কাঠমান্ডুর পথে এনডিআরএফের উদ্ধারকারী কুকুরের দল।—ফাইল চিত্র।
শিক্ষা দিয়েছিল ভুজ। শিখেছিল দিল্লি। শিখেও শেখেনি কলকাতা।
২০০১-এর ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে উদ্ধারকারী দল হাজির হয়েছিল বিধ্বস্ত গুজরাতে। আধুনিক যন্ত্রপাতি তাদের সঙ্গে তো ছিলই, সেই সঙ্গে ছিল একদল বিশ্বস্ত সহচরও। বিশেষ প্রশিক্ষণ আর প্রখর ঘ্রাণশক্তির জোরে যারা পাহাড়প্রমাণ ধ্বংসস্তূপে প্রাণের স্পন্দন খুঁজতে নেমেছিল। ‘তেমন কিছু’ আঁচ করা মাত্রই তারা জানান দিত, আর দ্বিগুণ উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়ত উদ্ধারকারী দল।
ভুজের বছর পাঁচেক পর জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) তৈরির সময়ে সেই পুরনো অভিজ্ঞতাকেই স্মরণ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার।
আর তাই এনডিআরএফ জওয়ানদের সহচর হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল সন্ধানী সারমেয় বাহিনীকে। এনডিআরএফে এখন ১০টি ব্যাটেলিয়ন রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও একটি ব্যাটেলিয়ন রয়েছে। প্রত্যেক ব্যাটেলিয়নে রয়েছে ৩৬টি করে উদ্ধারকারী কুকুর (সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ ডগ)। সব মিলিয়ে মোট ৩৬০টি। যাদের বেশ কয়েক জন ইতিমধ্যেই উদ্ধারকাজ চালাতে পাড়ি দিয়েছে কাঠমান্ডু।
২৫ এপ্রিলের সেই আতঙ্কের কাঁপন লেগেছিল কলকাতাতেও। কাঠমান্ডুর মতো বিপর্যয়ে কলকাতার বাড়িগুলি কতটা নিরাপদ, সেই প্রশ্ন আগেই তুলেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। বাস্তব বলছে, উপায় থাকা সত্ত্বেও উদ্ধারে সাহায্য করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বে কলকাতা পুলিশ। কারণ, তাদের ডগ স্কোয়াডে ‘সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ ডগ’ রাখার নিয়ম আছে। কিন্তু আপাতত তেমন কুকুর নেই।
বিস্ফোরক বা মাদক খুঁজে বের করার কুকুর যদিও পর্যাপ্ত সংখ্যাতেই রয়েছে কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াডে। কিন্তু ধ্বংসস্তূপে আটক মানুষকে খুঁজে বের করার জন্য চাই সম্পূর্ণ আলাদা প্রশিক্ষণ। এনডিআরএফ কর্তারা জানাচ্ছেন, এর জন্য নকল বিপর্যয়ের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। সেখানে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় কুকুরদের। বিস্ফোরক খুঁজতে ব্যবহৃত কুকুরকে যেমন আলাদা আলাদা বিস্ফোরক চেনানো হয়, সে ভাবেই এ ক্ষেত্রে চেনানো হয় মানুষের গন্ধ। গন্ধ শুঁকে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এই কুকুরদের। এনডিআরএফের ডেপুটি কম্যান্ডান্ট রাজেশ নেগি জানাচ্ছেন, অনেক সময়ে আধুনিক যন্ত্রের চেয়েও বেশি কার্যকরী তাঁদের সারমেয় বাহিনী।
এনডিআরএফ সূত্রে খবর, প্রথম দিকে অন্যান্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর ডগ স্কোয়াড থেকেই কিছু কুকুর বেছে নিয়ে তাদের তৈরি করা হয়েছিল। পরে নিজেদের প্রয়োজন মতো কুকুর কিনেছে এনডিআরএফ-ও।
মূলত জার্মান শেফার্ড ও ল্যাব্রাডর প্রজাতির কুকুরই রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীতে। নেগি জানাচ্ছেন, বিপর্যয় মোকাবিলার সময়ে আলাদা আলাদা দল তৈরি করেন তাঁরা। প্রতি ৪৫ সদস্যের সেই দলে থাকে দু’টি করে উদ্ধারকারী কুকুর ও তাদের জন্য তিন জন ‘হ্যান্ডলার’। ৮ থেকে ৯ বছর কাজ করার পরে অবসর নেয় এই কুকুরেরা।
কলকাতা পুলিশের সমস্যাটা আপাতত এইখানেই। ডগ স্কোয়াড সূত্রের বক্তব্য, এই ধরনের প্রশিক্ষণ নেওয়া একটি ডোবারম্যান আগে ছিল স্কোয়াডে। সরকারি নিয়ম মেনে যথা সময়ে সেটি অবসর নেয়। সেই শূন্যস্থান আর ভরাট হয়নি। স্কোয়াডের কোনও কুকুরের ছানা হওয়া বা সরকারি টাকায় নতুন কুকুর কেনার অপেক্ষায় বসে ছিল ডগ স্কোয়াড। এখন তড়িঘড়ি অন্তত দু’টি নতুন কুকুর এনে তাদের ‘সার্চ অ্যান্ড রেসকউ’-এর জন্যই বিশেষ ভাবে তৈরি করার তোড়জোড় হচ্ছে বলে লালবাজার সূত্রে খবর।
এত দিন কেন এই বিষয়ে কেউ উদ্যোগী হয়নি? কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এক কর্তা অবশ্য স্বীকার করে নেন, এত দিন এই ব্যাপারে সমন্বয়ের অভাব ছিল। শীর্ষ অফিসাররাও তেমন গা করেননি। তবে আর ঝুঁকি নিতে চায় না লালবাজার।