ওই আবাসনে লালি। নিজস্ব চিত্র
শুধুই পথের কুকুরকে পিটিয়ে মারা নয়। এই শহর জানে পথের কুকুরের অসুস্থতায় রাত জাগতেও। ভিআইপি রোডের কৈখালির একটি আবাসনের বাসিন্দারা তেমনই দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। আবাসনের ভিতরে ঘোরাফেরা করা অসুস্থ রাস্তার কুকুরের জন্য আবাসিকেরা ডাক্তার ডেকে আনলেন। স্যালাইনের ব্যবস্থা করে সারা রাত কুকুরের শুশ্রূষাও করলেন।
ভিআইপি রোডের কৈখালি এলাকার ওই আবাসনে শেষ দশ-বারো বছর ধরে রয়েছে লালি ও কালী নামে দু’টি কুকুর। আবাসিকেরা জানান, রাস্তার ওই দু’টি কুকুর কোনও ভাবে ওই আবাসনে ঢুকে পড়েছিল। তার পর থেকে তারা আর ওই আবাসন ছেড়ে যায়নি। কেউ কুকুর দু’টিকে জোর করে বার করেও দিতে চাননি। কুকুর দু’টি কখনও আবাসন থেকে বেরোয় না। তাদের জন্য বাইরের কুকুরও আবাসনে ঢুকতে ভয় পায়। বাসিন্দারা জানান, লালি আর কালী এখন তাঁদের আবাসনেরই বাসিন্দা।
সেই লালিই কয়েক দিন ধরে অসুস্থ ছিল বলে জানালেন আবাসনের এক নিরাপত্তারক্ষী বিজয়কুমার বসু। তিনি জানান, ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিস্তেজ হয়ে শুয়েছিল লালি। খাওয়া-দাওয়া করছিল না। বিজয়বাবুর কথায়, ‘‘গত শুক্রবার রাতে দেখি লালি আবাসনের ৯ নম্বর ব্লকের কাছে নিস্তেজ হয়ে পড়ে রয়েছে। গায়ে হাত দিয়ে দেখলাম শরীর ঠান্ডা। শ্বাস-প্রশ্বাস খুব মৃদু।’’
বিজয়বাবু আবাসিকদের খবর দিলে সবাই মিলে ঠিক করেন, লালির জন্য চিকিৎসককে খবর দিতে হবে। আবাসনের বাসিন্দা, কুকুরপ্রেমী চৈতালি বেঙ্গানির কথায়, ‘‘আমি এক পশু চিকিৎসককে ফোন করি। উনি জানান, কুকুরটির শরীরের ভিতরেই সমস্যা হচ্ছে। রাতেই স্যালাইন দেওয়া শুরু হয়। অ্যান্টিবায়োটিকও দেওয়া হয়।’’
আবাসিকেরা জানান, শনিবার রাত কাটলেও রবিবার লালি নিস্তেজ হয়েই আবাসনের গ্যারাজে শুয়েছিল। হর্ষ ডালমিয়া নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘খারাপ লাগছিল এই ভেবে যে এত চেষ্টা করেও লালি যদি না বাঁচে। শনিবার ও রবিবার— দু’দিন রাতেই চিকিৎসক এসেছিলেন। ফের লালিকে স্যালাইন এবং অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হল।’’
আবাসিকেরা জানান, লালির পেটের সমস্যা হচ্ছিল বলে জানান চিকিৎসক। তাই তাকে ফিল্টারের পানীয় জল খেতে দেওয়া হয়। আলাদা বিছানা পেতে দেওয়া হয়। লালির অসুস্থতায় চুপচাপ তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী কালীও।
সোমবার অবশ্য আবাসনের লোকজন জানান, লালি কিছুটা সুস্থ হয়েছে। আবাসনের বাসিন্দা ইরা বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এ দিন থেকে লালি ফের আবাসনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ইরা বলেন, ‘‘চিকিৎসক লালিকে শুধু চিকেন সুপ দিতে বলেছেন। তা-ই দিচ্ছি আমরা। আমরাও এখন খানিকটা স্বস্তিতে।’’