রেড রোডে বায়ুসেনার কর্পোরাল অভিমন্যু গৌড়ের মৃত্যুতে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের মহড়া বন্ধ হবে না। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বুধবার ভোরে যা ঘটল তার পরে শুধু কলকাতা পুলিশের ভরসাতেই মহড়া চালানো যাবে কি না— তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে সেনাবাহিনী।
বুধবারের ঘটনার পরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে কম্যাণ্ড হাসপাতালে গিয়ে কথা বলেন সেনা অফিসারদের সঙ্গে। তাঁদের সামনেই ঘটনায় অভিযুক্ত গাড়িচালকের বিরুদ্ধে ক়ড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন পুলিশকে। আগামী দিনে কুচকাওয়াজের মহড়ায় নিরাপত্তা বাড়ানোর কথাও বলেন তিনি। এক সেনা অফিসারের কথায়, ‘‘খোদ মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেওয়ার পরে পুলিশের উপর আমাদের বিশ্বাস খানিকটা হলেও ফিরেছে ঠিকই। তবু একেবারে নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না।’’
বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনীর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক এস এস বিরদিও বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশের উপরে ভরসা চলে গিয়েছে এমনটা মনে করা ঠিক নয়। তবে কুচকাওয়াজের মহড়ায় নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশের সঙ্গে আমাদের নিজস্ব বাহিনী রাখা হলেও তারা সমন্বয় রেখে কাজ করবে।’’ বুধবারের ঘটনার পরে মহড়ার সময় নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হবে কি না জানতে চাওয়া হলে এ দিন কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার শুধু বলেন, ‘‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
আরও পড়ুন- রেড রোড কাণ্ড: তৃণমূল নেতা ও তাঁর দুই ছেলের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি
রেড রোড লাগোয়া ক্যাসুরিনা রোডে কুচকাওয়াজের মহড়ার সময়ে পুলিশের দু’টি ব্যারিকেড ভেঙে একটি বিদেশি গাড়ি এসে ধাক্কা মেরে পিষে দিয়েছিল ২১ বছরের অভিমন্যুকে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মারা যান তিনি। কিন্তু যে ভাবে পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে উত্তাল গতিতে ছুটে আসা গাড়িটি তাঁকে ধাক্কা মেরে কোনও প্রতিরোধ ছাড়াই পালিয়ে যায় তাতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। সূত্রের খবর, এই কারণেই পুরোপুরি ভরসা না করে পুলিশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই মহড়ার নিরাপত্তায় নামতে পারে সেনা ও পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দিল্লি থেকে বায়ুসেনার প্রধান অরূপ রাহা বলেন, ‘‘কেউ যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে আপনাকে আঘাত করার চেষ্টা করে তা হলে তাঁকে থামানো মুশকিল ঠিকই। ও ভাবে পুলিশের গার্ডরেল ভেঙে গাড়িটা অত জোরে ঢুকে আসবে, সেটা কেউ ভাবতেও পারেননি। তবে এই ধরণের পরিস্থিতির মোকাবিলায় যে ধরণের ‘হাই-অ্যালার্ট’ থাকা প্রয়োজন, হয়তো তাও ছিল না।’’ এ নিয়ে আলাদা করে তদন্ত শুরু করেছে সেনাবাহিনীও। তাঁরা ইতিমধ্যেই বুধবার ভোরের সিসিটিভি-র ছবি, প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান একত্র করা শুরু করেছে।
এ দিন কাক ভোরে কম্যাণ্ড হাসপাতালে অভিমন্যুকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে মরদেহ সকালের বিমানেই পাঠিয়ে দেওয়া হয় মুম্বই। সেখান থেকে সড়কপথে সুরাত। তাঁকে নিয়ে যেতে বুধবার তাঁর বাবা রঙ্গলাল, কাকা নেবুলাল, ভাই বজরঙ্গী এবং ছোটবেলার শিক্ষক যোগেশ পারিখ কলকাতায় আসেন। বৃহস্পতিবার সকালে সেনাবাহিনীর তরফে যখন তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়, সেখানে উপস্থিত ছিলেন পরিবারের এই সদস্যরাও।