প্রতীকী ছবি।
কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের কর্তাদের সতর্ক করে আগেই মেল করেছিলেন তিনি। অনলাইনে বেআইনি ভাবে অবাধে ওয়্যারলেস সেট বিক্রি হচ্ছে বলে এ বার দিল্লিকে জানালেন কলকাতার হ্যাম রেডিয়ো অপারেটর আর্য ঘোষ। আশঙ্কা, সেই সেট ব্যবহার করে আকাশে থাকা পাইলটের সঙ্গে বিমানবন্দরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল বা এটিসি-র যোগাযোগের মধ্যে ঢুকে যেতে পারেন যে-কেউ। তাতে বাড়তে পারে বিপদ। ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
বেতার ও উপগ্রহ যোগাযোগের কাজ করেন আর্যবাবু। দিল্লিতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর (এয়ার ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্ট) কল্যাণ চৌধুরীকে ইমেল করে ওয়্যারলেস সেটের অবৈধ বিক্রিবাটার কথা জানিয়েছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, অনলাইন শপিং পোর্টালে যে-ধরনের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়্যারলেস সেট বিক্রি হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে ট্রান্সিভারও। ওই যন্ত্রে ট্রান্সমিটার ও রিসিভার দু’টিই আছে। উড়ন্ত বিমানের পাইলটদের প্রতি মুহূর্তে যোগাযোগ রাখতে হয় মাটিতে থাকা এটিসি-র সঙ্গে। মূলত এটিসি-ই পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় তাঁদের। সামান্যতম হিসেবের ভুলে সেখানে বড়সড় দুর্ঘটনার পরিস্থিতি তৈরি হয়।
আর্যবাবুর আশঙ্কা, “কোনও অসৎ ব্যক্তি চাইলে অনলাইন থেকে কেনা ট্রান্সিভার ব্যবহার করে উড়ে যাওয়া বিমানের পাইলট এবং এটিসি অফিসারের কথাবার্তার মধ্যে ঢুকে যেতে পারে। এমনকি চাইলে সে কথাও বলতে পারে। ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে কোনও অসৎ ব্যক্তি ভুল দিক-নির্দেশ বা অন্য উচ্চতায় তুলে দিতে পারে পাইলটকে। সেই নির্দেশ এটিসি-র লোকজন ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে আসছে কি না, পাইলটের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। সেই দিক-নির্দেশ অনুযায়ী পাইলট ভুল করলে তার পরিণতি তো ভয়ানক হতে পারে।”
কল্যাণবাবু বলেন, “আমি মেল পেয়েছি। তবে ভারতের আকাশে এখনও পর্যন্ত এমন কোনও ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। এমন ঘটনার কথা জানতে পারলে সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।” কিন্তু একটি ঘটনাই তো বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে দিতে পারে? সেটাকে ঠেকানোর ব্যবস্থা হচ্ছে কি?
সরাসরি জবাব মিলছে না। তবে বিমান পরিবহণ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এখন প্রতিটি বিমানে এমন সব আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে আকাশে দু’টি বিমান কাছাকাছি চলে এলেই সেখান থেকে জোরালো সঙ্কেত আসতে শুরু করে। আর অন্যের নির্দেশ পেয়ে পাইলট দিক ভুল করলে সঙ্গে সঙ্গে সেটা এটিসি-র মনিটরের সামনে বসে থাকা অফিসারের নজরে আসবে এবং তিনি সতর্ক করে দেবেন।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কর্তাদের মতে, এর আগে যখন বিমানের কাছাকাছি ফানুস উড়তে দেখা গিয়েছে বা ড্রোন চলে এসেছে, তখন পাইলটেরা তা নিয়ে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে। এক কর্তা জানান, কয়েক বছর আগে একটি বিমানবন্দরের এটিসি-র সঙ্গে অন্য বিমানবন্দরের এটিসি-র যোগাযোগের মাঝখানে একই তরঙ্গে বাইরের ব্যক্তির অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল। বিমান পরিবহণের ক্ষেত্রে যে-হেতু এই ধরনের বার্তা গোপন রাখাই নিয়ম, তাই সেটা নিয়ে হইচই হয়। সংশ্লিষ্ট দফতরকে বিষয়টি জানানোর পরে সেটি বন্ধ হয়ে যায়।
আর্যবাবু জানাচ্ছেন, যে-ধরনের রেডিয়ো সেট তাঁরা ব্যবহার করেন, তার জন্য লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়। তাঁদের প্রত্যেকের সম্পর্কে নথি রয়েছে সরকারের কাছে। কিন্তু অনলাইনে কে বা কারা এমন সেট কিনছেন, সেই তথ্য কারও কাছে নেই। তাঁর বক্তব্য, এই ধরনের সেট কেনার জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা উচিত।