একটি স্কুলে ডেঙ্গি নিয়ে প্রচার। ছবি: সুমন বল্লভ
ডেঙ্গির জীবাণুবহনকারী এডিস মশা কত উঁচু পর্যন্ত উড়তে পারে, সে সম্পর্কে সাম্প্রতিক কোনও তথ্য মশা-গবেষকদের হাতে নেই। এডিস মশার ওড়ার ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে তাঁদের পুরনো গবেষণার উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু এডিস মশা দ্রুত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে। ফলে তাদের সম্পর্কে যে কোনও ধোঁয়াশাই ডেঙ্গি প্রতিরোধ অভিযানকে ব্যাহত করতে পারে বলে মত গবেষকদের।
এডিস মশা কত উচ্চতা পর্যন্ত বংশবিস্তার করতে পারে, তা জানতে অতীতে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে একটি গবেষণা করা হয়েছিল। মেডিসিনের পাঁচতলা পর্যন্ত প্রতি তলায় দু’টি করে জলের বালতি রাখা হয়েছিল ‘ওভিট্র্যাপ’ (যেখানে মশা ডিম পাড়তে প্রলুব্ধ হয়) হিসেবে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এমনিতে এডিস ও কিউলেক্স মশা হল জিয়োফিলিক, অর্থাৎ তারা মাটির কাছে থাকতে ভালবাসে। বিশেষ করে এডিস ভূপৃষ্ঠের কাছে খাবার সংগ্রহ, বিশ্রাম ও বংশবিস্তারে স্বচ্ছন্দ। সেখানে অ্যানোফিলিস জিয়োফোবিক, অর্থাৎ, তাদের আবার পছন্দের জায়গা হল ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরিতল।
গবেষকেরা দেখেছিলেন, প্রথম দুই তলায় এডিস মশা সর্বাধিক বংশবিস্তার করেছিল। যেমন প্রথম তলায় এডিস মশার প্রায় ৫৫ শতাংশ লার্ভা পাওয়া গিয়েছিল। দ্বিতীয় তলায় পাওয়া গিয়েছিল ২৫ শতাংশের মতো। একদম পঞ্চম তলার ছাদে সেই সংখ্যা কমতে-কমতে ০.৮ শতাংশ নেমে এসেছিল। অন্য দিকে, বিল্ডিংয়ের উচ্চতা যত বেড়েছে তত বেশি অ্যানোফিলিস মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছিল।
গবেষকেরা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি এলাকাই এডিস মশার পছন্দের চারণভূমি। তাদের যাবতীয় কার্যকলাপ দু’-তিন তল পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে প্রয়োজনে তারা সর্বাধিক ৬০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত যেতে পারে। ওই গবেষণা হয়েছিল স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা পতঙ্গবিদ অমিয়কুমার হাটির নেতৃত্বে। অমিয়বাবু বলছেন, ‘‘নীচের দিকে এডিস মশার লার্ভা বেশি
পাওয়া গিয়েছিল। যত উপরে ওঠা গিয়েছিল, তত সেই সংখ্যা কমেছিল।’’ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত আর এক পতঙ্গবিদ গৌতম চন্দ্র বলেন, ‘‘এডিস মাটির কাছাকাছি থাকতেই পছন্দ করে। উপরের দিকে এর বংশবিস্তারের হার কমে যায়।’’ তা হলে কি পাঁচতলার উপরে বা ৬০ ফুট উচ্চতার বহুতলে যাঁরা থাকেন, তাঁরা নিরাপদ?
গবেষকদের একটি বড় অংশ বলছেন, একদমই নয়। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গিয়েছে, এডিস প্রয়োজনে ৬০ ফুট উচ্চতার উপরেও যাচ্ছে। সেখানে তাদের বংশবিস্তারের হার কম হলেও উপস্থিতি দেখা গিয়েছে। কারণ, চরিত্রগত দিক থেকে এডিস অন্য মশাদের থেকে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক ও সহনশীল। এমনটাই জানাচ্ছেন গবেষকেরা। ফলে যখনই নীচে বংশবিস্তারের স্থলগুলি চিহ্নিত হয়ে যাচ্ছে বা সেগুলি ধ্বংস হচ্ছে, তখনই তারা নিজেদের উচ্চতার পরিধি বাড়িয়ে দিচ্ছে। কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘কেনিয়ার একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এডিস ৭৬ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় উঠে বংশবিস্তার করেছে। কোনও জায়গা থেকে বাধা পেলেই অস্তিত্ব রক্ষার্থে ওরা দ্রুত খাপ খাওয়াতে পারে। সে কারণে নিজেদের পছন্দের জায়গাও পাল্টে ফেলতে পারে। তাই এখন অনেক বহুতলেই এডিসের লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে।’’