর জানান, জল জমে চোখ ফুলে ষাঁড়ের চোখের আকার ধারণ করে বলে একে ‘অক্স সাইট’-ও বলে। পল্লবী, আবুর ক্ষেত্রে সেটাই ঘটেছিল। কৃত্রিম ভাল্ভ বসানোই এর একমাত্র চিকিৎসা। কিন্তু তার খরচ অনেক। আরআইও নিজস্ব উদ্যোগে আবু, পল্লবীর মতো কয়েকটি শিশুর দৃষ্টিরক্ষার সঙ্কল্প নিয়ে ভাল্ভ বসানোর ব্যবস্থা করেছে।
বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কথা বলে কনজেনিটাল গ্লকোমায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য ভাল্ভের ব্যবস্থা করেছেন আরআইও-র সহকারী অধ্যাপক-চিকিৎসক তানিয়া রায়। শিশুদের অস্ত্রোপচার করেছেন তিনিই। কিন্তু এ ধরনের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হলে রাজ্য সরকারের অনুদান আবশ্যক। আরআইও-র ডিরেক্টর জানান, কনজেনিটাল গ্লকোমায় আক্রান্ত শিশুর একটি চোখে ভাল্ভ বসাতে ১৫-২০ হাজার টাকা লাগে। অর্থের অভাবে অনেক বাবা-মা এই রোগ সারানোর জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার করাতে পারেন না। এ রাজ্যে সরকারি স্তরে শুধু আরআইও-ই এই অস্ত্রোপচার করছে। কিন্তু সরকারি সাহায্য ছাড়া কত দিন এই পরিষেবা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন আরআইও-র চিকিৎসকদের একাংশ।
তানিয়াদেবী বলেন, ‘‘বড়দের অপটিক নার্ভ শুকিয়ে যাওয়ায় অন্ধত্ব ডেকে আনে গ্লকোমা। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কনজেনিটাল গ্লকোমা কর্নিয়ার আকার বাড়িয়ে এবং অস্বচ্ছ করে অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যায়। এক বার এই রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত ছড়াতে থাকে। রোগ সারাতে অস্ত্রোপচার ছাড়া কোনও রাস্তা নেই।’’ স্বাভাবিক ভাবেই যে-অস্ত্রোপচারে শিশুদের অন্ধত্ব থেকে রক্ষা করা যায়, তাতে যাতে ছেদ না-পড়ে, সেই চেষ্টা চালাচ্ছে আরআইও। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, আরআইও কী কাজ করছে এবং তার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে চিঠি দিয়েছেন সেখানকার কর্তৃপক্ষ। ‘‘কনজেনিটাল গ্লকোমার চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হলে সরকারি অনুদান প্রয়োজন। এ ধরনের অস্ত্রোপচারে অনেক মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত
পরিবার উপকৃত হবে,’’ বলছেন আরআইও-প্রধান।