ফাইল চিত্র।
প্রচার-বাণীতে কানের পর্দা ফাটলেও সাম্প্রতিক সময়ে কোনও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়েছে কি?— মনে করতে পারছেন না কেউই। পরিবেশবিদদের সাফ বক্তব্য, আসলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা (রেগুলেটরি অথরিটি) হিসেবে যাদের রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার কথা, সেই রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এ ক্ষেত্রে কোনও ভূমিকাই নেই। তারা শুধু বিষয়টি ‘পুলিশের দায়িত্ব’ বা ‘পুলিশকে জানানো হয়েছে’ বলেই এড়িয়ে যায়। ফলে যাবতীয় শব্দবিধি শুধুমাত্র জারি করা নির্দেশিকার মধ্যেই আবদ্ধ থাকে।
অথচ ২০১৯ সালের পুজো মরসুমে শব্দবিধি ভেঙে বাজি ফাটালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর করার ক্ষমতা আধিকারিকদের দিয়েছিল পর্ষদ। পর্ষদ সূত্রের খবর, সে সময়ে ১৫টির মতো এফআইআর দায়ের হয়েছিল। কিন্তু সেই পর্ষদই রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষেত্রে চুপ কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবিদেরা। তাঁদের বক্তব্য, এখনও নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়নি। তার আগেই রাজনৈতিক দলগুলির প্রচারের নিনাদ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। নির্বাচনের দিন ঘোষণা হলে যার মাত্রা আরও চড়বে। অথচ তার পরেও পর্ষদের তরফে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে শোনা যায়নি।
শব্দদূষণ নিয়ে লাগাতার কাজ করে যাওয়া পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’ জানাচ্ছে, আসলে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ‘হাতের পুতুল’ মাত্র। যে কারণে রাজ্যে ক্ষমতাসীন শাসকদলের কোনও সভায় শব্দবিধি লঙ্ঘিত হলে যেমন তারা কোনও পদক্ষেপ করে না, তেমনই আবার ‘বৈষম্যমূলক আচরণ’-এর অভিযোগ উঠতে পারে বলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি শব্দবিধি ভাঙলেও তারা চুপ থাকে। আর ফল ভুগতে হয় আমজনতাকে!
সংগঠনের বক্তব্য, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পর্ষদের কোনও ভূমিকাই নেই। এটি শুধু পুলিশের দায়িত্ব বলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যায়। অথচ ২০১৯ সালের অক্টোবরে কালীপুজো-দীপাবলির আগে শব্দবিধি লঙ্ঘন করলে কারও বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ নম্বর ধারা ও পরিবেশ সুরক্ষা আইনের ১৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী অভিযোগ করার ক্ষমতা পর্ষদ তার আধিকারিকদের দিয়েছিল।
সংগঠনের এক সদস্যের কথায়, ‘‘পরিবেশ সুরক্ষা আইনের ধারা অনুযায়ী যেখানে পর্ষদের হাতে এফআইআর করার ক্ষমতা রয়েছে, সেখানে তারা কি কোনও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে শব্দবিধি লঙ্ঘনের জন্য অভিযোগ দায়ের করেছে? করলে সেটা প্রকাশ্যে জানাক। তা হলে তো পর্ষদের উপরে ভরসা আসবে সাধারণ মানুষের। না-হলে শুধুমাত্র পদ আঁকড়ে বসে থেকে লাভ কী!’’ এ বিষয়ে জানতে পর্ষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য-সচিবকে একাধিকবার ফোন, মেসেজ করা হলেও তাঁরা কোনও উত্তর দেননি।
এক পরিবেশবিদ যার পরিপ্রেক্ষিতে জানাচ্ছেন, পর্ষদ মাঝেমধেই পরিবেশবান্ধব জ্বালানির জন্য গ্যাস ওভেন বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। আসলে এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপিত করতে চায় যে, দূষণ নিয়ন্ত্রণে তারা কতটা সক্রিয়। ‘‘অথচ অপ্রিয় প্রশ্নের মুখোমুখি পর্ষদ-কর্তারা হতে চান না! সে ক্ষেত্রে তো তাঁদের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।’’— বলছেন ওই পরিবেশবিদ।
‘সবুজ মঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক নব দত্তের জানাচ্ছেন, 'আসি-যাই-মাইনে পাই' এই মনোভাব নিয়ে অন্তত পরিবেশরক্ষার কাজ করা যায় না। পরিবেশের স্বার্থে কাজ করতে গেলে অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কিন্তু সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কাতেই কি পর্ষদ-কর্তারা চুপ? না হলে হাতে আইন থাকা সত্ত্বেও তা প্রয়োগে কেন অনীহা পর্ষদের? এমনকি নিয়মভঙ্গ হচ্ছে দেখেও?’’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানাচ্ছেন, আসলে পুলিশ বা পর্ষদ কারওরই পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা নেই। কারণ ভোট যে রাজ্যে উৎসব, সেখানে পদে পদে পরিবেশ-বিধি লঙ্ঘিত হবে, এতে আর আশ্চর্যের কী! পরিবেশ এখানে ঐচ্ছিক বিষয়। তাঁর কথায়, ‘‘শব্দবিধি লঙ্ঘিত যাতে না হয়, তার জন্য পর্ষদ বড়জোর রাজনৈতিক দলগুলির কাছে অনুরোধ করে। কিন্তু কখনও কোনও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে শব্দবিধি লঙ্ঘনের ফলে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে শোনা যায়নি।’’