প্রতীকী ছবি।
তাঁদের আগে দেখতে হবে, এই দাবিতে এক পড়ুয়া-চিকিৎসককে চড় মারার অভিযোগ উঠল রোগীর পরিজনদের বিরুদ্ধে। ধাক্কাধাক্কি করা হল এক ইন্টার্ন-সহ নিরাপত্তারক্ষীদের। শনিবার রাতের এই ঘটনার প্রতিবাদে কয়েকটি রোগের জরুরি বিভাগে কাজ বন্ধ করে দেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। কয়েক ঘণ্টা পরে সুপারের লিখিত আশ্বাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জুনিয়র চিকিৎসকদের উপরে রোগীর পরিজনদের চড়াও হওয়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে। শহরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই যদি তাঁরা সুরক্ষিত না থাকেন, তা হলে শহরতলির বা গ্রামীণ হাসপাতালে কতটা নিরাপত্তার আশা করতে পারেন, সেই প্রশ্ন তোলেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, শনিবার রাতে স্ত্রীরোগের জরুরি বিভাগে সঙ্কটজনক তিন অন্তঃসত্ত্বার চিকিৎসা চলছিল। সেই সময়ে রক্তপাত হওয়া আর এক অন্তঃসত্ত্বাকে নিয়ে আসেন পরিজনেরা। তাঁকে পরীক্ষা করে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানান, গর্ভস্থ ভ্রূণ এক দিন আগে মারা গিয়েছে। এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘অন্য তিন রোগিণীর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। কারও তড়িঘড়ি সিজ়ার করতে হবে। কাউকে তৎক্ষণাৎ ভর্তি করে চিকিৎসা চালু করতে হবে। তাই ওই রোগিণীকে কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল।’’
অভিযোগ, তাতেই ক্ষেপে ওঠেন সঙ্গে থাকা মহিলা পরিজনেরা। তাঁরা চিৎকার করে দাবি করেন, আগে তাঁদের রোগীর চিকিৎসা করতে হবে। কিছু ক্ষণ পরে ওই রোগীকে চিকিৎসা করলে সমস্যা হবে না, এটা বোঝানোর চেষ্টা করেন কর্তব্যরত জুনিয়র চিকিৎসকেরা। কিন্তু কোনও কথা না শুনে কর্তব্যরত মহিলা পিজিটি-কে ওই রোগীর পরিজনেরা চড় মারেন বলে অভিযোগ। তাতে মহিলা নিরাপত্তারক্ষী ও কর্তব্যরত পুরুষ ইন্টার্নরা ছুটে এলে তাঁদেরও ধাক্কা মারতে শুরু করেন অভিযুক্তেরা। খবর পেয়ে চলে আসে মেডিক্যাল কলেজ আউট পোস্টের পুলিশ। জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি, দুই অভিযুক্ত মহিলাকে আটক করে নিয়ে গেলেও, বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা। খবর পেয়ে আউট পোস্টের সামনে চলে আসেন সমস্ত জরুরি বিভাগের ইন্টার্ন, হাউস স্টাফ, পিজিটি-রা। তাঁরা দাবি করেন, এফআইআর নিয়ে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার দাবিতে সাধারণ, স্ত্রী, নাক-কান-গলা, শিশু রোগের জরুরি বিভাগে কর্মবিরতি শুরু হয়।
ঘটনার খবর পেয়ে রবিবার ভোরে হাসপাতালের সুপার ও ডেপুটি সুপার সেখানে আসেন। তাঁরা জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। পড়ুয়া-চিকিৎসকেরা দাবি করেন, আরও নিরাপত্তারক্ষী ক্যাম্পাসে মোতায়েন করতে হবে। রাতে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। এক মাসের মধ্যে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা না নিলে সাধারণ, স্ত্রী, নাক-কান-গলা, শিশু রোগের জরুরি বিভাগে রাতের শিফটে তাঁরা কাজ করবেন না বলে জানান জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সুপারের নেতৃত্বে দু’জন ডেপুটি সুপার, নার্সিং
সুপার, নিরাপত্তা আধিকারিক, পুলিশ আউট পোস্টের ওসি, ৪ জন পিজিটি, এবং দু’জন করে হাউস স্টাফ ও ইন্টার্নদের নিয়ে একটি নজরদারি কমিটি গঠন করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই কমিটির সদস্যেরা প্রতিটি ওয়ার্ডে ঘুরে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নজর রাখবেন।