অবসরপ্রাপ্তেরা টুর গাইড, পথ দেখাচ্ছে ভিক্টোরিয়া 

একটু থেমে বললেন, ‘‘সত্যি বলতে কী, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালই ইতিহাসকে আমায় নতুন ভাবে দেখতে শিখিয়েছে। ভালবাসতে শিখিয়েছে।’’

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৯ ০২:৩৫
Share:

বিকেলের আলোয় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। ছবি: সুনীতা কোলে।

‘‘ইতিহাস নিয়ে কখনওই খুব একটা উৎসাহ ছিল না। কিন্তু এখন যখন ওদের বোঝাই, বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলো যে ভাবে বিস্মিত হয় সব শুনে, মনে হয় অনেক কিছু পেলাম। ইতিহাসকে ভালবেসে ফেলেছি।’’ কথাগুলো বলছিলেন উৎপল রায়। একটু থেমে বললেন, ‘‘সত্যি বলতে কী, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালই ইতিহাসকে আমায় নতুন ভাবে দেখতে শিখিয়েছে। ভালবাসতে শিখিয়েছে।’’

Advertisement

বছর খানেক আগে যখন ভিক্টোরিয়াল মেমোরিয়াল কর্তৃপক্ষ ‘ভলান্টিয়ার টুর গাইড’-এর কর্মসূচি চালু করেছিলেন, তখন অনেকের মতোই সেখানে আবেদন করেছিলেন ষাটোর্ধ্ব মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার উৎপলবাবু। অবসরের পরে কী ভাবে সময় কাটাবেন, তা ভেবে ওই আবেদন করেন। শেষ পর্যন্ত ঝাড়াই-বাছাইয়ের পরে উৎপলবাবু নির্বাচিতও হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি পুরোদমে ভিক্টোরিয়ার টুর গাইডের কাজ করছেন। বয়স্ক থেকে বাচ্চা, সকলের সামনে তুলে ধরছেন ভিক্টোরিয়ার ঐতিহ্য। তবে বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলতেই বেশি পছন্দ উৎপলবাবুর।

তবে উৎপলবাবু একা নন, বছর খানেক আগে চালু হওয়া ভিক্টোরিয়ার ওই কর্মসূচি বয়স্ক, অবসরপ্রাপ্তদের সামনে নতুন একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। এই মুহূর্তে মোট ১২ জন ‘ভলান্টিয়ার টুর গাইড’ রয়েছেন। ভিক্টোরিয়া সূত্রের খবর, ‘ভলান্টিয়ার টুর গাইড’-এর ক্ষেত্রে ফের দ্বিতীয় দফার আবেদন গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হবে। অবসরপ্রাপ্তেরা যাতে নিজেদের মতো করে শহরের ঐতিহ্য, ইতিহাসের প্রচারে অংশগ্রহণ করতে পারেন, সে কারণেই ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষ এই ব্যবস্থা চালু করেছেন। সামান্য সাম্মানিক দেওয়া হয়। ক্রমশই জনপ্রিয় হচ্ছে এই কর্মসূচি।

Advertisement

শুধু অবসরপ্রাপ্তেরাই নন, শহরের ইতিহাস, সংস্কৃতি নিয়ে সামান্য আগ্রহ রয়েছে, এমন কেউ-ও এখানে আবেদন করতে পারেন। তবে অবসরপ্রাপ্ত এবং গৃহিণীদের সুযোগ বেশি থাকে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কিউরেটর-সেক্রেটারি জয়ন্ত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘বিদেশের মিউজিয়ামে এ রকম সুযোগ থাকলেও এ দেশে তা হাতে গোনা। আমরা শহরবাসীকে সরাসরি শহরের ইতিহাস, সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত করতে চাইছি।’’ টুর গাইডের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কর্তৃপক্ষই দিয়ে দেন। সোমবার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল বন্ধ থাকে। ওই দিনই প্রশিক্ষণ চলে। বাকি সপ্তাহের ছ’দিনই দর্শকদের জন্য টুর গাইডের ব্যবস্থা থাকে। উৎপলবাবুর কথায়, ‘‘আদানপ্রদানের এ রকম সুযোগ তো সচরাচর পাওয়া যায় না। ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দারা কী ভাবে আপনার শহরকে দেখছেন, একেবারে হাতে-কলমে সেটা জানা যায়।’’

তবে এ বার শুধু মিউজিয়ামই নয়, উদ্যানের জন্য একটি বিশেষ টুর চালু করতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ। ৫৭ একর বিস্তৃত জায়গা জুড়ে উদ্যানের নিজস্ব জীব-বৈচিত্র্য, গাছ-গাছালি, ঐতিহাসিক মূর্তি সমস্ত কিছু নিয়ে একটি পৃথক টুরের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ভিক্টোরিয়ার এডুকেশন ইউনিটের এক পদস্থকর্মী বলছিলেন, ‘‘এত বড় বাগানে অনেক জায়গায় এমন কিছু রয়েছে যা আমরাই জানি না! ফলে সেগুলি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। তার পরে এটা নিয়ে পুরোদমে একটা টুর করা হবে।’’ এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন নেচার ক্লাবের সঙ্গে কথা বলা হবে বলে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সূত্রের খবর। জয়ন্তবাবুর কথায়, ‘‘ভিক্টোরিয়ার এই বাগান তো আর বাকি পাঁচটা বাগানের মতো নয়। এর ঐতিহ্যের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। এ বার সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করছি আমরা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement