মহানগরীর জলছবি।
বৃষ্টির দাপট কমলেও এখনও বাড়ি-ঘরের সামনে জল জমা থেকে মুক্তি পাননি শহরের কয়েকটি এলাকার বাসিন্দা। মূলত দক্ষিণ কলকাতায় বাইপাসের ধারে এবং বেহালার ১২৫, ১২৬ ওয়ার্ড এলাকায় এখনও জমে আছে জল। তুলনায় শুক্রবারের থেকে কম হলেও মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় তাতে যে ব্যাঘাত ঘটছে, তার টের পেয়েছেন ওই সব এলাকার কাউন্সিলরেরা। সেটা বুঝেই মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশে শনিবার ওই সব এলাকায় ঘুরেছেন একাধিক মেয়র পারিষদ। সঙ্গে ছিলেন পুরসভার নিকাশি দফতরের ডিজিও। যদিও দিনের শেষে মেয়র বলেন, ‘‘পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে। বেশিরভাগ জায়গাতে জল নেমে গিয়েছে। দু’একটা পকেটে সকালে জল জমে থাকলেও তা নেমে যাচ্ছে।’’ অর্থাৎ একটানা বৃষ্টির দাপট কমতেই শহরে ‘জল জমা’র হাত থেকে আপাতত স্বস্তি মিলেছে বলে মনে করছেন মেয়র। একই চিত্র দমদম, লেকটাউন, রাজারহাট এবং হাওড়া শহরেও।
গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত শহরের অধিকাংশ রাস্তা এবং গলি জলমগ্ন ছিল। শনিবার জল ছবির সেই চিত্র অনেকটা কম হলেও দক্ষিণ কলকাতায় বাইপাসের ধারে ১০৮, ১০৯ ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি এলাকা এখনও জলমগ্ন। সেখানে মার্টিনপাড়া, নয়াবাদ, ভগৎ সিংহ কলোনি, বাঘাযতীন জে এবং আই ব্লক, হোসেনপুর, পূর্বালোক, কালিকাপুর সহ আরও কয়েকটি এলাকায় জল জমে রয়েছে। বেহালা চড়িয়াল খাল পাড়ের ১২৫ ও ১২৬ ওয়ার্ডের বসুন্ধরা পার্ক, আনন্দনগর সহ একাধিক এলাকা এবং উত্তর কলকাতার পাইকপাড়ায় বসত এলাকায় জমা জলের জন্য অসুবিধায় রয়েছেন এলাকাবাসীরা।
শুক্রবার শহর জুড়ে জল জমার চিত্র কপালে ভাঁজ ফেলে দিয়েছিল পুর প্রশাসনের। উত্তর থেকে দক্ষিণে হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় ঘুম ছুটে যায় স্থানীয় কাউন্সিলরদের। দফায় দফায় বিভিন্ন এলাকার কাউন্সিলরেরা নিকাশি দফতরের কাছে অভিযোগ জানাতে থাকেন নিকাশির পলি না তোলার ফলে এমন অবস্থা হয়েছে। কোথাওবা নিকাশি নালার ব্যবস্থা না থাকার কথাও তোলা হয়েছে। এর সঙ্গে গালি পিট পরিষ্কার না হওয়ায় জল বের হতে পারেনি।
কাউন্সিলরদের কাছ থেকে আসা নানা অভিযোগ নিয়ে শুক্রবার রাতেই মেয়র পারিষদদের নিয়ে বৈঠক করেন শোভনবাবু। তারই ভিত্তিতে এ দিন সকালে দেবাশিস কুমার, অতীন ঘোষ এবং স্বপন সমাদ্দারকে কয়েকটি এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখার কথা বলেন। সেই মত এ দিন সকালেই বাইপাসের ধারে একাধিক ওয়ার্ডে যান দেবাশিসবাবু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ১২ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ। পরিস্থিতির দ্রুত সমাধানের উদ্দেশে নিকাশি দফতরের ডিজিকেও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। এক পুরকর্মী জানান, মেয়র পারিষদেরা বড় গাড়িতে এবং ডিজি ছোট গাড়িতে যাচ্ছিলেন। ভগৎ সিংহ কলোনীর কাছে রাস্তায় জমা জলে বড় গাড়ি পেরিয়ে গেলেও ডিজিকে নিয়ে যাওয়া ছোট গাড়ি বেশি ভেতরে এগোতে সাহস পায়নি। অর্থাৎ জলের জন্য ডিজির গাড়িও সেখানে পৌঁছতে পারেনি।
