Bowbazar

Bowbazar: ‘বিপদ যেন ক্রমেই এগিয়ে  আসছে’, আতঙ্ক অন্য গলিতেও

দুর্গা পিতুরি লেনের ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে এ দিন থেকে। সঙ্গে বেড়েছে মেট্রোকর্মীদের আনাগোনাও।

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২২ ০৬:২৩
Share:

প্রস্তুতি: একটি বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত আরও একটি বাড়ি ভাঙা শুরু হওয়ার আগে চলছে মাপজোক। সোমবার, দুর্গা পিতুরি লেনে। ছবি: সুমন বল্লভ।

‘‘১৬ পুরুষের বসতবাড়ি ছেড়ে না এ বার আমাদেরও চলে যেতে হয়!’’— শুধু ভাঙা মহল্লাতেই নয়, বৌবাজারের অলিগলিতে এখন ভাসছে এই আতঙ্ক। ভাঙা মহল্লার ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলির দেওয়ালের ফাটল যত চওড়া হচ্ছে, ততই ঘরছাড়া হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে আশপাশের এলাকায়।

Advertisement

দুর্গা পিতুরি লেন থেকে মেরেকেটে ২৫-৩০ মিটার দূরত্ব। সরু রাস্তাটি গিয়ে মিশেছে অপেক্ষাকৃত বড় হিদারাম ব্যানার্জি লেনে। সেখানে রাস্তার দু’পাশে একের পর এক পুরনো বাড়ির পাশাপাশি গড়ে উঠেছে নতুন বাড়িও। মেট্রো রেলের তরফে ওই রাস্তার বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার কথা বলা না হলেও সেখানেই আতঙ্ক যেন সব থেকে বেশি। বাসিন্দাদের দাবি, ২০১৯ সালে যখন প্রথম ফাটল দেখা দিয়েছিল, সেটা ছিল দুর্গা পিতুরি লেনের একদম শেষ মাথায়। হিদারাম ব্যানার্জি লেন সংলগ্ন দুর্গা পিতুরি লেনের কয়েকটি বাড়িতে সে সময়ে ফাটল দেখা দিলেও তার পরিমাণ ছিল নিতান্তই অল্প। কিন্তু এ বছর ‘বিপদ’ যেন বেশ কিছুটা এগিয়ে এসেছে। বাসিন্দাদের দাবি, গত বার যে সমস্ত বাড়িতে কোনও ক্ষয়ক্ষতিই হয়নি, এ বার নতুন করে সে রকম কিছু বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। আর এই নতুন ফাটলই চিন্তায় রেখেছে হিদারাম ব্যানার্জি লেনের বাসিন্দাদের। ওই রাস্তার উপরে থাকা একটি দোকানের মালিক সুবীর দে বললেন, ‘‘এই গলি দিয়ে গেলেই দেখবেন, কত পুরুষ ধরে আমরা এখানে রয়েছি, তা বাড়ির সামনে খোদাই করা রয়েছে। কিন্তু এখন যা অবস্থা দেখছি, তাতে তল্পিতল্পা গুটিয়ে পৈতৃক বসতবাড়ি ছাড়তে হবে বলে মনে হচ্ছে।’’ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলে চলেন, ‘‘বিপদ যেন ক্রমেই এগিয়ে আসছে। কাল যে আমাদের বাড়িতে কিছু হবে না, এর নিশ্চয়তা কোথায়! এই আতঙ্ক নিয়ে কত দিন থাকতে পারব, জানি না।’’

আতঙ্কের কথা শোনালেন হিদারাম ব্যানার্জি লেনের বাসিন্দা এক বৃদ্ধও। তাঁর কথায়, ‘‘সারা জীবন চাকরি সূত্রে দেশে-বিদেশে ঘুরেছি। শেষ জীবনটা জন্মভিটেতেই কাটাব ভেবেছিলাম। কিন্তু সেই ইচ্ছাও আর নিজের হাতে থাকল না। সব সময়ে মনে হয়, এই বুঝি আমাদেরও সরে যেতে বলল!’’ খানিক দূরে বাড়ির সামনে রাখা গাড়ি পরিষ্কার করছিলেন এক ব্যক্তি। ভয়ে রয়েছেন? প্রশ্ন করতেই বললেন, ‘‘ছোট থেকে এখানেই বড় হয়েছি। আড্ডা, খেলাধুলো, বন্ধুবান্ধব— সবই এখানে। হঠাৎ করে যদি বলে অন্য পাড়ায় গিয়ে থাকতে, যতই ভাড়া মিটিয়ে ক্ষতিপূরণ দিক, আতঙ্ক তো একটা থাকছেই।’’

Advertisement

দুর্গা পিতুরি লেনের ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে এ দিন থেকে। সঙ্গে বেড়েছে মেট্রোকর্মীদের আনাগোনাও। ভাঙা মহল্লার বাড়ি থেকে এ দিনও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বার করে নিতে দেখা গিয়েছে বাসিন্দাদের। কয়েক মিটার দূর থেকে এ সবই দেখলেন হিদারাম ব্যানার্জি লেনের বাসিন্দারা। বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাঙা মহল্লার দিকে তাকিয়ে তাঁদেরই এক জন বলে উঠলেন, ‘‘জানি না কপালে কী আছে, এই ভোগান্তি না আমাদেরও পোহাতে হয়!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement