মৃত অশোক ঘোষের দোকানঘর। বৃহস্পতিবার, চেতলায়। নিজস্ব চিত্র
আত্মীয়স্বজনদের কয়েক জন সকাল থেকেই ব্যস্ত এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে। কয়েক জন সামলাচ্ছেন একটি পারিবারিক শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের কাজ। এর মধ্যেই চলছে এ দিক-ও দিক ফোন। চলছে বিকেলের শেষকৃত্যের তোড়জোড়ও। খানিকটা যন্ত্রের মতো। কিন্তু ‘মা’ উড়ালপুল থেকে কেন ঝাঁপ দিলেন বৃদ্ধ অশোক ঘোষ, ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও তা স্পষ্ট নয় তাঁর পরিবারের কাছে।
বুধবার রাত ন’টা নাগাদ ওই উড়ালপুলের উপর থেকে সায়েন্স সিটি মোড়ের কাছে পড়ে মৃত্যু হয় অশোকবাবুর। পুলিশের দাবি, পার্ক সার্কাস থেকে গড়িয়ার দিকে যাওয়ার সময়ে সায়েন্স সিটির কাছে উড়ালপুল থেকে ঝাঁপ দেন তিনি। প্রগতি ময়দান থানার পুলিশ রক্তাক্ত অশোকবাবুকে উদ্ধার করে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে অশোকবাবুর চেতলার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তালা বন্ধ। বাড়ি থেকে একশো মিটার দূরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে অশোকবাবুর স্ত্রী ও মেয়ে রয়েছেন। সেখানেই চলছে পারিবারিক একটি শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। এক আত্মীয় বলেন, ‘‘দিন বারো আগে অশোকবাবুর এক নিকট আত্মীয় মারা গিয়েছিলেন। আজই তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান চলছে। এর মধ্যেই আরও একটি অঘটন।’’ কিন্তু কেন হঠাৎ উড়ালপুল থেকে ঝাঁপ দিতে গেলেন তিনি? পরিবারে কি কোনও রকম আর্থিক অনটন বা অন্য সমস্যা ছিল? স্পষ্ট উত্তর নেই পরিজনদের কাছেও। এই প্রসঙ্গে কোনও কথা বলতে রাজি নন মৃতের স্ত্রী এবং কন্যা। তবে মৃতের শ্যালক সলিল বসু বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন। তবে চিকিৎসায় অনেকটা সুস্থও হয়েছিলেন। মাঝেমধ্যে দোকানও খুলছিলেন। আর অর্থনৈতিক সমস্যা থাকার কথা নয়। আমাদের তো কিছু কোনও দিন জানাননি। কেন যে এমন করলেন, এটাই পরিষ্কার হচ্ছে না।’’
তবে অশোকবাবুর দোকানের পাশের এক ব্যবসায়ী বলছেন, ‘‘শেষ বার অশোকবাবু দোকান
খুলেছিলেন কালীপুজোর সময়ে। তার পরে আর দোকানে দেখা যায়নি। মাঝেমধ্যে এসে সকলের সঙ্গে দেখা করে ফের বাড়ি চলে যেতেন।’’ আত্মহত্যার কারণ নিয়ে প্রশ্ন প্রতিবেশীদের মধ্যেও। এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘বুধবার বিকেলেই বাড়ির বাইরে সকলের সঙ্গে বসে কথা বলছিলেন। তখনও অস্বাভাবিক কিছু বুঝিনি। রাতে শুনলাম, উনি উড়ালপুল থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন!’’
এ দিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেহের ময়না-তদন্ত করা হয়। তার পরেই দেহ তুলে দেওয়া হয়েছে পরিবারের হাতে। রাতেই শেষকৃত্য হয় বলে জানিয়েছে পরিবার। পরিবারের তরফে পুলিশে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তবে পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।