মেয়র শোভনবাবু অবশ্য জানান, ওই সব এলাকার কোথাও কোথাও ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি জল এখনও জমে রয়েছে। তবে দ্রুত তা নেমে যাচ্ছে। আর বৃষ্টি না হলে শীঘ্রই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
কলকাতা লাগোয়া বাগুইআটি, দমদম, কেষ্টপুর কিংবা উত্তর দমদম এলাকার অনেক জায়গায় বাড়ির একতলায় জল জমে থাকতে দেখা যায়। জমা জলে মাছের সঙ্গে দেখা গিয়েছে ঢোঁড়া সাপও। দক্ষিণ দমদম পুরসভার তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাগজোলা খাল জল টানতে না পারলে, জলমগ্ন দমদম এলাকার ছবি বদলানো মুশকিল। ওই পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,‘‘পাম্প অনেক জায়গাতেই বসানো হয়েছে। কিন্তু খালের জল না নামলে কিছু করার নেই।’’ দমদম পার্ক, জপুর, পূর্ব সিঁথি, বেদিয়া পাড়া, মোতিঝিল, প্রমোদ নগর সহ দমদমের বিস্তীর্ণ এলাকায় এদিনও জল দাঁড়িয়ে ছিল। দমদমের কয়েকটি জলমগ্ন এলাকা এ দিন ঘুরে দেখেন স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
একই হাল বাগুইআটির সাহাপাড়া, প্রতিবেশী পাড়া, পেয়ারাবাগান, বিদ্যাসাগর পল্লী, দাসপাড়ার মতো আবাসিক এলাকায়। এমনকী হলদিরাম, চিনারপার্কের মতো জায়গাতেও জল এখনও নামেনি। আধিকারিকরা জানান, জগৎপুরের কাছে বিবি-১ খালের গেটের কাছে আবর্জনা জমে ছিল। সেগুলি পরিষ্কার করা হয়েছে। সেচ দফতর অবশ্য দাবি করেছে, আর এক দিনের মধ্যেই ওই সব এলাকার জলমগ্ন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
হাওড়ার অধিকাংশ এলাকা থেকে জল নেমে গেলেও বৃষ্টি থামার ৪৮ ঘন্টা পরেও এখনও কোথাও হাঁটুজল, কোথাও গোড়ালি পর্যন্ত ডোবা জলে ভাসছে অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা বলে পরিচিত হাওড়ার ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা। শনিবার রাত পর্যন্ত জল নামেনি মৌনাক পোড়েল লেন, ঘোষ পাড়া লেন, কামিনী স্কুল লেন সহ বেনারস রোডের কিছুটা অংশে। অপরদিকে এ দিন জলে ঢুবে ছিল জায়সবাল হাসপাতাল চত্বর। জল ছিল লিলুয়া থানার ভিতরেও। হাওড়া পুরসভার নিকাশী দফতরের মেয়র পারিষদ শ্যামল মিত্র বলেন, ‘‘মধ্য হাওড়ার কোথাও তেমন ভাবে জল জমে নেই। পঞ্চানন তলা, বেলিলিয়াস রোড, টিকিয়ৈাপাড়ায় জল নেমে গিয়েছে। উত্তর হাওড়ার নিচু এলাকাগুলিতে কিছুটা জল আছে। ওইসব জায়গায় পাম্প চলছে। আশা করা যায় কাল জল নেমে যাবে।’’
এই সংক্রান্ত আরও খবর...
হাসছে আকাশ, ভাসছে রাস্তা